আপনি যদি এখনো মনে করেন যে হীরা (ডায়মন্ড) পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী এবং কঠিন ধাতু তবে আপনি একদমই ভুল ভাবছেন। আজ আমি গ্রাফিন নামক একটি ইন্টারেস্টিং ধাতু নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। কার্বনেরই একটি ভিন্ন রূপ গ্রাফাইট। পেনসিলের সীস হিসেবে এই গ্রাফাইট ব্যবহূত হয়। এটি বিদ্যুৎ পরিবাহী। এই গ্রাফাইটকেই আরেকটু পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়েছে গ্রাফিন।এটি একটি টু ডাইমেন্সনাল ধাতু। এটি একটি সিঙ্গেল অ্যাটম থিক বিশিষ্ট ধাতু। এর মানে ব্যাস একটি অ্যাটমের ফ্লাট লেয়ার বা চাদরের তৈরি একটি ধাতু। এবং এটি দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী এবং কঠিন ধাতু। আরো আশ্চর্যজনক কথা হলো প্রায় এই ধাতুর কোন ওজন নেই। আপনি যদি ১ স্কোয়ার মিটারের একটি শিট নেন তবে এর ওজন আসবে ০.৭৭ গ্রামস। সবচাইতে বড় কথা হলো বন্ধু এই ধাতুটি একদম সর্বউচ্চ বিদ্যুৎ পরিবাহী। বিদ্যুৎ, তাপ সহ সকল পরিবহন যোগ্য এনার্জি এটি প্রায় কোন প্রকারের লস না করেই পরিবহন করতে পারে।এটি সুপার স্ট্রং এবং সুপার ফ্লেক্সিবল ধাতু। গ্রাফিন স্টিল থেকে ১০০ গুন বেশি শক্তিশালী। গ্রাফিন স্বচ্ছ উচ্চ পরিবাহী পদার্থ যা উচ্চ তাপমাত্রায় পদার্থের বাষ্পের জমাটবদ্ধ অবস্থা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি ২০০৪ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। গ্রাফিন আবিস্কারের জন্য গত বছর ড. নভোসেলভর এবং ড. গেইম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তারা পেনসিলে বাবহৃত পুরনো চটচটে কাগজ এবং গ্রাফাইট থেকে গ্রাফিন আলাদা করেন। নিজেদের আবিষ্কার সম্পর্কে ড. নভোসেলভর বলেন, “আমি ভাবতেও পারি নি যে এত দ্রুত আমরা সক্ষম হব”। গ্রাফিন থেকে উৎপন্ন সার্কিট সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই সার্কিট সামনের দিকের একটা পদক্ষেপ মাত্র এবং এটি প্রাথমিক গবেষণা ও বাস্তব বাবহারের মধ্যম অবস্থা। তবে আমি অনেক বিস্মিত যে কেউ এটিকে অনেক দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে”। সত্যিই গ্রাফিনের ব্যবহার নিয়ে এখন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সালে আই. বি. এম গ্রাফিনযুক্ত transistor তৈরি করেছিল। চলতি মাসে তারা গ্রাফিন যুক্ত ব্রডব্যান্ড ফ্রিকুয়েন্সি তৈরির ঘোষণা দিয়েছে যা তারহীন যন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রজেক্টের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. ইউ. সিং. লিন বলেন, “ এটি গ্রাফিন যুক্ত সার্কিটের অভিনব আবিষ্কার যা প্রমাণ করবে গ্রাফিন যুক্ত সার্কিট অনেক জটিল কাজ করতে পারে”। এদিকে জীব বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন গ্রাফিন অণুবীক্ষণযন্ত্রে বাবহ্রিত হতে পারে। ফলে দিনে দিনে গ্রাফিনের ব্যবহার অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এটি রাস্ট প্রুফিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনি কিছু পেইন্ট করার সময় তাতে গ্রাফিন মিলিয়ে পেইন্ট করেন সেটি আপনার গাড়ীতে বা কোন আকাশযানে বা কোন জাহাজে তবে সেই পেইন্ট কখনোই রাস্টিং হবে না। সারা জীবনের জন্য রাস্ট প্রুফ। যেকোনো রেডিও অ্যাকটিভ ধাতুকে গ্রাফিনের চাদরে মুরিয়ে রেখে তার রেডিয়েশন নষ্ট করতে পারবেন।
গ্রাফিন অলমোস্ট ৯০% অপটিক্যাল ট্র্যান্সপারেন্ট ধাতু। কিন্তু আমরা যদি কথা বলি এর ফিজিক্যাল ট্র্যান্সপারেন্সি নিয়ে তবে যেহেতু এটি বন্ধনের পাতলা চাদরে তৈরি তাই এটির গঠনে অনেক লোমকুপ বা ছিদ্র রয়েছে এবং এই কারণে এটি একটি প্রচণ্ড ভালো ওয়াটার ফিল্টার হিসেবে কাজ করতে পারে।
গ্রাফিন ব্যবহার করে স্পীকারস এবং মাইক্রোফোন বানানো সম্ভব হবে। কেনোনা এটি ডায়াফ্রাম হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট গুলো যদি গ্রাফিন দিয়ে বানানো হয় তবে সেটি হাইলি ফ্লেক্সিবল হবে এবং তা যেকোনো আকারের ডিভাইজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।