হারবার্ট স্পেনসার কি কোনদিন ভেবেছিলেন শব্দটি, কেবল একটি শব্দই বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিবে। শব্দটি হলো আমাদের চেনা পরিচিত, আমাদের পাশের বাসার চাচিও চেনে শব্দটিকে; শব্দটি হলো ‘বিবর্তন’। সংক্ষিপ্ত করে বলা যায়,’বিবর্তন এমন প্রক্রিয়া যাতে প্রাণীর মধ্যে মন্থর গতিতে অথবা হঠাৎ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়’।পেঙ্গুইন এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা ।
নিউটনের সূত্র- “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে”। এখানে আবার নিউটনের সূত্র কেন আসলো?এই সূত্রানুযায়ী বিবর্তনেরও একটি প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং তা হল ‘Devolution‘., এটি যেরকম একটু জটিল বাংলা নামটাও একটু জটিল ‘Devolution=বিকেন্দ্র্রীকরণ’।
মহাবিজ্ঞানী এরিস্টোটল চতুর্থ শতাব্দীতে বলেন,”বিবর্তন হল এমন এক প্রক্রিয়া যার ফলে কোন জীব সরল জীব থেকে জটিল জীবে পরিণত হয়”।Devolution আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে এটি ছিল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাইপোথিসিস। যখন Devolution আবিষ্কৃত হয় তখন শুরু হয়েছিল বিজ্ঞানে নতুন তোলপাড়।
-“আরে বিবর্তন হচ্ছে তা তো বুঝলাম। তবে স্বপক্ষে যুক্তি তর্ক আছে। তোমরা Devolution এর পক্ষে যুক্তিতর্ক কোথায়? কোথায় তোমার প্রমাণ?”প্রমাণ দিব,তবে তা কাল্পনিক নয় চাক্ষুষ প্রমাণই দিব।
-“পেঙ্গুইন!! কি যে সুন্দর পাখি যেন ঘরে এনে সাজিয়ে রাখি!!!”।-
-‘আরে আরে দাঁড়াও;তুমি এটাকে পাখি কেন বললে?? এর তো বড় পালক নেই,উড়তেও পারে না। তবে তুমি কোথাও ভুল করছো।……..’
-না তুমি কোন ভুল করছো।
-না ঠিকই বলেছ এটি একটি পাখি।পেঙ্গুইন হল Devolution এর সর্বোত্তম উদাহরণ ! একসময় ধারণা করা হতো পেঙ্গুইন উড়তে পারত, আকাশের প্রতিটি পাখির মতো। কিন্তু আকাশে ছিল যে মহাবিপদ !!! তা হলো ডাইনোসরের মুখ !!
-“কি অদ্ভুত লাগছে??”
ডাইনোসর এর প্রভাবে সেখানে থাকা পেঙ্গুইন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে। কিন্তু কিছু পেঙ্গুইন এর প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসে শীতল বরফের দেশে অ্যান্টার্টিকাতে । অ্যান্টার্টিকার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণে পেঙ্গুইনদের আস্তে আস্তে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে ফলে প্রায় পেঙ্গুইনের সমুদ্রের মাছ ধরার জন্য সমুদ্র বিচরণ করত। কিন্তু তাদের পাখা তো সাঁতার কাটার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বিবর্তনের ধারায় এই অভাব পূরণের জন্য পাখাগুলোর শক্ত ও হালকা হয়ে যায়, ফলে সাঁতার কাটার উপযোগী হয়; ঠিক প্যাডেলের মত।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! প্রকৃতির দেবদূত প্রজাপতি: যা কিছু অজানা এবং অচেনা (২য় পর্ব) রায়চৌধুরী ইকুয়েশনঃ সিঙ্গুলারিটির সমাধানে এক বাঙ্গালি বিজ্ঞানী
|
তবে মনে প্রশ্ন আসতে পারে, “বিজ্ঞানীরা এগুলো প্রত্যক্ষ করলো কিভাবে”। পেঙ্গুইনের কেবল একটি ক্ষেত্রে Devolution ঘটেছে, কিন্তু বাকিগুলোতে তো ঘটেনি অর্থাৎ পাখির সকল বৈশিষ্ট্য রয়ে যায়!! যেমন: বায়ুথলি থাকা; হালকা ও শক্ত হাড় থাকা,যা পূর্বে তাদেরকে উড়তে সাহায্য করত; এমনকি তাদের বাচ্চা হয় ডিম পরিস্ফুটনের মাধ্যমে!! তাই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নিল যে কেবল সরল থেকে জটিল নয় বরং জটিল থেকে সরলেও বিবর্তন ঘটছে। যার প্রকৃত উদাহরণ তোমাদের সামনে,এ লেখায়।
কেবল পেঙ্গুইনের যে Devolution ঘটেছে তা নয়, Devolution ঘটে চলেছে বিভিন্ন প্রাণিতেও; যেমন: সাপের পূর্বে পা ছিল যা আজ আর নেই,পাখির দাঁত ছিল যা আজ বিলুপ্ত, হ্যাগফিশ চোখে দেখতে পারত কিন্তু আজ সে অন্ধ!!
এভাবে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে হাজার বিবর্তন, তারই মধ্যে কিছু বিবর্তন ঘটে চলেছে রিভার্সে,যাকে বিকেন্দ্রীকরণ বা Devolution বলা হয়।
সূত্র ঃ https://www.sciencealert.com/what-happens-when-species-evolve-backwards-the-strange-science-of-devolution