ব্র্যাক অন্বেষা হলো বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতিরি কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট), যা ২০১৭ সালের ৪ জুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।
জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম অপ্সরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মানোয়ার, এই তিনজন মিলে জাপানের কিউশু ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ন্যানো স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে। ন্যানো স্যাটেলাইটির নকশা প্রণয়ন থেকে চূড়ান্ত কাঠামো নির্মাণের সকল কাজ করেছে এই তিন শিক্ষার্থী। এর গঠনাকৃতি ঘনকের মত। ১ কেজি ওজনের এই কৃত্রিম উপগ্রহের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার।
‘ব্র্যাক অন্বেষা’ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের লক্ষ্যে (আইএসএস) উৎক্ষেপণ করা হয় ৪ জুন, ২০১৭, বাংলাদেশ সময় ভোররাত ৩টা ৭ মিনিটে। ন্যানো স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে এবং পৃথিবীর চারপাশে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে ৯০ মিনিটের মতো সময় নেয়। এটি প্রতিদিন সমস্ত পৃথিবীকে ১৬ বার এবং বাংলাদেশকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বার প্রদক্ষিণ করে।
মহাকাশ থেকে এই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদ-নদী, সাগর-পাহাড়, গ্রাম-শহর ইত্যাদির আলোকচিত্র গ্রহণ করা যাবে, যা দিয়ে দেশের ভূ-প্রকৃতি, গঠন ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা করা যাবে। এটি দুর্যোগের পূর্বাভাস ও উচ্চমানের ছবি পাঠাতে পারে।
এই কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” যুক্ত করা আছে, যা মহাকাশে ছড়িয়ে দেবে এবং ভূমি থেকেও তা ডাউনলিঙ্ক করা যাবে। বিশেষ বিশেষ দিনে হ্যাম রেডিও দিয়ে মহাকাশে ভেসে থাকা ন্যানো স্যাটেলাইট থেকে জাতীয় সঙ্গীত শোনা যাবে।
বাংলাদেশ তার ভূ-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য অন্য দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ছবি কিনতো, যা অনেক ব্যয়বহুল ও অবাধ গবেষণার জন্য প্রতিকূল। আমাদের মতো দরিদ্র দেশের জন্য ন্যানো স্যাটেলাইটই বেশি উপযোগী। কেননা, এর মাধ্যমে অল্প খরচে এবং সহজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে পাঠানো ছবি আমরা পেতে পারব।