মানুষের শুক্রাণু/ডিম্বাণুর সাথে অন্য কোন প্রাণীর ডিম্বাণু/শুক্রাণুর মিল নেই। আকার, গঠন, কেমিকেল অবস্থা বিভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন প্রাণীর শুক্রাণু/ডিম্বাণু আলাদা রকম হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ডিএনএ যেহেতু ভিন্ন তাই তাদের শুক্রাণু/ডিম্বাণু এর ডিএনএ-তে ভিন্ন হয়।
আলাদা প্রজাতির মধ্যে ক্রসিং করে নতুন প্রাণীর জন্ম আমরা দেখেছি যেমন বাঘ-সিংহের মধ্যে, ঘোড়া-গাধার মধ্যে। কিন্তু মানুষ এবং অন্য পশুর মধ্যে এরকম ক্রসিং ঘটানো কি সম্ভব হয়েছে?
না হয়নি, এর কিছু গুরুতর রাসায়নিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
স্তন্যপায়ীদের ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বের হবার পর এর চারপাশে একটি ফলিকল সেলের আবরণ থাকে এবং এই কোষগুলো রাসায়নিক সংকেত এর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা শুক্রাণু গুলোকে দিক নির্দেশ করে। যদি এই সিগনাল ভুল হয় তাহলে শুক্রাণু ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌছাতেই পারবে না, তাই মানুষের শুক্রাণু যদি অন্য প্রাণীর দেহে যায় সেগুলো সেই প্রাণীর ডিম্বাণুতেই যেতে পারবে না। সেইম অন্য প্রাণীর শুক্রাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করলেও সেই শুক্রাণু রাসায়নিক সিগনাল না বোঝায় ডিম্বাণুর দিকে যেতে পারবেনা।
আচ্ছা ধরে নিলাম কোনভাবে শুক্রাণুকে অন্য প্রাণীর ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌছে দেয়া হলো, কিন্তু তাতেও কাজ হবেনা কারণ ডিম্বাণু যেকোন শুক্রাণু কেই গ্রহণ করবেনা, স্তন্যপায়ীদের ডিম্বাণুর বাহিরে জোনা প্যালোসিডা নামক আবরণ থাকে, শুক্রাণুতে থাকা রিসেপ্টর মিলে গেলে একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে এবং জোনা প্যালোসিডা এর আবরণ ভেদ করে তখন শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশ করতে পারে, এক্ষেত্রেও মানুষের শুক্রাণুর রিসেপ্টর মিলবে না, তাই তা অন্য প্রাণীর ডিম্বাণুকে নিষিক্তও করবে না, একইভাবে অন্য প্রাণীর শুক্রাণুও মানুষের ডিম্বাণুতে প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ সেই প্রাণীর শুক্রাণুর রিসেপ্টর ম্যাচ করবে না মানুষের ডিম্বাণুর সাথে।
কোনভাবে এই দুই ধাপ পার হয়েও যদি শুক্রাণু ওই প্রাণীর ডিম্বাণুতে প্রবেশ করেও, তবুও তা নিষিক্ত হবেনা, কারণ ক্রোমোজোম সংখ্যা মিলবে না।
আমাদের দেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম আছে, মানুষের শুক্রাণুতে থাকে অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজম বা ২৩ টি আর বাকি ২৩ টি থাকে ডিম্বাণুতে এই মিলে মোট ৪৬ টি হয়। কিন্তু অন্য পশুর সাথে মানুষের ক্রোমোজম সংখ্যা যখন মিলবে না তখন ডিম্বাণু শুক্রাণু এক হয়ে যে কোষটি গঠিত হতে থাকবে সেটি নিজে থেকেই নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার এই ব্লগটিও পড়তে পারেনঃ ভিপিএন কি হ্যাকারের থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দিতে পারে?
১৯২০ সালে একজন রাশিয়ান বায়োলজিস্ট মানুষ এবং পশুর মধ্যে মিশ্র প্রানী জন্মানোর লক্ষ্যে একটি পরীক্ষা চালান, তিনি নিজের শুক্রাণু কিছু শিম্পাঞ্জির দেহে প্রবেশ করান এবং শিম্পাঞ্জির শুক্রাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করান, কিন্তু এদের মধ্যে কেউ ই প্রেগন্যান্ট হয়নি কারণ তাদের দেহের ভেতর দুটি আলাদা প্রজাতির প্রাণীর শুক্রাণু-ডিম্বাণু নিষিক্তই হয়নি। বরং যে শিম্পাঞ্জি এবং মানুষদের উপর এই এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছিল তাদের অনেকেই মারা যায়, পরে সরকার এটি বন্ধ করে দেয় এবং সেই বায়োলজিস্ট দেশ ত্যাগ করে।
যেকোন দুইটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ডিম্বাণু-শুক্রাণুর নিষেক সম্ভব, যদি প্রাণী দুটি একই গোত্রের হয় যেমন বাঘ-সিংহ বা ঘোড়া-গাধা এরা একই গোত্রের, অথবা একই উপ-প্রজাতির হলেও সম্ভব যেমন নেকরের প্রায় ৩৬ টি উপ-প্রজাতি মধ্যে একটি হচ্ছে কুকুর। সুতরাং সেই ৩৬ টির সাথেই কুকুরের সংকরায়ন ঘটানো সম্ভব।
বাঘ-সিংহের মতই মানুষের একই গোত্র ছিল হোমো নেন্ডারথ্যাল নামক প্রাণী, যাদেরকে আদিম মানুষও বলা হয়, পাথর যুগে এদের অস্তিত্ব ছিল। যেহেতু একই গোত্র তাই এদের সাথে মানুষের ডিম্বাণু/শুক্রাণুর নিষেক হওয়া সম্ভব, ধারণা করা হয় আধুনিক মানুষের মধ্যেও এদের ডিএনএ আছে(আমাদের ডিএনএ এর প্রায় ৫%) কারণ হয়ত তখনকার সময় আধুনিক মানুষ এবং হোমো ন্যান্ডারথ্যাল মিলিত হয়েছিল।
নিজের ব্লগটিও লিখে ফেলুন এখুনি! ধন্যবাদ।