গত ব্লগে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সাধারণ ধারণা দিয়েছিলাম। এই ব্লগে একটু ব্যাখ্যা এবং এর কিছু দিক সম্পর্কে একটু আলোচনা থাকতে যাচ্ছে।
গত ব্লগটি না পড়ে থাকলে এখনি পড়ে আসুন:
ক্রিপ্টোকারেন্সি: বিকল্প সার্বজনীন বিনিময় মাধ্যম (প্রথম পর্ব)
২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে এটি একটি টপ ট্রেন্ডিং মার্কেটে পরিণত হয়েছে। আর প্রতি দিনই মার্কেটে নতুন নতুন ফিচার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রবেশ করছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে নতুন কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করার সাথে সাথে মার্কেটে তাদের ব্যক্তিগত কারেন্সি (কয়েন) রিলিজ করছে। এসকল কয়েন দিয়ে শুধু মাত্র তাদের সাথেই লেনদেন করা যায়।
ক্রিপ্টকারেন্সির ইতিহাস:
১৯৮৩ সালে আমেরিকান ক্রিপ্টোগ্রাফার ডেভিড চৌম ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল উপায়ে টাকা আদান প্রদানের বিষয়টি নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন। আর সেই ব্যবস্থাটির নাম দেন ই-ক্যাশ।
তবে ২০০৮ সালে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো সফলভাবে ডিজিটাল ক্যাশ ব্যবস্থা চালু করেন। যা কিছু দিন পরে ‘বিটকয়েন’ নামে পরিচিত পায়। বিটকয়েন হচ্ছে ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক অর্থ। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না।
যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠান ট্র্যাক করতে পারে না, তাই কে কার কাছে এই ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় করছে তা অন্য কেউ জানতে পারে না। আবার পরিচয় গোপন রেখেও এটা দিয়ে লেনদেন করা যায়। তবে এর এনক্রিপটেড লেজার সব লেনদেনকে ঝুঁকি থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এ ধরনের কিপ্টগ্রাফিক ‘পিয়ার টু পিয়ার’ ব্যবস্থা কে বলে ব্লকচেইন টেকনোলজি।
ছবি: বিটকয়েনের মাইনিং এ ব্যবহৃত কম্পিউটার
কেন ক্রিপ্টোকারেন্সি?
প্রথমে একটা ডেমো দেই, আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে:
ধরুন আপনি দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। মাস শেষে অফিস থেকে আপনার স্যালারি দেওয়া হলো আপনার বিকাশ এ্যাকাউন্টে। আর বললো, আজ থেকে আপনারা আর হাতে নগদ কোন স্যালারি পাবেন না। এই ভাবে সরকার সহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানই একই কাজ করলো। এখন আপনি বাজারে গেলেন চাল ডাল কিনতে, সেখানে আপনিও পেমেন্ট করলেন বিকাশ থেকে। আর ওই সকল ব্যবসায়ীগণ তাদের পাইকাড়দের কে ও একইভাবে পে করলো। তাহলে বিষয়টি কি দাড়ালো? হাতে ধরে দেখার মত টাকার আর কোন লেনদেন হলো না। সব কিছু ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল হয়ে গেলো। এই ধারণাটি থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা এনক্রিপ্টেড মানির জন্ম।
গত ব্লগে ইলেকট্রনিক মানি আর ক্রিপ্টোকারেন্সি এর বর্ণনা দিয়েছিলাম। এ দুটো কিন্তু এক বিষয় নয়। উপরের উদাহরণে যে ব্যবস্থার কথা বলা হলো সেটা হলো ইলেকট্রনিক মানি ব্যবস্থার উদাহরণ। যে কোন দেশের সরকার ইচ্ছা করলে তাদের লোকাল মুদ্রা কে ডিজিটাল টাকায় (ইলেকট্রনিক মানি তে) পরিণত করতে পারে। লোকাল মুদ্রা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় রূপান্তরে অনেক সুবিধা আছে। যেমনঃ টাকা কখনো নষ্ট হবে না, সরকার টোটাল টাকার পরিমাণ রিয়েল টাইম ট্র্যাক করতে পারবে, সঠিক ভাবে ভ্যাট আদায় হবে, ইলিগ্যাল কর্মকান্ডে অর্থ সরবরাহ বন্ধ হবে। এ ছাড়াও অনেক সুবিধা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না।
আবার সঠিক সিউকিরিটি দিতে ব্যর্থ হলে টাকা সার্ভার থেকে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনাও কম না। অন্য দিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্র্যাক করাই সম্ভব না। যে জন্য কোন প্রকারে ভ্যাট, টোটাল টাকার হিসাব, আপনার বাৎসরিক ইনকাম, কোন কিছুই কেও জানতে পারবে না। তার সাথে এনক্রিপ্টেড উপায়ে লেনদেনের ব্যবস্থা তো রয়েছেই যাতে কোনোভাবে পরিচয় না জানিয়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো তথ্য না দিয়ে লেনদেন সম্ভব। মূলত এটাই ছিলো ক্রিপ্টো কারেন্সি এর উদ্ভবের প্রধান কারণ।
ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য:
ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এত মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি মাইনিং করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার ও সার্ভার প্রয়োজন, রয়েছে বিদ্যুৎ খরচ। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান অর্থ কোনটি জানেন? সেটি হচ্ছে বিটকয়েন, ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান কারেন্সি। গত কয়েকমাস ধরে অর্থমূল্য কম থাকার পর কিছুদিন ধরে আবার নিজের আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বিটকয়েন। বর্তমানে প্রতি কয়েনের মূল্য উনিশ লক্ষ একাত্তর হাজার একুশ টাকা। হ্যাঁ, অন্যান্য সাধারণ অর্থের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্যও বাড়ে বা কমে। এবং মানি এক্সচেঞ্জ এর ব্যবসার সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে এখন বিটকয়েনের।
মজার ব্যাপার হলো বিটকয়েনের মূল্য কিন্তু আগে এতটা ছিলো না। সাত আট বছর আগে এই কয়েনের কয়েক শত কয়েনের মূল্য হতো কিছু ডলার মাত্র। কিন্তু ধীরে ধীরে নিচের দিকে না তাকিয়ে শুধু বেড়েই চলেছে এর দাম এবং পর্যায়ক্রমে বেড়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময় কিভাবে?
আগেই বলেছি এই কারেন্সি বিনিময়ে কোনো নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয়না এবং কোনো প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিষয় না জানিয়েই লেনদেন করা যায়। এখানেই চলে আসে ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং ব্লক চেইনের ব্যাপার। এই ব্যবস্থায় কোনো ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহারকারী নিজের কম্পিউটারে ক্রিপ্টোকারেন্সি এর বিভিন্ন হিসাব ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয় এবং এর বিনিময়ে সে কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি উপার্জন করতে পারে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় মাইনিং। কিন্তু কোনো ব্যাক্তির কম্পিউটারে যদি এতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থের হিসাব রাখা হয় তাহলে কি জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকবে না? এখানেই কাজে আসে ব্লক চেইন ও পিয়ার টু পিয়ার। সাধারণভাবে বোঝাতে গেলে বলতে হয় বিভিন্ন কম্পিউটারে একই তথ্য রেখে ভাগ ভাগ করে আলাদাভাবে মিলিয়ে দেখা হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আশা করি ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা এসেছে। কোনো প্রশ্ন বা সাজেশন থাকলে অবশ্যই জানাবেন।