গত কয়েক বছরে আগুন ও বরফের ভূমি পর্যটনের কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। এর পিছনে খুব ভালো কারণও রয়েছে । আইসল্যান্ড একটি অবিশ্বাস্য দেশ।দেশটির এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিশ্বের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আইসল্যান্ডের এমন ১৫ টি মজার ব্যাপার নিয়ে আজকের এই ব্লগটি–
১। ভাইকিং বন্ধন:
আইসল্যান্ড ৪০০ দশকের মাঝে নরওয়ের ভাইকিং দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল। এই ব্যাপারটিই আইসল্যান্ডকে মোটামুটি একটি তরুণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলে। সেই দেশে এখনকার আইসল্যান্ডীয় ঘোড়াগুলি অনন্য কেননা তারা ভাইকিংয়ের ঘোড়াগুলির সরাসরি বংশধর যা তারা মূলত ইউরোপ থেকে এনেছিল। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ভাইকিংসরাই আইসল্যান্ড ও গ্রীনল্যান্ডকে ভুলভাবে নামকরণ করেছিল যাতে তাদের শত্রুরা তাদের অনুসরণ করতে বরফে ঢাকা গ্রীনল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করে। যদিও তারা অবস্থান করছিল আইসল্যান্ডে।
২।প্রথম সংসদ
৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে ইউরোপের প্রথম পার্লামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় বর্তমান আইসল্যান্ডের ইংলভেলারের ন্যাশনাল পার্ক এ। তার সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, এবং ভৌগোলিক তাৎপর্যের কারণে “ইংলভেলার ন্যাশনাল পার্ক” সাইটটিকে একটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের খেতাব দেওয়া হয়েছে।
৩।ট্যাকটনিক প্লেট
ইউনেস্কো ইংলভেলার ন্যাশনাল পার্ককে ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দিয়েছে এর অনন্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।সারা পৃথিবীতে এমন দুইটি জায়গা রয়েছে যেখানে পৃথিবীর দুইটি ট্যাকটনিক প্ল্যাট পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরেই মিলিত হয়েছে। এর একটি হল ইংলভেলার ন্যাশনাল পার্ক এবং অপরটি আফ্রিকা।আপনি চাইলে ট্যাকটনিক প্লেটের মাঝে ডাইভিং ও করতে পারবেন যা ইংলভেলারের হ্রদের কাছাকাছি অবস্থিত।
৪। আগ্নেয়গিরি
আইসল্যান্ড যেহেতু মিডল–আটলান্টিক রিজের উপর অবস্থিত, তাই ভূতাত্ত্বিকভাবে এটি অবিশ্বাস্যভাবে সক্রিয় দেশ। এই দেশে ১২৫ টিরও বেশি আগ্নেয়গিরির পাহাড় রয়েছে, যার বেশিরভাগ এখনও খুব সক্রিয়।
আইসল্যান্ডকে প্রতি ৪ বছরে প্রায় একবার আগ্নেয়গিরির অগ্নিকুণ্ডের স্বীকার হতে হয় , যদিও গত কয়েক বছরে প্রতি বছর এক বা একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে। প্রতিবছর এমনই বিষ্ফোরণ এর কারণে, আইসল্যান্ডের একটি ভাল অংশ লাভা দিয়ে আচ্ছাদিত।
৫। হিমবাহ
আশ্চর্যজনকভাবে, আইসল্যান্ডের আরেকটি বড় অংশ হিমবাহ দ্বারা আবৃত। যা সেই দেশে একটি অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
৬। নেই কোনো জঙ্গল (!)
আইসল্যান্ড বেশির ভাগ ই হিমবাহ ও আগ্নেয়গিরি দিয়েই আচ্ছাদিত। খুব একটা জঙ্গল এখানে দৃষ্টিগোচর হয় না। ভাইকিং দের সময়কালে তারা সেই দেশের সকল বৃক্ষ উপড়ে ফেলেছিল। যদিও বর্তমানে সেখানে বৃক্ষরোপণ এর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিন্তু তেমন কোনো গাছ জঙ্গল এখনো চোখে পড়ার মত নয়।
৭। পরিবেশ–বান্ধব
আইসল্যান্ড একটি পরিবেশ বান্ধব দেশ। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার জন্য এই দেশে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। প্রতি বছর আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের জন্যই দেশটিকে খুব জীবন্ত মনে হয়।
এই দেশে পানি ও ভূ–শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়। খুব অল্প জীবাশ্ম জ্বালানী এখানে পুড়িয়ে ফেলা হয় (রেজাজিকের চারপাশে কিছু হাইড্রোজেন বাসও রয়েছে!), এবং বেশিরভাগ শহরের বাড়িগুলোকে উত্তপ্ত রাখা হয় ভূ–অভ্যন্তরের পানি দ্বারা।
৮। সংরক্ষিত ভাষা
ড্যানিস এবং নরওয়েজিয়ানের খুব কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও আইসল্যান্ডীয় ভাষা তার নিজস্ব অনন্যতা ধরে রেখেছে।যুগ যুগ ধরে অন্যান্য ভাষার বিভিন্ন পরিবর্তন সাধন হলেও আইসল্যান্ডীয় ভাষা তার মূল শিকড় থেকে খুব একটা নড়বড়ে হয় নি। এমনকি আইসল্যান্ডের মানুষরা এখনো সেই ১৫০০ দশকের বাইবেল সহজেই পড়তে পারে।
৯।রুপকথার পরী এবং দানব
বর্তমান আইসল্যান্ডে বসবাসকারী মানুষরা (প্রায় ৫০% বা তার বেশি) কল্পিত পরী এবং দানবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এসব কল্পিত পরী এবং দানবকে ঘিরে রয়েছে অনেক মজার গল্প এবং অসাধারণ কিংবদন্তি। এমনকি যেসব স্থানে দানবদের বসবাস বলে তারা মনে করে সেখানকার কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ণ করার পরিবর্তে স্থগিত করে দেয়া হয়।
হিমবাহের আশেপাশে বড় বড় পাথর গুলোকে তারা হিমায়িত দানব বলে ধরে নেয় এবং বলা হয়ে থাকে যে আইসল্যান্ডে উপস্থিত গন্ধটি সালফারের থেকে নয় – এটি সেই দানবদের নোংরা স্নানের পানির গন্ধ।
১০। নেই কোনো ম্যাকডোনাল্ড
খুবই আশ্চর্যের বিষয় আইসল্যান্ড খুব সম্ভব একমাত্র দেশ যেখানে কোনো ম্যাকডোনাল্ডস রেস্টুরেন্ট নেই! হ্যাঁ, আপনি রেজাজিকের মধ্যে কেএফসি এবং এমনকি টাকো বেলটিও খুঁজে পেতে পারেন, কিন্তু বিগ ম্যাক বা চিকেন ম্যাকনাগেটগুলি বেছে নেওয়ার কথা ভুলে যান – আপনি এসব এখানে খুঁজেই পাবেন না!মজার ব্যাপার তাই না?
১১।অদ্ভূত খাবার
আইসল্যান্ডে ফাস্ট ফুড এর অভাব তো রয়েছেই,সাথে রয়েছে তাদের ঐতিহ্যগত অদ্ভূত কিছু খাবারের তালিকা। যেমন তিমি,পামিন ও শুকনো মাছ। মাঝে মধ্যে হাঙ্গর, ভেড়ার মাথার মত অদ্ভূত খাদ্যও পর্যটকদের খেতে হয়।যেকোনো রেস্টুরেন্টেই এমন অদ্ভূত খাবারের ম্যেনু আপনি দেখতে পারবেন।
তবে আইসল্যান্ড এর জনপ্রিয় খাবার কি বলতে পারেন?
তা হচ্ছে হট–ডগ।
১২।বাণিজ্যিক তিমি শিকার
মাছধরা আইসল্যান্ডের একটি প্রধান শিল্প।সারা বিশ্বে আইসল্যান্ডের মত অল্প সংখ্যক দেশ রয়েছে যেখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তিমিশিকার করার অনুমতি দেওয়া আছে। তবে এটি বেশ বিতর্কিত এবং শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
১৩। স্বল্প জনগোষ্ঠী
আইসল্যান্ডের এরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির রাজ্যের প্রায় সমান হলেও এর জন্যসংখ্যা মাত্র ৩০০,০০০। অথচ কেনটাকির জনসংখ্যা প্রায় ৪.৩ মিলিয়ন। এই ক্ষুদ্র জনসংখ্যায় আইসল্যান্ডের বিভিন্ন ছোট বড় গ্রাম শহর এবং রাজধানী জুড়ে বসবাস করছে।
১৪। খুব সামান্য অপরাধ
আইসল্যান্ড একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এ দেশে খুব বড় কোনো ধরণের অপরাধ সংগঠিত হতে দেখা যায় না।
এমনকি দেশে কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনী ও নেই। বরং এখানকার পুলিশ বাহিনীরা বন্দুক ছাড়া খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই চলাচল করতে পারে।
১৫। সুমেরু প্রভা এবং মধ্যরাতের সূর্য
আর্কটিক সার্কেলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় আইসল্যান্ডে শীতকালে দীর্ঘ রাত এবং গ্রীষ্মকালে দীর্ঘ দিন লক্ষ করা যায়। ডিসেম্বরের দিনের প্রায় ২৪ ঘন্টায় অন্ধকার বা সন্ধ্যায় এবং জুন মাসে প্রায় ২৪ ঘন্টা সূর্যালোকের উপস্থিতি
দেখা দেয়। এই কারণেই সুমেরু প্রভা এবং নিশীথ সূর্য উপভোগ করার জন্য আইসল্যান্ড একটি চমৎকার দেশ। যদিও আইসল্যান্ডের পরিবর্তিত আবহাওয়া এসবে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।