পরিচিতি:
১৭৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি স্কটল্যান্ডে, জেমস ওয়াট জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও রসায়নবিদ ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জাহাজ নির্মাতা। তাই ছোটবেলা থেকে জেমসেরও আগ্রহ ছিল যন্ত্রের ওপর। ওয়াট স্কুলে নিয়মিত ছিলেন না। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তাঁর মা, এগনেস মুইরহেডের কাছেই।
পরে গ্রিনাক গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু ল্যাটিন ও গ্রিক এ তার কোনও আগ্রহ ছিল না। তবুও, দক্ষ হয়ে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিত বিষয়ে। ওয়াট প্রথমে গাণিতিক যন্ত্রের নির্মাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন। কিন্তু বাষ্প ইঞ্জিন প্রযুক্তির উন্নতির জন্য খ্যাতিমান তিনি। জেমস ওয়াটের কর্মের প্রতি সম্মান রেখে ক্ষমতার এসআই এককের নাম রাখা হয়েছে ‘ওয়াট’।
গবেষণা:
বিজ্ঞানী রবার্ট ডিকের সঙ্গে, ১৭৫৪ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নির্মাতারূপে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ম্যাথমেটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট মেকার হিসেবে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিজ্ঞানী টমাস নিউকমেন উদ্ভাবিত বাষ্পীয় ইঞ্জিন মেরামত করার দায়িত্ব পান।
এর কিছুদিনের মধ্যেই বাষ্পীয় শক্তিচালিত ইঞ্জিন নিয়ে তার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তখন তাঁর বাষ্পীয় প্রকৌশলের ওপর আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। তিনি উপলব্ধি করেন যে সমকালীন ইঞ্জিন ডিজাইন বারবার শীতল এবং সিলিন্ডার উত্তপ্ত দ্বারা শক্তির একটি বিরাট অংশ নষ্ট করছে। ওয়াট একটি নকশা বর্ধিতকরণ চালু করেন যা শক্তির এই অপচয় এড়ানো এবং বাষ্প ইঞ্জিনের খরচ কার্যকারিতা উন্নত করে।
নিউকমেনের বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে সংস্কার করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করেন তিনি। বাষ্পীয় ইঞ্জিন ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম সমান্তরাল গতি ও জন সাউদার্নের সঙ্গে ইন্ডিকেটর ডায়াগ্রাম। শুধু বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার নয় ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে একটি নতু ঢালাই কারখনাও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন হচ্ছে আবর্তনশীল ইঞ্জিন ও স্টিম ইন্ডিকেটর।
বাষ্পীয় ইঞ্জিন :
বাষ্পচালিত পাম্পিং ইঞ্জিনের একধরনের গাড়ি যা আবিষ্কার করেছিলেন টমাস নিউকোমেন নামের এক কর্মকার। ব্রিটেনের কয়লাখনির মালিকার কয়লা নেওয়ার জন্য এই গাড়ি ব্যবহার করতেন। এই গাড়িতে ছিলো একটি পৃথক বয়লার এবং ইঞ্জিন। এটা চালাতে প্রচুর কয়লার দরকার হতো। তাই একে কয়লার খনি ছাড়া আর কোথাও ব্যাবহার করা যেত না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যন্ত্রপাতি মধ্যে নিউকোমেন মডেলের একটি গাড়িও ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সেটা পড়ে ছিল অকেজো অবস্থায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ জেমস ওয়াটকে আদেশ দিলেন গাড়িটা মেরামত করে দেওয়ার জন্য। জেমস ওয়াট মেরামত করতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, একে চালানোর জন্য প্রচুর কয়লা পোড়াতে হয়।
Related Article:গণিতের এক বিস্ময়কর জাদুকর শ্রীনিবাস রামানুজন
তিনি চিন্তা করলেন যে, যদি বাষ্পশক্তির সঠিক ব্যবহার করা যায়, তা হলে কয়লার অপচয় রোধ করা যাবে। যদি এমনটা করা যায় যে, নল দিয়ে বাষ্প চলবে এবং তার সাথে একটি শূন্য আধার যুক্ত করা গেলে নলটিকে ঠান্ডা করা ছাড়াই বাষ্প সেই শূন্য আধারে গিয়ে ঘনীভূত হবে। এর জন্য দরকার পৃথক একটি বাষ্পসংকোচক যন্ত্র।
তিনি ডা.জন রোয়েবাক, যিনি ছিলেন ক্যারন আয়রন ওয়ার্কস নামের একটি কারখানার মালিক তার সাথে চুক্তি করলেন, ইঞ্জিন আবিষ্কারের জন্য যে টাকার দরকার হবে, তিনি তা জোগান দেবেন। এর বিনিময়ে ওয়াট তাঁকে দেবেন দুই তৃতীয়াংশ শেয়ার । প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান পেয়ে কাজে লেগে গেলেন জেমস ওয়াট। অবশেষে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে আবিষ্কার করলেন বাষ্পীয় ইঞ্জিন।
কিন্তু ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে কারখানার মালিক এবং জেমস ওয়াটের পার্টনার ডা.রোয়েবার পড়লেন চরম অর্থসংকটে। শেষে তাঁদের অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, সমস্ত সম্পত্তি নিলামে উঠল। ওয়াট দেউলে হয়ে গেলেন। তাঁর কাখনার অন্য সব সম্পত্তির সথে তাঁর আবিষ্কৃত বাস্পিয় ইঞ্জিনও নিলামে ডাকা হলো।
কিন্তু এই অদ্ভুত ইঞ্জিন কেনার মতো কোন লোকই পওয়া গেল না। ফলে ওয়াটা-এর ইঞ্জিল ওয়াটের কাছেই থেকে যায়। ব্যাবসায় নামার পাশাপাশি তাঁর আবিষ্কারকে কীভাবে সফল করে তুলবেন,ওয়াট ভাবতে থাকেন সে কথাও। তিনি আবার নতুন করে সন্ধান করেতে থাকেন অর্থ জোগানদারের।
বার্মিংহামে এসে তিনি ম্যাথু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ– এর স্বত্বাধিকারী ম্যাথু বোলটনের সাথে দেখা করেন বোালটনও ছিলেন ঝানু ব্যাবসায়ী। তিনি জেমস ওয়াটার প্রস্তাবে রাজি হলেন।আগের মতোই দুই-তৃতীয়াংশ মুনাফার ভিত্তিতে চুক্তি হলো দু জনের মোধ্যে। স্থাপিত হলো
বোল্টন বোলট অ্যান্ড ওয়াট ( Boulton & watt )। জেমস ভাবতে থাকেন, ক্রেতাদের বোঝাতে হবে যে, তাঁর অনেকগুলো ঘোড়ার সাহায়্যে যে গাড়ি চালনা তার সমান শক্তি আছে এই ইঞ্জিনের।তাঁই তিনি ইঞ্জিনের শক্তিকে অশ্বশক্তিতে মাপে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি কর্নিশ খনি মালিকদের কাছ থেকে এসেছিল,
তবে কাগজ, ময়দা, তুলা এবং লোহা কলগুলির পাশাপাশি ডিস্টিলারি, খাল এবং ওয়াটার ওয়ার্কগুলিতে প্রসারিত হয়েছিল।তাঁর তৈরি বাষ্পী ইঞ্জিনের গাড়ি বাজারে ছাড়তেই লুফে নিতে শুরু করলো সবাই। প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার আবিষ্কৃত ইঞ্জিন।
আরো পড়ুনঃ
স্কটিশ প্রকৌশলী, উদ্ভাবক জেমস ওয়াট অমর হয়ে আছেন বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবনের কারণে। ১৭৮৪ সালে তিনি ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। যন্ত্র প্রকৌশল প্রযুক্তিতে তিনি ছয়টি স্বত্বাধিকার পেয়েছেন। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক শক্তি পরিমাপের একক – ওয়াট – তার সম্মানে নামকরণ করা হয়। ১৮১৯ সালে ১৯শে আগস্ট তিনি মারা যান।