বাংলাদেশে ডিমান্ডেবল ও জনপ্রিয় সাবজেক্টগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নাম CSE (Computer Science & Engineering)। সিএসই সাবজেক্ট রিভিউ শুরু করা যাক-
CSE পড়তে হলে ৩ টা স্কিল থাকতে হবে।
১. গণিতের প্রতি মোটামুটি দক্ষতা,
২. নতুন কিছু করার উদ্ভাবনী চিন্তা,
৩. প্রোগ্রামিং করার প্যাশন এবং ধৈর্য্য। CSE সাবজেক্টটি ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও যে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ানো হলেও অন্যান্য সাবজেক্ট থেকে CSE সাবজেক্টটির অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে।
কোথায় পার্থক্য?
অন্যান্য সাবজেক্টগুলোর রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে জব পেতে হলে সবার আগে কোন জিনিসটির প্রয়োজন? সিজিপিএ। এছাড়া অনেক সময় ভাল সিজিপিএ থাকলেও কিছু মামা, চাচা ধরে বাঁচা ক্যান্ডিডেটদের ভীড়ে সিজিপিএ এর খবরও থাকে না।
কিন্তু এক্ষেত্রে CSE এর একটা সুবিধা হচ্ছে, তোমার সিজিপিএ যদি ২ ও (আউট অফ ৪) হয়, একগাদা ড্রপ কোর্স থাকে কিংবা সার্টিফিকেটও যদি না থাকে তবুও চিন্তা নেই। আছে তোমার ক্রিয়েটিভিটি। কিন্তু তোমার প্যাশন থাকতে হবে প্রোগ্রামিং এর। রাত দিন বসে যদি কোডিং করার ধৈর্য্য থাকে তবে তুমি সিজিপিএ, সার্টিফিকেট ও ভূমিকম্প ছাড়াই তোমার ইন্ডাস্ট্রি কাপাতে পারবে।
তবে এক্ষেত্রে যদি তোমার সফটওয়্যার ডেভলপিং, কোডিং এর প্রতি প্যাশন না থাকে তবে CSE এর বরাবর না আগানোই তোমার ফিউচারের জন্য ভাল হবে। তাছাড়া প্যাশন না থাকা সত্ত্বেও CSE পড়তে চাইলে চার বছর একাডেমিক লাইফটা খুবই বাজে যাবে এবং ফাইনাল ইয়ারে থিসিস করার জন্য টপিক খুজে পাবেনা।
আরও পড়ুনঃ নতুনদের জন্য প্রোগ্রামিং গাইডলাইন
অফুরন্ত কর্মক্ষেত্রঃ
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন রেখা প্রযুক্তির দিকে ধাবমান। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। আমাদের দেশে এখনো চাহিদার তুলনায় দক্ষ কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট অনেক কম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তথ্য–প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সাথে সাথে শিল্পে আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরমাণু শক্তি কমিশন, Satellite Transmission থেকে Traffic Controlling, E-governance, রেল যোগাযোগ সহ সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটার এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে সকল ক্ষেত্রেই CSE এর চাহিদা প্রচুর। এর ফলে তৈরি হচ্ছে অফুরন্ত কর্মক্ষেত্র।
১। সরকারী বিভিন্ন বিভাগ–বিদ্যুৎ উন্নয়ন অধিদপ্তর, পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রভৃতিতে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে।
২। বিভিন্ন ফার্মে Software Engineer & Programmer, IT Professional.
৩। Network Administration, System Analyst.
৪। Web Mastering & Developing Company
৫। Graphics Designer.
৬। Film Industry তে Simulation & Animation ডিরেক্টর।
৭। সামরিক বাহিনী কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে।
৮। সকল আধুনিক শিল্পকারখানায় প্রসেস কন্ট্রোলিং এ।
৯। Microsoft, Google, Yahoo, Facebook, Intel এর মত জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে।
১০। Nasa, সার্নের মত বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষনা ইন্সটিটিউটে।
এছাড়া সরকারী ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা তো আছেই।
অ্যাপ গেমস ডেভলপিংঃ
CSE স্টুডেন্টদের একটা স্পেশালিটি হচ্ছে তুমি অন্যের বানানো গেম কিংবা অ্যাপের নিজের মন মত ডেভলপিং থেকে শুরু করে নিজের প্রয়োজনমত অ্যাপ, গেম, ওয়েব বানিয়ে ফেলতে পারো।
রোবোটিক্সঃ
সোফিয়া রোবট নিয়ে অনেক বিতর্ক চলছে তাই না? শুধু সোফিয়াই নয় বর্তমানে রোবটের ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে মানুষের রোবটের প্রতি নির্ভরশীলতা। প্রতিযোগিতামূলক এ যুগে প্রোগ্রামিং শিখে তুমি বানিয়ে ফেলতে পারো তোমার শখের রোবটটি। তুমি বানিজ্যিকভাবে রোবটিক্স প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করে নিজেকে অনেক বড় একটি প্লাটফর্মে দাড় করাতে পারো। তোমার প্রোগ্রামিং কোয়ালিটির জন্য তুমি গুগল, মাইক্রোসফটে জব পেয়ে যেতে পারো।
স্কলারশীপঃ
তোমার যদি প্যাশন থাকে CSE পড়ার তবে তোমার জন্য একটা Good-News হলো অন্যান্য স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশে পড়াশুনা করার সুযোগ CSE তে অনেক বেশি। Massachusetts Institute of Technology (MIT), Harvard University, The University of Melbourne, University of California at Berkeley (UCB) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো CSE এর স্টুডেন্ট দের স্কলারশীপ দিয়ে থাকে।
একজন বড় ভাই এর গল্প বলে শেষ করি। মনির ভাই শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭/৯৮ ব্যাচ ছিলেন। অগোছালো মানুষ ছিলেন। ক্লাস করতেন না। দিনরাত বসে নতুন নতুন সফটওয়ার বানাতেন। প্রচুর ড্রপ কোর্স ছিলো ভাই এর। রেজাল্ট ছিল ৩ এর নীচে। উনার ফাইনাল ইয়ারের সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষার পরেও উনার অনেক কোর্স বাকী ছিলো। কিন্তু হঠাত করে সার্টিফিকেট ছাড়াই উনি চাকরী পেয়ে গেলেন মাইক্রোসফট এ। জাফর ইকবাল স্যার উনাকে সেই আমেরিকা থেকে ফেরত আনিয়ে বাকী কোর্সগুলা কমপ্লিট করিয়েছিলেন।
কথায় কথায় স্যার একবার মনির ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তোমার রেজাল্ট নিয়ে, সার্টিফিকেট নিয়ে ওরা কিছু বলেনা? মনির ভাই উত্তর দিলেন, “না। ওরা ভয় পায় আমি যদি তাহলে চাকরী ছেড়ে দেই।
তবে আবেগের বশবর্তী হয়ে অথবা ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে এই সাবজেক্টে পড়তে আসলে পুরো লাইফটাই হেইল হয়ে যেতে পারে।