প্রকৃতিতে এমনও প্রানী আছে যারা পরজীবী না কিন্তু প্রানী গুলোর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই একে অপরের দেহের সাথে একীভূত হয়ে জীবনযাপন করছে। এমনটিও কি সম্ভব? – হ্যাঁ ; আসলেই সম্ভব!
অ্যাঙ্গলারফিশ (Anglerfish) নামক এক ধরনের সামুদ্রিক প্রানীর কিছু প্রজাতির মধ্যে এই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অ্যাঙ্গলারফিশ গুলোর মধ্যে অদ্ভুত প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষ একে অপরের দেহের সাথে একটি বিশেষ টিস্যু দ্বারা ফিউজ ( মিলিত) হয়। অর্থাৎ টিস্যুটি হলো বিশেষায়িত দাত যা মূলত পুরুষের দেহের-ই হয়ে থাকে। এই ধরনের পদ্ধতিকে সেক্সসুয়াল প্যারাসাইটিজম (Sexual Parasitism) বলে।
এই প্রক্রিয়ায় যখন পুরুষ অ্যাঙ্গলারফিশ গুলো তাদের এই বিশেষ দাত/ বিশেষ টিস্যু স্ত্রীর পেটে বিদ্ধ করে তখনই তারা স্ত্রীর দেহ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহন করে থাকে, পাশাপাশি স্ত্রী প্রজাতিটি উপকৃত হয় কারন এই টিস্যুর মাধ্যমে স্ত্রীর দেহটি পুরুষের শুক্রাণু পায় এবং প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে।
অ্যাঙ্গলারফিশের প্রায় ১৬৮ টি প্রজাতি রয়েছে যেগুলো সমুদ্রের ৩০০ মিটার গভীরে অবস্থিত এবং তার মধ্যে কিছু প্রজাতি এই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে থাকে। স্ত্রী দেহ পুরুষের চেয়ে প্রায় ৬০ গুন পর্যন্ত বড় হয়ে থাকে যেখানে একটি পুরুষের দেহের দৈর্ঘ্য ১ সে.মি/ ১০ মি.মি এর চেয়েও কম হয়ে থাকে।
এখন সবার মাথায় একটা প্রশ্ন আসতে পারে পুরুষ যদি তার দাত স্ত্রীর পেটে বিদ্ধ করে তাহলে স্ত্রী প্রজাতিটি কিভাবে সেটি গ্রহন করে?
– আমরা হয়তো জানি, প্রত্যেকটি মেরুদণ্ডী প্রানীর দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Immune System) বিদ্যমান এবং প্রানীর দেহে যদি বহিরাগতভাবে কোনো কিছু প্রবেশ করে তখনই দেহের অ্যান্টিবডিগুলো সেই বহিরাগত জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।
ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অব ইমিউনোবায়োলজি এন্ড এপিজেনেটিক্স এর একজন ড. টমাস বোহম (Thomas Boehm) বলেন, “জিনগতভাবে দুটি পৃথক প্রাণী, যতই একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ হোক না কেনো, তাদের দেহের পেশী/ মাংস কোনো গুরুতর পরিনতি ছাড়া একে অপরের সাথে একীভূত করতে সক্ষম নয়”।
কারন ভার্টিব্রেট (Vertebrates) উপপর্বের প্রানীগুলোর দেহ ইমিউন সিস্টেম দ্বারা সুরক্ষিত থাকে যার ফলে বহিরাগত কোনো কিছু দেহে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম কাজ করে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে অ্যাঙ্গলারফিশ গুলো তাদের যৌন পরজীবীসম্পন্ন (Sexual Parasitism) জীবনযাপনের কারনে তারা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম হারিয়েছে।
মানুষসহ সকল মেরুদণ্ডী প্রানীর দুই ধরনের ইমিউন সিস্টেম আছে। প্রথমটি হচ্ছে সহজাত ব্যবস্থা যা আণুবীক্ষণিক আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সাড়া দেয়। অপরদিকে দ্বিতীয় সিস্টেমটি হলো অভিযোজিত সিস্টেম যা নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য “killer T cell” উৎপাদন করে থাকে। এই দুটি সিস্টেম বহিরাগত প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য একসাথে কাজ করে থাকে।
কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন অনেক অ্যাঙ্গলারফিশের প্রজাতিগুলো সময়ের সাথে বিবর্তিত হওয়ার ফলে অভিযোজিত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে এবং তারা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না।
তবে এই প্রানীগুলোর গোত্রের মধ্যে বেশ কিছু প্রজনন পদ্ধতি আছে। কিছু কিছু স্ত্রী প্রজাতি একটিমাত্র পুরুষ দেহের সাথে একীভূত হয়; আবার কিছু কিছু স্ত্রী প্রজাতি অনেকগুলো পুরুষদের সাথে একীভূত হয়।
প্রায় ১০ প্রজাতির জিনের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায় এবং এই প্রজাতি গুলোই সেক্সচুয়াল প্যারাসাইটিজম প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু এই প্রাণীগুলো ইমিউন সিস্টেম ছাড়া কিভাবে জীবনযাপন করে?
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! প্রোগ্রামিং-এর-হাতেখড়িঃ প্রাথমিক আলোচনা চলুন ঘুরে আসি পৃথিবীর সবথেকে বড় গুহা থেকে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট-শুধুই কী সাইন্স ফিকশন থেকে উঠে আসে গল্প নাকি বাস্তবতা? |
– স্পষ্টতভাবে এরা পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়। হয়তো তারা সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবানু /প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষকরা আরও জানান যে, তারা এখনো নিশ্চিতভাবে এখন কিছু বলতে পারছেন না কেন এই অ্যাঙ্গলারফিশ গুলো এইরকম অদ্ভুত ইমিউন সিস্টেমের সাথে অভিযোজিত হয়েছে; কিন্তু মনে হয় প্রানীগুলো এদের নিজস্ব প্রজনন ক্ষমতার সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
বোহম (Boehm) আরও বলেন,”অ্যাঙ্গলারফিশের এই অভিযোজন সম্পর্কে আমরা আর কি কি জানতে পারি তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নই তবে প্রানী গুলো সত্যিই অবিশ্বাস্য কিছু করেছে”।