ভেবে দেখুন, আপনার হাতে একটা ছোট স্টোরেজ ডিভাইস রয়েছে যেটা কিনা হাজার বছর ধরে হাই ডেফিনেশন ভিডিও সংরক্ষন করতে পারে! অসম্ভব মনে হচ্ছে? এটা আসলেই সম্ভব আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত একটি বিষয় দিয়ে, আর তা হলো DNA! আর প্রযুক্তিটি হলো DNA কম্পিউটিং এবং কম্পিউটার।
• DNA কি এবং কেন?
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ইংরেজি: DNA) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে। সকল জীবের ডিএনএ তে জিনোম থাকে। কোষে ডিএনএর প্রধান কাজ দীর্ঘকালের জন্য তথ্য সংরক্ষন।
এই গ্রহে সমস্ত জীবনের জিনগত উপাদান বহন করে ডিএনএ। সুতরাং, ডিএনএ একটি ব্যতিক্রমী শক্তিশালী স্টোরেজ উপাদান যা হাজার হাজার বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সঞ্চয় করতে সক্ষম।
DNA এর গঠন
• DNA কম্পিউটিং কি?
“DNA কম্পিউটিং” কম্পিউটিং এর একটি শাখা যেখানে তথাকথিত সিলিকন ভিত্তিক টেকনোলজির পরিবর্তে DNA, বায়োকেমিস্ট্রি এবং আণবিক হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়। DNA এর প্রধান ধর্মটি ব্যবহার করে এর সাহায্যে আরও কার্যকরভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা যায় এ প্রযুক্তিতে।
কার্যকরভাবে ব্যবহার শুরু হলে এই প্রযুক্তিতে এতো পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে যা কিনা এখনকার সময়ে চিন্তাও করা যায় না।
• DNA কম্পিউটিং এর ইতিহাস
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার লিওনার্ড অ্যাডলম্যান প্রাথমিকভাবে ১৯৯৪ সালে এর ধারণা দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানী অ্যাডলম্যান প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে এটি একটি গণনার রূপ যা “সাত-দফা হ্যামিল্টোনীয় পথ” সমস্যার সমাধান করেছিল। অ্যাডলম্যান এর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর থেকে প্রাথমিক ধারণার অগ্রগতি ঘটেছে এবং সে ধারণা থেকেই বিভিন্ন টিউরিং মেশিন গঠনযোগ্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
১৯৯৫ সালে, ডিএনএ ভিত্তিক মেমরির ধারণাটি এরিক বাউম প্রস্তাব করেছিলেন, যিনি অনুমান করেছিলেন যে অতি উচ্চ ঘনত্বের কারণে একটি বিশাল পরিমাণের তথ্য একটি ছোট পরিমাণে ডিএনএ তে সংরক্ষণ করা যায়। এরপর কাঠামোগত ডিএনএ স্ব-সমাবেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে যা ২০২০ সাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। DNA কম্পিউটিং এর কয়েক ন্যানোমিটার থেকে কয়েক মাইক্রোমিটার আকার পর্যন্ত স্ব-একত্রিত কাঠামোটি 2018 সালে প্রদর্শিত হয়েছিল।
• DNA কম্পিউটার এর সম্ভাবনা
যেহেতু ডিএনএ কমপিউটিং এ ডিএনএর বিভিন্ন অণুগুলির সুবিধা গ্রহণ করে কাজ করা হয় ,তাই কিছু বিশেষায়িত সমস্যার জন্য, ডিএনএ কম্পিউটারগুলি এখন পর্যন্ত নির্মিত অন্য যে কোনও কম্পিউটারের চেয়ে দ্রুত এবং ছোট। তদুপরি, একটি ডিএনএ কম্পিউটারের কাজ করার জন্য নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট গাণিতিক গণনা আবিষ্কৃত হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে, অ্যাসাইনমেন্ট সমস্যা মোকাবেলায় ডিএনএ অণু ব্যবহার করা হয়েছে।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! ৬টি অনলাইনে ছবি রাখার সফটওয়্যার : গুগল ফটো এর বিকল্প |
জিয়ান-জুন শু ও তার সহকর্মীরা একটি ডিএনএ জিপিএস সিস্টেম তৈরি করেছিলেন এবং এটি পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন যে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি ডিএনএ এর মাধ্যমে চার্জ পরিবহন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা জীবকে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি অনুধাবন করাতে পারে।
DNA কম্পিউটার এর ল্যাঙ্গুয়েজ
• DNA কম্পিউটিং এর সক্ষমতা
২০০৬ সালে একটি দল টেস্ট টিউবে ডিএনএ স্ট্র্যান্ড দিয়ে তৈরি একটি সাধারণ কম্পিউটার এ টিক-ট্যাক-টোয়ের একটি সম্পূর্ণ গেম খেলতে পেরেছিল – যেটা এতোটাই অনন্য ছিলো যে মানুষ খেলে প্রতিবার হারতে হবে বা ম্যাচ ড্র হবে, কখনোই জিততে পারবে না।
একই বছর নভেম্বরে দলটি কম্পিউটারটির দ্বিতীয় ভার্সন উপস্থাপন করেন যেটিতে শুধুমাত্র ১২৮ টি DNA Gate ব্যবহার হয়েছিলো এবং ৩২ টি ইনপুট মলিকিউল ছিলো। অর্থাৎ খুবই কম হার্ডওয়্যার এবং রিসোর্স এর মাধ্যমে অনেক বড় কাজ করা সম্ভব হবে এ DNA কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে।
• DNA কম্পিউটিং এর অসুবিধা
নিঃসন্দেহে ডিএনএ কম্পিউটার একটি অভাবনীয় প্রযুক্তি। কিন্তু এই প্রযুক্তিতেও বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ডিএনএ কম্পিউটারের ধীরগতি। একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে এটা কতটা ধীর।
সাধারণ ডিজিটাল কম্পিউটারের রেসপন্স টাইম যেখানে হিসাব করা হয় মিলিসেকেন্ডে সেখানে ডিএনএ কম্পিউটারে রেসপন্স টাইম হিসাব করা হয় মিনিট ঘন্টা এবং দিনে।
ডিএনএ কম্পিউটার পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য আমাদের অনেক বেশি পরিমাণে ডিএনএ কম্পিউটার একসাথে স্থাপন করতে হবে। এতে খুব কম সময়ে জটিল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও ডিএনএ কম্পিউটার থেকে পাওয়া আউটপুট সাধারণ ডিজিটাল কম্পিউটার থেকে পাওয়া আউটপুট এর চেয়ে খুবই জটিল হয়। যা এনালাইজ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।