আচ্ছা, আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, ফিস প্লেট কি? কি উত্তর দেবেন? হ্যাঁ, যিনি এই ব্লগটি পড়ছেন আমি তাকেই বলছি। আপনি যদি এর সম্পর্কে জানেন, তাহলে তো হলোই আর যদি না জানেন? স্বভাবতই আপনার মনে আসতে পারে হয়তো এটা মাছের মত দেখতে কোনো প্লেট অথবা প্লেটের মত দেখতে কোনো মাছ। যদি এই দুটোর একটাও আপনি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ভাবনায় এক্ষুনি আমি পানি ঢেলে দিবো। কারণ রেল পরিভাষায় এই শব্দের মাধ্যমে অন্য একটি ব্যাপার বোঝানো হয়।
ফিশ প্লেট (Fishplate) হলো রেললাইনের দুটি বিটের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে ব্যবহৃত ধাতব পাত। পরক্ষণেই আপনাদের মাথায় প্রশ্ন আসবে তাহলে এমন নাটকীয় নাম রাখার মানে কি? এর পেছনে কি কোনো ঘটনা আছে? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।
যখন রেললাইনের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করে তখন এই ধাতব পাত গুলো মাছের মত উঁচু নিচু হয়, এজন্যই নাম দেওয়া হয়েছে ফিশ প্লেট।
ফিশ প্লেটকে Splice bar অথবা Joint bar ও বলা হয়।
আবিষ্কারক : William Bridges Adams (1797 –1872) ফিস প্লেট এর আবিষ্কারক। ১৮৪৪ সালের মে মাসে তিনি এই ফিশ প্লেট আবিষ্কার করেন। কারন তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, রেললাইনের ব্যবহৃত স্কার্ফ জয়েন্ট ও অন্যান্য সিস্টেমগুলো তুলনামূলক ভাবে দুর্বল । এটি সর্বপ্রথম Eastern Counties Railway তে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৪৯ প্রকৌশলী James Samuel ফিশ প্লেটে নতুন মাত্রা যোগ করেন।
ফিশপ্লেট যেভাবে কাজ করে:
যখন রেললাইনের একপ্রান্ত শেষ হয় এবং নতুন আরেকটি রেললাইনের শুরু হয় তখন উভয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে ফিশ প্লেট যুক্ত করা হয়। রেলগাড়ি যখন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে আসবে, তখন যাতে রেলগাড়ির পুরো ভারটা একবারে না পড়ে এজন্যই মূলত ফিশ প্লেট ব্যবহৃত হয়। রেলগাড়ি যখন চলে তখন তল অনুযায়ী এর অবস্থান এবং যাতে পিছলে বা হেলে না পরে এজন্য ফিশ প্লেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকারভেদ:
ভরের ওপর ভিত্তি করে এদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
- Light
- Heavy
- Super Heavy
এছাড়াও ব্যবহারের ভিত্তিতে এরা কয়েক ধরনের-
- Compromise fish plate
- Belly fish plate
- Emergency fish plate
- Standard fish plate
ক্রস সেকশন এর ওপর ভিত্তি করে ফ্ল্যাট, অ্যাংগেল এবং ডাবল অ্যাংগেল ফিশ প্লেট এর মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা হয়।
ফিশ প্লেট এর গঠন:
সাধারণত কপার অথবা নিকেল সিলভার দিয়ে ফিশ প্লেটটি গঠিত হয়। এছাড়াও raw material হিসেবে Carbon Steel ও High Carbon Steel ব্যবহার করা যেতে পারে। হেভি রেল, লাইট রেল, ক্রেন রেল সবগুলোতেই ব্যবহারের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের স্টিলের ফিশ প্লেটের ব্যবহার হয়।
সাধারণত সকল ফিশ প্লেট এ চারটি করে গর্ত বিদ্যমান, যেগুলো Bolt কে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়া লং ফিশ প্লেট (৯০০ mm লম্বা) নামে পরিচিত ফিশ প্লেটে ছয়টি গর্ত থাকতে পারে।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না ! স্টকহোম সিন্ড্রোম : অপরাধীর প্রতি সমর্থন যখন মনোবৈকল্য ! |
রেলওয়ে সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য:
রেলওয়ে স্লিপার হলো সেই অংশ যার ওপর রেলগাড়ি সঠিকভাবে সাজানো থাকে। রেলওয়ে স্লিপার সাধারণত রেললাইনে ছড়ানো পাথরের ওপরও নির্ভর করে। এর শীর্ষে যে জয়েন্ট থাকে তাকে বলা হয় ফিক্সড জয়েন্ট। দুটি স্লিপার এর মধ্যে যে জয়েন্ট নিহিত থাকে সেটি হলো ফ্লোটিং জয়েন্ট। ফ্লোটিং জয়েন্ট রেললাইনের ক্ষয় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
কেনো জানতে হবে এই fishplate সম্পর্কে:
এই ফিশপ্লেট রেললাইনের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভালো মানের ফিশ প্লেট এর মাধ্যমে রেললাইন অনেক বেশি শক্তিশালী হয় এবং বেশিদিন এর স্থায়িত্ব বজায় থাকে। রেল পরিবহনের ক্ষেত্রে হালকা এবং ভারী উভয় লাইনের জন্যই ফিশ প্লেট কাজ করে সুরক্ষা কবজ হিসেবে। যদিও ফিশ প্লেটের অনুপস্থিতিতে ট্রেন ঠিকই চলবে তবে, যখন পুরো ট্রেনের ভর রেললাইনের ওপর পরে তখন হতে পারে বিকৃতি, যেটা থেকে পরবর্তীতে হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।