আমরা সকলেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করি, তাই না? সেখানে চ্যাটের শুরুতে একটা মেসেজ কি খেয়াল করেছেন? This Chat is End to End Encrypted, এই এনক্রিপসনের মানে টা কি? কিভাবে শুরু এই পদ্ধতির? এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো এনক্রিপসনের খুঁটিনাটি সিরিজে। আশা করি বী ব্লগের পাঠক/পাঠিকা-দের এই সিরিজ টি নতুন কিছু দিতে পারবে এবং আপনাদের সবার এই বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা জন্মাবে।
স্বাগতম বী ব্লগে, আজকের পর্বে আমি আলোচনা করবো এনক্রিপসন কি? এবং এনক্রিপসনের ইতিহাস নিয়ে। তো চলুন শুরু করা যাক।
এনক্রিপসন কি?
এনক্রিপসন হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ইনপুট ডেটা কে একটি সিক্রেট কোডিং টেকনিক দ্বারা এমনভাবে সাজিয়ে নেয়া যাতে করে শুধুমাত্র অথোরাইজড ডিক্রিপ্টর-ই সেটাকে পড়তে পারে।
একটু সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি,
আমি একটি মেসেজ লিখলাম,
“I am Dipto Barua, Campus Ambassador of ScienceBee”
এই সুনির্দিষ্ট মেসেজটি আমি একটি এনক্রিপ্টর প্রোগ্রাম কে দিলাম এনক্রিপসন করার জন্য।
ধরুন, আমার এনক্রিপসন প্রোগ্রাম টিকে আমি নির্দেশ দিয়েছি,
I কে 00xx5 লিখবে।
Am কে 96f5g লিখবে।
Dipto Barua কে o011jkg লিখবে।
Campus কে i09as লিখবে।
Ambassador কে yt1092g লিখবে।
Of কে 763bhsd লিখবে। এবং
ScienceBee কে m0b1ns1kd3r লিখবে।
আর কোনো স্পেস থাকলে সেটাকে null (নাল) হিসেবে রাখবে।
তাহলে আমার পুরো বাক্য টির এনক্রিপটেড ভার্সন গিয়ে দাঁড়াবে,
00xx596f5go011jkgi09asyt1092g763bhsdm0b1ns1kd3r
এখন এই জিনিস টিকে আপনি কখনই পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না যদিনা আপনি আমার এক একটা কোডের সঠিক বাক্যটিকে না জানেন এবং এই কোড-টিকে রিড করতে হলে, আপনার অবশ্যই আমার মতো প্রোগ্রামটি থাকা লাগবে যে আগে থেকেই আমার কোড এবং এর অর্থ জানে। কম্পিউটারের ভাষায় একে বলা হয়, ডিক্রিপ্টর এবং এটি একটি কি (key) এর সাহায্যে মেসেজ ডিক্রিপ্ট করবে। এটা ছাড়া আপনি কোনোভাবেই জানতে পারবেন না যে,এখানে আমি কি লিখেছি! মজার না?
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!
|
ধরুন, আমি এই মেসেজটি আমি একইসাথে পাঠিয়েছি সায়েন্স বী ফাউন্ডার মবিন সিকদার ভাইয়া এবং ব্লগ প্রজেক্ট কো-অরডিনেটর ঋভু ভাইয়াকে এবং আমি মবিন ভাইয়া কে আমার প্রোগ্রামটি সরবরাহ করেছি কিন্তু ঋভু ভাইয়া কে নয়! তাহলে যা দাঁড়াবে তা হচ্ছে, মবিন ভাইয়া সহজেই আমার দেয়া মেসেজটি পড়ে ফেলবেন কিন্তু ঋভু ভাইয়া পারবেন না।
এটাই হলো এনক্রিপসন।
এনক্রিপসনের ইতিহাস:
প্রাচীন গ্রীসে ‘স্কিটেলি’ নামক একটি যন্ত্র ব্যবহারের প্রচলন ছিলো। যন্ত্র-টি তাদের বাক্য এনক্রিপ্ট করতো ট্রান্সপোজিশন সাইফার ব্যবহার করে। তবে এটি কোনো শক্ত এনক্রিপশন ছিলো না এবং সহজেই এটিকে পড়া যেতো। দ্রুত এনক্রিপশন করার জন্য এটি ব্যবহার শুরু হয়।
এরপর কিছু সময় বাদে জুলিয়াস সিজার তার সিজার সাইফার পদ্ধতির প্রচলন শুরু করলেন। সাইফার পদ্ধতি হচ্ছে মূলত একটি প্লেইন টেক্সট (Plain Text) কে এমনভাবে একটি গোপন এলগোরিদম অনুসারে রূপ দেয়া হত যাতে এটির এলগোরিদম না জানা কেউ এটিকে পড়তে না পারে। সিজার সাইফার পদ্ধতিতে একটি টেক্সটের সঙ্গে একটি সংখ্যা দেওয়া হয়, যাকে কি (key) বলা হয়। কি-এর মান যত, টেক্সটের অক্ষরগুলো তত ঘর পরের অক্ষর দিয়ে বদলে দেওয়া হয়।
যেমন, কি-এর মান যদি 2 হয়, তখন abc-কে লেখা হবে cde (a-এর জায়গায় c, b-এর জায়গায় d, d-এর জায়গায় e)। এই কি এর মান কেবল প্রাপকই জানে, যার ফলে অন্য কেউ এই টেক্সটের মর্মোদ্ধার করতে পারে না। এটি মূলত কাজ করতো অবস্থানের দ্বারা ডান বা বাম দিকে কি অনুসারে বর্ণমালা প্রতিটি অক্ষর স্থানান্তর করে। নিচে এর একটি উদাহরণ দেয়া হলো:
ধরুন আমার আগের প্লেইন টেক্সট, I am Dipto Barua, Campus Ambassador of ScienceBee, এবং এই টেক্সটের সাথে আমি কি (Key) হিসেবে দিলাম 3; তাহলে প্রত্যেকটি বর্ণ তার তিন ঘর পরের বর্ণ-কে প্রতিস্থাপন করবে।
বর্ণ: | A | B | C | D | E | F | G | H | I | J | K | L | M | N | O | P | Q | R | S | T | U | V | W | X | Y | Z |
সাইফার: | D | E | F | G | H | I | J | K | L | M | N | O | P | Q | R | S | T | U | V | W | X | Y | Z | A | B | C |
আমি যদি প্লেইন টেক্সট-টাকে সিজার সাইফার ব্যবহার করে লিখি, তাহলে এটা দাঁড়াবে,
L dp Glswr Eduxd, Fdpsxv Dpedvvdgru ri VflhqfhEhh
আপনি কি বের করতে পারবেন এখানে কি লিখেছি, যদি না আপনার কাছে কি (Key) টা না থাকে!? ঠিক একইভাবে জুলিয়াস সিজারের মেসেজটি তখন তারাই পড়তে পারতেন যখন তারা জুলিয়াস সিজারের নিজস্ব সাইফার পদ্ধতিটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং কি-টা জানতেন। বর্তমানে এটা একদম সাধারণ এনক্রিপসন বলে বিবেচিত হলেও, প্রাচীন সময়ে এটিও একটি অসাধারণ এনক্রিপসন পদ্ধতি ছিলো।
খুব জলদি দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানবো আধুনিক এনক্রিপসনের ইতিহাস ও এনক্রিপসনের প্রকারভেদ নিয়ে। ততোদিন সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে আপভোট করতে এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না। বী-ব্লগের সাথেই থাকুন, কোনো ব্লগ মিস করতে না চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন বী-ব্লগ-কে।