পদার্থবিজ্ঞান পরিচিতিঃ
বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখা হলো পদার্থবিজ্ঞান। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীন শাখা, কেননা অন্য যেকোন বিষয় ভাবার আগেই মানুষ ফিজিক্সের অন্যতম শাখা জ্যাতির্বিদ্যা চর্চা শুরু করে। আবার পদার্থবিজ্ঞান গনিতের উপর নির্ভরশীল।গনিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান অন্ধ।
পদার্থবিজ্ঞানের সংগাঃ
বিজ্ঞানের যে শাখা পদার্থ আর শক্তি এবং এ দুই-এর মাঝে যে অন্তঃক্রিয়া তাকে বোঝার চেষ্টা করে,তাই হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান। ( মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান বাই এনসিটিবি)
পদার্থবিজ্ঞানের পরিসরঃ
পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর আসলেই ব্যাপক। এটি যেমন সূর্যের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুন বড় বিশাল আকৃতির সুপার নক্ষত্রের সবকিছু ব্যাখ্যা করে তেমনি স্ট্রিং এর ঘূর্ণন ব্যাখ্যা করে থাকে। পদার্থবিজ্ঞান শুধু আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান পদার্থ নয় পদার্থের ভিতরের অণু, পরমাণু, সাব- এটমিক পার্টিকেল এমনকি শক্তিও ব্যাখ্যা করে। আলোর প্রকৃ্তি যেমন এটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় তেমনি মোবাইলের কার্যপদ্ধতির ব্যাখ্যাও পদার্থবিজ্ঞান করে কিংবা আবহাওয়ার পুর্বাভাসও পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করেই দেওয়া হয়। এটি ব্যবহার করে মানুষ চাঁদে গিয়েছে আবার মরনাস্ত্র, পারমানবিক বোমাও তৈরি করেছেো। একদিকে এটি জীবনকে করেছে সহজ, জ্ঞানপিপাসুকে দিয়েছে অনেক ‘কেন?’ এর উত্তর আবার পৃ্থিবীকে ফেলেছে অস্তিত্বের সংকটে।
পদার্থবিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখাঃ
পদার্থবিজ্ঞান একটি ব্যাপক বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই এটি বহু শাখা প্রশাখায় বিভক্ত থাকার কথা।তবে পদার্থবিজ্ঞান প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। যথাঃ ১)ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞান ২)আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।
(১)ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞানঃ ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞান বলতে মূলত ১৯০০ সালের আগে ডেভলপড ফিজিক্সকে বোঝায়। ক্লাসিকাল ফিজিক্স অনেক সম্পূর্ণ, প্রমানিত এবং ব্যবহারযোগ্য ফিজিক্স। নিচে ক্লাসিকাল ফিজিক্সের কয়েকটি অংশ বর্ণনা করা হলোঃ
গতি ও মহাকর্ষ তত্ত্বঃ নিউটনের সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত এই অংশে কোনো বস্তু কেন গতিশীল হয় বা স্থির থাকে, কেন একটি বস্তু মাটিতে পরে, কেন পৃ্থিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, আমরা কেন মাটিতে হাটতে পারি এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ক্যালকুলাসঃবিজ্ঞানী নিউটন গতি ও মহাকর্ষ তত্বের গানিতিক অংশ ব্যাখ্যা করতে এটি আবিষ্কার করেন। অনেক সমৃদ্ধ এই গণিত আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানেও অনেক কার্যকরী ।
অপটিক্সঃ আলো যখন প্রিজম,লেন্স বা কাঁচের মধ্য দিয়ে যায় তখন তার ফলাফল কি হয়? আলোর শোষন ,প্রতিফলন বা প্রতিসরন কি? এসব প্রশ্নের উত্তর অপটিকসে পাওয়া যায়। আবার টেলিস্কোপ ও অনুবীক্ষণ যন্ত্র অপটিকস ব্যবহার করেই আবিষ্কৃত হয়েছে।
অ্যাস্ট্রোনমিঃ মহাকাশ নিয়ে গবেষনাই অ্যাাস্ট্রোনমি। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর অ্যাস্ট্রোনমিতে বিশাল বিবর্তন শুরু হয়। মানুষ মহাকাশ সম্পর্কে জানতে শুরু করে। এখন এস্ট্রোনমিতে মানুষ অনেক উন্নত এবং দিন দিন আরো হচ্ছে। এটি এস্ট্রোফিজিক্স ও কসমোলজি এই দুই অংশে বিভক্ত।
তরঙ্গঃ সকল ধরনের তরঙ্গ এই অংশে ব্যাখা করা হয়।যেমনঃআলো, শব্দ, এক্স-রে, রেডিও ওয়েভ, আল্ট্রা ভায়লেট রে ইত্যাদি।
ইলেকট্রোম্যাগনেটিজমঃ চুম্বক ও বিদ্যুৎ নিয়ে আলোচনা করা হয় এখানে। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল এই তত্বের প্রতিষ্ঠাতা।
থার্মোডায়নামিক্সঃ তাপের পরিবাহিতা এটির মূখ্য বিষয়। এছাড়া বস্তু কিভাবে কঠিন, তরল, বায়বীয় বা প্লাজমা হয় তা থার্মোডায়নামিক্স ব্যাখ্যা করে।
এই ব্লগ পড়তে ভুলবেন না! |
(২)আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান: এমন বহু বিষয় আছে যার উত্তর ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞানে পাওয়া সম্ভব নয় ,যেমনঃ সময় কি কিংবা কিভাবে কাজ করে? আলো কিংবা ইলেকট্রন কণা থেকে তরঙ্গ আবার তরঙ্গ থেকে কণা হয় কিভাবে? আর এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতেই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্ম। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান মুলত ১৯০০ সালের পর বিকাশিত হয়েছে। মোটা দাগে এটি দুই ভাগে বিভক্ত
যথাঃক)রিলেটিভিটি
খ)কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
(ক)রিলেটিভিটিঃরিলেটিভিটির প্রবক্তা সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।রিলেটিভিটি অনুযায়ী জোরে ছুটে চলা বস্তুর আয়তন কম, গরম জিনিসের ভর তার ঠান্ডা অবস্থার চেয়ে বেশি, গতিশীল বস্তুর সময় ধীর। রিলেটিভিটি ব্যবহার করেই সবচেয়ে চমকপ্রদ সূত্র E = mc2 আবিষ্কৃত হয়। রিলেটিভিটির দুটি অংশ।
1.জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটিঃ আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন। এটি মূলত স্থান কালের সম্পর্ক নিয়ে। এই তত্ত্বানুযায়ী কোনো ঘটনা যখন একাধিক পর্যবেক্ষক দেখে এবং তাদের মধ্যে যদি আপেক্ষিক বেগ থাকে তখন তারা ওই একই ঘটনার বিভিন্ন বিষয়ে অমিল খুঁজে পাবে।
2.স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটিঃ এই অংশে রেফারেন্স ফ্রেম, টাইম ডাইলেশন, আলোর গতি প্রভৃতি ব্যাখ্যা করা হয়। ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন এটি প্রকাশ করেন।
(খ)কোয়ান্টাম মেকানিক্স : এটি ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান অর্থাৎ ছোট বস্তু বা কণাদের পদার্থবিজ্ঞান। ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞানে আলোকে তরঙ্গ হিসাবে ধরা হলেও ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক বলেন আলো কণা হিসেবেও থাকতে পারে। যার নাম ‘ফোটন’। মূলত এখান থেকেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর যাত্রা শুরু। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলাফল ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ এর বদলে ‘হতেও পারে’ হয়। অর্থাৎ প্রোবালিটি বা সম্ভাবনা এখানে খুব বেশি ব্যবহার হয়। তরঙ্গ থেকে কণা বা কণা থেকে তরঙ্গ (ইলেকট্রন ,ফোটন ইত্যাদি),কোয়ান্টাম ফোম, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট, টানেলিং ইত্যাদি বিষয় এখানে আলোচনা করা হয়।
*বি:দ্রঃ লেখাটি শুধুমাত্র যাদের পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে একেবারেই জানাশোনা নেই তাদের সাধারণ ধারনার জন্য। এখানে কোনো বিষয়েরই পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি কিংবা গভীর থেকেও ব্যাখ্যা করা হয়নি,শুধুমাত্র ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।আর হ্যাঁ, ফিজিক্সের পরিধি আরো অনেনেনেনেনেনেক অনেক বিশাল।