সূর্য আমাদের পৃথিবীতে শক্তির অন্যতম উৎস। সূর্য থেকে আমরা আলো পাই, তাপশক্তি পাই এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন করি আলোক কণা ফোটন দ্বারা। গ্রামাঞ্চলে বা প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে বিদ্যুৎ এর জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়। মহাকাশে কোনো নভোযান পাঠানো হলে সেটায় বিদ্যুতের যোগান হয় সূর্য থেকে অর্থাৎ সোলার প্যানেলের সহায়তায়। সূর্যের আলোর ফোটন থেকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
কিন্তু সেটা কীভাবে? কীভাবেই বা কাজ করে সোলার প্যানেল? আজ আমরা ফোটন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল ও এর আবিষ্কারের ইতিহাস জানবো।যে প্রক্রিয়ায় সূর্যের আলোর ফোটন থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হয় তাকে আলোর ফটোতড়িৎ ক্রিয়া বলা হয়। ফটোতড়িৎ ক্রিয়া সর্বপ্রথম ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে পর্যবেক্ষণ করেন ডব্লিউ. স্মিথ (W. Smith) নামক একজন টেলিফোন অপারেটর। তিনি ছিলেন ট্রান্স আটলান্টিক ক্যাবল-এর বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপক। তিনি তার রোধ পরিমাপক যন্ত্রে সেলিনিয়াম রোধক ব্যবহার করতেন। একদিন তিনি লক্ষ করলেন তার রোধ পরিমাপক যন্ত্রের উপর সূর্যের আলো পরার সাথে সাথে বিদ্যুৎ প্রবাহের মান বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন কীভাবে বেড়ে যাচ্ছে এর কোনো ব্যাখ্যা ছিল না স্মিথের কাছে। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী হার্জ লক্ষ করেন যে দুটি তড়িৎদ্বারের মধ্যবর্তী ফাঁকে অতি বেগুনি রশ্মি আপতিত হলে এদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। এমনটা কেন হয় সেটা হার্জের জানা ছিল না। হার্জ ক্যাথোডরশ্মিকে ইলেক্ট্রন কণার স্রোত মানতে নারাজ ছিলেন। এজন্য ওই স্ফুলিঙ্গের কারণে যে ইলেক্ট্রন নির্গত হতে পারে তা হার্জের কল্পনাতেই ছিল না। এর পরের বছর জর্মান বিজ্ঞানী হল্ওয়াচ ও তার সঙ্গীরা গবেষণার সময় লক্ষ করেন যে অতি বেগুনি রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত পাতের উপর আপতিত হলে তা দ্রুত অচার্জিত হয়ে পড়ে কিন্তু ঋণাত্বক আধানযুক্ত পাতের উপর আপতিত হলে কোনো ক্রিয়া সংঘটিত হয় না। অনেকে ভাবতে পারেন আলোর ঝলকানিটা অতি বেগুনি রশ্মিরও হতে পারে। কিন্তু অতি বেগুনি রশ্মি তো খালি চোখে দেখা যায় না। অ্যানোড থেকে যে ঝলকানি নির্গত হয় তা অবশ্যই ঋণাত্বক চার্জে চার্জিত। তা না হলে অ্যানোড দ্রুত চার্জহীন হয়ে পরে কেন?
১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জরেস আলফারভ ও তার সহকর্মীরা তৈরি করেন উচ্চ কার্যক্ষম হেটেরো-স্ট্রাকচার সৌর কোষ। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার এপ্লাইড সোলার এনার্জি করপোরেশন (ASEC) তৈরি করে গ্যালিয়াম-আর্সেনাইডের দ্বৈত জাংশন কোষ যার কার্যক্ষমতা ছিল প্রায় ১৭%। পরবর্তী এক দশকে ASEC তাদের কোষের কার্যক্ষমতা উন্নীত করে ২০%-এ। এই কোষগুলো আমেরিকান মহাকাশযানগুলোতে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৭ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তি ত্রি-জাংশন পর্যায়ে উন্নীত হয় ও প্রায় ৩০% কার্যক্ষমতা লাভ করে।
২০০০ দশকে সৌর কোষ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে এবং কোষের মৌলিক গঠনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রচলিত সৌর কোষেগুলোর গঠন ও উপাদানের ভিন্নতা বিবেচনায় এদের তিনটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়-
প্রথম প্রজন্ম প্রথম প্রজন্মের সৌর কোষগুলো অতি উচ্চমানের সেমিন্ডাকটর জাংশনের তৈরী, আকারে বড়, কিন্তু উচচ কার্যক্ষম। তাত্ত্বিক হিসেবে দেখা যায় এর সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ৩১% এবং এ ধরণের আধুনিক কোষগুলোর কার্যক্ষমতা এ মানের কাছাকাছি।
দ্বিতীয় প্রজন্ম এ প্রজন্মের সৌর কোষগুলো সস্তা, কিন্তু নিম্ন কর্মক্ষমতাসম্পন্ন (১২-২০%)। এরা পাতলা সর (থিন ফিল্ম) প্রযুক্তিতে তৈরী। বহুল প্রচলিত উপাদাঙ্গুলোর মধ্যে আছে ক্যাডমিয়াম টেলুরাইড (CdTe), দানাদার সিলিকন ও কপার-ইন্ডিয়াম-গ্যালিয়াম-সেলেনাইড (CIGS).
তৃতীয় প্রজন্ম তৃতীয় প্রজন্মের কোষ মূলত দ্বিতীয় প্রজন্মের কোষগুলোর উন্নত সংস্করণ। এদের মধ্যে আছে ডাই-সংবেদী কোষ, ন্যানোসিলিকন কোষ ইত্যাদি।
সৌর কোষ তিনটি ধাপে কাজ করে: 1. সূর্যের আলোর ফোটন সোলার প্যানেলকে আঘাত করে এবং তা অর্ধপরিবাহী পদার্থের মাধ্যমে শোষিত হয় যেমন- সিলিকন। 2. ইলেকট্রন (ঋণাত্নকভাবে চার্জিত) তাদের পরমাণু থেকে বেরিয়ে যায়, যা সারা পদার্থে প্রবাহিত হতে থাকে বিদ্যুত উৎপন্ন করার জন্য।বিশেষ সজ্জার সৌর কোষে, ইলেকট্রনকে একটি নির্দিষ্ট দিকে যেতে দেওয়া হয়। 3. সৌর কোষের একটি সজ্জা রূপান্তর করে সৌরশক্তিকে ব্যবহার যোগ্য পরিমাণের ডিসি বিদ্যুতে। এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন বিদ্যুতই মহাকাশে পাঠানো নভোযান, প্রত্যন্ত অঞ্চল এমনকি শহরের সড়কবাতি জ্বালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এই নবায়নযোগ্য শক্তি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
Faysal is currently studying intermediate 2nd year at BAF Shaheen College,Kurmitola .Enthusiastic and tech freak Faysal advised,”Don’t limit your challenges, challenge your limits.”