কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট কিন্তু একটি মজার বিষয়। কোয়ান্টাম নাম শুনলেই কিন্তু অনেকের মাঝে ভীতি কাজ করে। কিন্তু ভালো করে বুঝতে পারলে এটি কিন্তু অনেক সোজা বিষয় হিসেবে আমাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে। সে যাই হোক, আপনারা এসেছেন কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট সম্পর্কে জানতে। সেটি নিয়েই না হয় আজ কথা বলি। এই বিষয় সম্পর্কে জানার আগে চলুন কিছু জিনিস সম্পর্কে জেনে আসি।
আমাদের পৃথিবীতে একটি বলকে যদি আমরা উপরের যদি আমরা উপরের দিকে ছুড়ে মারি (অবশ্যই মুক্তি বেগে না) তাহলে কি ঘটবে? যেহেতু আমরা জানি একটি বল কে উপরে ছুড়ে ছুড়ে উপরে ছুড়ে ছুড়ে মারলে সেটি অবশ্যই নিচে আসবে আসবে অথবা তাকে নিদিষ্ট কোণে ছড়ে মারলে সেটি অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করবে। কিন্তু মাইক্রো স্কেলে জিনিসগুলো কিভাবে ঘটে?
আচ্ছা, একটি ইলেকট্রনের কথা চিন্তা করা যাক যাক যাক যেটি একটি হাইড্রোজেন পরমাণুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আসলে এটি কেন্দ্র করে ঘোরে না বরং এমন একটি একটি অবস্থা সৃষ্টি করে যে এটি একই সাথে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে। যখনই আমরা ইলেকট্রনটিকে পর্যবেক্ষণ করবো তখনই এর অবস্থান জানতে পারবো।এবার আসা যাক স্রোডিঞ্জারের বিড়াল থিওরিতে।
ধরুন একটি বাক্সের মধ্যে আপনি একটি বিড়ালকে রাখলেন এবং তারমধ্যে একটি বোমা রাখলেন যার ফাটার চান্স 50%। এরপর বাক্সের মুখ বন্ধ করে দিলেন। এখন দুইটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয় বিড়ালটি মারা যাবে নয়তো বেঁচে থাকবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বাক্সটি খুলছি খুলছি ততক্ষণ পর্যন্ত জানার কোনো সুযোগ নেই সুযোগ নেই বিড়ালটি জীবিত না মৃত। অর্থাৎ বিড়ালটি সুপার পজিশনে আছে।
এইতো গেল স্রোডিঞ্জারের বিড়াল থিওরি। এবার আসা যাক কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেণ্টে। এবার একটি বাক্সের বদলে বদলে দুইটি বাক্স নিয়ে নিয়ে এলেন। সেই দুইটি বাক্সেই একটি করে বিড়াল রাখলেন এবং আগের মতই বোম রাখলেন যাদের ফাটার চান্স ৫০%। এখন চারটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয় দুইটি বিড়ালই মারা যাবে অথবা দুইটি বিড়ালি বেঁচে থাকবে অথবা একটি বিড়াল বেঁচে থাকবে অন্যটি মারা যাবে এবং vice-versa।
এবার কোয়ান্টাম লেভেলে চিন্তা করা যাক। ধরা যাক প্রথম দুইটি ঘটনা ঘটছে না। তাহলে দুইটি ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো একটি বিড়াল মারা যাবে অন্যটি বেঁচে থাকবে। একে এন্টেঙ্গল্ড অবস্থা বলে। এবার দুইটি বিড়ালকে মহাবিশ্বের দুই প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হল তাহলে একটি বিড়াল যদি মারা যায় তাহলে অপর বিড়ালটির কি ঘটবে? বিড়ালটি আসলে বেঁচে থাকবে।
কিন্তু বোমটির পক্ষে কিভাবে জানা সম্ভব যে অন্য বোমটি ফেটেছে? এখানেই আসে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট। এটা কিন্তু আসলেই প্রমাণিত। আবার ভেবে নিয়েন না যে কোনো সাইন্স ফিকশন মুভির গল্প শোনাচ্ছি। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
মনে কর, তুমি ও তোমার বন্ধুর কাছে একটি বাক্স আছে, যাতে দুটো হাতমোজা আছে। হাত মোজার একটি বৈশিষ্ট্য আছে, এক হাতের হাতমোজা অন্য হাতে পড়া যায় না। একটা হয় ডান হাতের ও অন্যটা হয় বাম হাতের। মনে কর, তুমি ও তোমার বন্ধু দৈবচয়ন পদ্ধতিতে চোখ বন্ধ করে দুটি হাত মোজা নিলে ও একটি বিমানে উঠে তুমি ব্রিটেনে ও তোমার বন্ধু কাতারে চলে আসলো। উল্লেখ, তোমরা কেউই তোমাদের হাতমোজা খুলে দেখনি।
এখন তুমি যদি ব্রিটেনে তোমার হাতমোজা বের কর ও দেখ যে সেটা বাম হাতের হাতমোজা, ওমনি তুমি জেনে যাবে যে তোমার বন্ধুর হাতে যে মোজাটা রয়েছে সেটা হচ্ছে ডান হাতের মোজা। সে পকেট থেকে বের করার আগেই তুমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারবে তার মোজার তথ্য।
এখানে আমরা বলতে পারি যে হাতমোজা দুইটি এন্টেঙ্গল্ড হয়েছিল। তাই একটা সম্পর্কে জানা মাত্রই অপরটি সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে।
দুইটি ইলেকট্রনের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করা হয়েছে। ধরা যাক দুইটি ইলেকট্রন আছে যাদের ঘূর্ণন সংখ্যা একত্রে শূন্য। তাহলে অবশ্যই একটি ইলেকট্রন যদি ডান দিকে ঘোরে, অপরটি অবশ্যই বাম দিকে ঘুরবে। এভাবে এন্টেঙ্গল্ড অবস্থায়্য যতদূরেই এদেরকে নিয়ে যাওয়া হোক একটি ডানদিকে ঘুরলে অবশ্যই অপরটি বাম দিকে ঘুরবে। তাহলে কোন ভাবে যদি আপনি জানতে পারেন একটি ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে সেটি কী অবস্থায় আছে তাহলে সাথে সাথে আপনি জেনে যাবেন অপর ইলেকট্রনটি ডানে না বামে ঘুরছে। এখানেই কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট এর মজা।
You Can Also Read These- 1.“সূর্য লকডাউনে” শুনে সূর্য নিজেই হতাশ,ভয়ের কিচ্ছু নেই-জানিয়েছেন তিনি2.পাখিরা বৈদ্যুতিক তারের উপর বসলে শক খায় না কেন? |
তাত্ত্বিকভাবে এটি আলোর চেয়েও দ্রুতগতির। বিষয়টা মজার ছিল না? কোয়ান্টাম কম্পিউটারও কিন্তু সুপার পজিশন নীতি মেনে কাজ করতে পারে। যেখানে একই সাথে ০ এবং ১ দুইটি অবস্থাই বিদ্যমান।
কি বিষয়টা সহজ ভাবে বুঝেছেন তো? না বুঝলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ।