বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমাদের সবার হাতেই স্মার্টফোন এখন সহজলভ্য, আর বেশ কিছু দামী স্মার্টফোনে এখন ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সি অর্থাৎ পানি এবং ধুলোবালি প্রতিরোধযোগ্য ব্যবস্থাও থাকে। চড়া দাম দিয়ে ফ্ল্যাগশিপ টাইটেলখ্যাত কোনো স্মার্টফোন কিনতে গেলে রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের মত ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সি আমাদের চাইই চাই। এছাড়াও, ২০২১ কিংবা ২০২২ সালে এমন কিছু নতুন ফিচার প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে যেখানে স্মার্টফোন পানি এবং ধুলোবালি থেকে স্ট্রংলি প্রটেক্টেড থাকবে।
আপনি যদি ‘ফ্ল্যাগশিপ’ টাইটেলখ্যাত কোনো স্মার্টফোনের স্পেক নিয়ে বিস্তারিত জানতে একটু ঘাটাঘাটি করেন, তাহলে সেখানে ‘আইপি রেটিং’ নামক একটি ফিচার সম্পর্কে পরিচিত হবেন বলাই বাহুল্য। আর বর্তমান যুগোপযোগী সময়ে আপনি হয়তোবা আইপি-67 অথবা আইপি-68 নামক এই দুটি ফিচারই সবচেয়ে বেশি দেখে থাকবেন।
ধরুন, খুব ভালো দাম দিয়ে আপনি কোনো ডিভাইস যেমন: স্মার্টফোন, কিংবা স্মার্ট ওয়াচ অথবা অ্যাকশন ক্যামেরা কিনতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার মাথায় যে ব্যাপারটি ঘুরপাক খাবে তা হলো, এত টাকা খরচ করে কেনা আমার এ ডিভাইসটি কি আদৌ ঝড় অথবা বৃষ্টির মধ্যে সার্ভাইভ করতে পারবে?
তবে আপনার নতুন কেনা ডিভাইসটির স্পেকশিটের মধ্যে কোথাও হয়তো ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সি নিয়ে হাবিজাবি অনেক কিছুই লিখা থাকতে পারে। তবুও, সন্দেহ তো থেকেই যায় তাইনা?
তো চলুন পাঠক, আমরা এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
আইপি রেটিং বলতে আসলে কি বুঝায়?
আইপি রেটিং মূলত চারটি অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে কিছু কিছু ডিভাইসে পাঁচটি অক্ষর দিয়েও আইপির ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সি বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে, প্রথম দুটি অক্ষর I এবং P এর পরিপূর্ণ অর্থ হলো Ingress Protection; অর্থাৎ, ডিভাইসের ভেতরে আদৌ পানি কিংবা ধুলোবালি প্রবেশ করতে পারবে কিনা তা এই অক্ষর দুটি কর্তৃক রেটিংয়ের মাধ্যমে সূচিত হয়।
অন্যদিকে, তৃতীয় অক্ষরটি হলো একটি সংখ্যা যা নির্দেশ করে ডিভাইসটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বা ধুলোবালি থেকে কতটুক সুরক্ষিত। অন্য কথায়, ডিভাইসটি ধুলোবালি থেকে কতটুক প্রোটেক্টেড তা সর্বোচ্চ 6 রেটিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর চতুর্থ অক্ষরটিও একটি সংখ্যা, যা নির্দিষ্টভাবে ডিভাইসের ওয়াটার রেজিস্ট্যান্সি প্রকাশ করে। এর সর্বোচ্চ রেটিং হলো 8।
সুতরাং, আপনি যদি কোনো ডিভাইসের স্পেকশিটে আইপি-68 রেটিং দেখে থাকেন, তবে বুঝতে পারবেন ডিভাইসটি ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সির সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত।
এতো গেলো আইপি-68 এর ব্যাপারে মূল ধারণা।
এবার চলুন, আইপি-67 এর ব্যাপারেও বিস্তারিত জেনে নিই:
আইপি রেটিংয়ের সার্টিফিকেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই সাধারণত ভ্যারি করে থাকে। পূর্বের আইপি-67 রেটিংপ্রাপ্ত ডিভাইসগুলো সম্প্রতি ২০২০ সালে রিলিজ হওয়া Samsung Galaxy S20+ কিংবা OnePlus 8Pro প্রভৃতি ডিভাইসের মতোই ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্ট। তবে এই আইপি-67 রেটিং দ্বারা মূলত এটা বুঝানো হয় যে, ডিভাইসটি পানির নিচে এক মিটার গভীর পর্যন্ত সেফ থাকবে। এর থেকে বেশী গভীরতায় গেলেই ডিভাইসের মধ্যে পানি ঢুকে পড়বে, অর্থাৎ তখন আর ডিভাইসটি ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেনা।
তবে প্রশ্ন একটা তো থেকেই যায়, পানির নিচে সর্বোচ্চ এক মিটার গভীরতায় না হয় ডিভাইসটি সার্ভাইভ করতে পারবে, কিন্তু কতক্ষণ?
সাধারণত আইপি-67 এর সার্টিফিকেশন অনুযায়ী, এই আইপি-67 রেটিংপ্রাপ্ত সকল ডিভাইস পানির নিচে এক মিটার গভীরতায় প্রায় ৩০মিনিট পর্যন্ত সার্ভাইভ করবে। অর্থাৎ আইপি-67 রেটিংপ্রাপ্ত কোনো স্মার্টফোন ব্যাবহার করে আপনি প্রায় ৩০মিনিট পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে সেলফি বা যেকোনো ছবি অনায়াসেই তুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে, আইপি রেটিংটির অন্তর্ভুক্ত চতুর্থ অক্ষরটি হলো 7; যা দিয়ে আসলে পানির নিচের গভীরতাই নির্দেশ করছে। অর্থাৎ, ঐ নির্দিষ্ট এক মিটার গভীরতায় ডিভাইসটি মূলত ৩০মিনিট সার্ভাইভ করতে পারবে।
অন্যদিকে, আইপি-68 রেটিংপ্রাপ্ত ডিভাইস পানির নিচে সর্বোচ্চ ৩মিটার গভীরতায়ও সার্ভাইভ করতে পারে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রিলিজ হওয়া Iphone 12Pro ডিভাইসটি কিন্তু আইপি-68 রেটিংপ্রাপ্ত। তবে এক্ষেত্রে অ্যাপল কোম্পানি দাবি করেছে, এই ডিভাইস আইপি-68 রেটিংপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পানির নিচে প্রায় ৬মিটার গভীরতায়ও সার্ভাইভ করতে পারবে। ব্যাপারটি নিয়ে যদিও আইফোন ইউজাররা এখনও বেশ চিন্তিত। কেননা লাখ টাকার কিডনি ফোন কেউতো আর এভাবে পানির ৬মিটার গভীরতায় সার্ভাইভ করবে কিনা তা চেক করতে চাইবে না। তবুও অনেক ইউটিউব টেক রিভিউয়ার কর্তৃক পানির নিচে ৬মিটার গভীরতায় Iphone 12Pro সার্ভাইভ করতে পারবে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, যার বিস্তারিত ফলাফল আপনারা ইউটিউবে একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই জানতে পারবেন।
তাহলে এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক,
আইপি-65 অথবা আইপি-53 ইত্যাদি রেটিংগুলোর সার্টিফিকেশন দ্বারা আসলে কি বুঝায়?
বিভিন্ন ডিভাইসে সাধারণত আইপি-65 অথবা আইপি-53 এর মত রেটিংও আপনি দেখে থাকবেন। উদাহরণস্বরূপ, Sony Xperia Z5 স্মার্টফোনটি একইসাথে আইপি-68 এবং আইপি-65 রেটিংপ্রাপ্ত ছিল। আইপি-68 এর ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ব্যাখা করে ফেলেছি, তাহলে বাকি থাকলো আইপি-65 রেটিং। এই আইপি-65 সার্টিফিকেশন দ্বারা মূলত বুঝানো হয় ডিভাইসটি পানির ছিটকায় বা স্প্ল্যাশে সহজেই সার্ভাইভ করতে পারবে, অর্থাৎ ডিভাইসটি ওয়াটার স্প্ল্যাশ প্রুফ। একটু ভেঙে বললে, বর্তমানে প্রায় ১০০০০+ বাজেটের উপরে যেসকল স্মার্টফোন রিলিজ হচ্ছে, তার মধ্যে প্রায় সবগুলো ডিভাইসই আইপি-65 ওয়াটার স্প্ল্যাশ প্রুফ হয়ে থাকে।
সাধারণত বৃষ্টির পানি কিংবা নরমাল শাওয়ারের পানিতে আইপি-65 রেটিংপ্রাপ্ত ডিভাইসগুলোর সহজে কিছু হয়না। তবে অধিক প্রেশারে নির্গত হওয়া কোনো নলের বা পাইপের পানিতে ডিভাইসটি ভুলবশত একবার পড়ে গেলে পূর্বের মত সহজেই সার্ভাইভ নাও করতে পারে।
আর, আইপি-53 রেটিং দ্বারা ডিভাইসটি ধুলোবালি থেকে প্রটেক্টেড এবং এমন পরিবেশে সহজে সার্ভাইভ করতে পারবে এই ব্যাপারটি সার্টিফাই করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আইপি-53 রেটিংপ্রাপ্ত কোনো ডিভাইস কিন্তু পানির স্প্ল্যাশ থেকে শুরু করে গুরুতর অবস্থাতে কোনোভাবেই সার্ভাইভ করতে পারবে না।
সর্বশেষ আমরা যে ব্যাপারটি সম্পর্কে জানব, সেটি হলো আইপি-X7। আইপি-X7 সার্টিফিকেশন আসলে আইপির রেগুলার কোনো সার্টিফিকেশন না। এখন পর্যন্ত আমি যতগুলো আইপি রেটিংয়ের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেছি, সেগুলোর সবই ছিল মূলত ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সি নিয়ে। কিন্তু আইপি-X7 বস্তুত নির্দেশ করে ডিভাইসটি শুধুই নন-ডাস্ট রেজিস্ট্যান্ট। তবে এর মানে এটাও না যে ডিভাইসটিতে ধুলোবালি লাগলেই নষ্ট হয়ে যাবে। এটি আসলে ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সির কোনো অফিসিয়াল রেটিং প্রকাশ না করার ক্ষেত্রেই ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের তৈরি ওয়াচ সিরিজ-1 ছিল আইপি-X7 রেজিস্ট্যান্ট। অর্থাৎ ঘড়িটি ডাস্ট রেজিস্ট্যান্ট না, তবে ধুলোবালির মত পরিবেশে সার্ভাইভ করতে পারবে, এছাড়াও X এর পর 7 সংখ্যাটি যেহেতু পানিতে সার্ভাইভ করার ব্যাপারটিকেই নির্দেশ করে; তাই এই ঘড়িটিকেও অন্যান্য আইপি-67 রেটিংপ্রাপ্ত ডিভাইসগুলোর মতোই পানির এক মিটার গভীরে প্রায় ৩০মিনিট যাবৎ ডুবিয়ে রাখা যাবে।
তথ্যসূত্রঃ Pocketlint