Movie name :দ্যা ইমিটেশন গেম
Director : Morten Tyldum
Cast : Benedict Cumberbatch, Keira Knightley
Genre : War/ Biography
IMDb : 8/10
Rotten Tomatoes : 90%
Awards : 1 Oscar, 8 Oscar nominations
“Are you listening”
‘দ্যা ইমিটেশন গেম’ ছবির প্রথম ডায়ালগই ছিল এটি,কারন তারপরেই এমন এক দুর্দান্ত কাহিনী শুরু হতে যাচ্ছে যার প্রতিটি মুহুর্তই গুরুত্বপূর্ন। তবে ছবিটি সম্পর্কে কিছু বলার আগে আমরা সামান্য কিছু ইতিহাস জেনে আসি।
যুদ্ধের ময়দানে সময়ের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির কোন অস্ত্র বা দুর্দান্ত কোন জেনারেলের চেয়েও বড় নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় ‘ইন্টেলিজেন্স’ বা শত্রু পক্ষের গোপন খবর। শত্রু পক্ষের হাঁড়ির খবর জেনে সময় মত আঘাত করতে পারলেই বিজয়ের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ঘটনা। জার্মান আক্রমনে ইউরোপ একেবারে দিশেহারা।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এতো প্রচেষ্টার পরও যে ফ্রান্সকে জার্মানি দখল করতে পারেনি সেই ফ্রান্সকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়েকদিনে দখল করে নেয় জার্মানি। আশেপাশের ছোট বড় অনেক রাষ্ট্রই হিটলারের পদতলে। প্যানজারের মত ট্যাংক আর রোমেলের মত জেনারেলদের উপর ভর করে জার্মানরা একটার পর একটা যুদ্ধে জয় আনছে। যুদ্ধের ময়দানে যোজন যোজন এগিয়ে দিচ্ছে জার্মানদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।
তবে প্যানজার, টাইগার ট্যাংকের চেয়েও মিত্রবাহিনীর বড় মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়ায় জার্মানদের একটি ২৬ পাউন্ডের একটা যন্ত্র,যার নাম ছিল এনিগমা।
জাদুর এই বাক্সটি জার্মানদের সব মেসেজকে এনক্রিপটেড করে দিচ্ছিলো। মিত্রবাহিনীর গোয়েন্দারা প্রতিদিন হাজার হাজার জার্মান বার্তা ইন্টারসেপ্ট করছেন। কিন্তু এলোমেলো কিছু অক্ষর ছাড়া সেগুলো কিছুই না। নির্দিষ্ট key word ব্যবহার করলেই এলোমেলো অক্ষরগুলো মূল অক্ষরে ফেরত আসবে। এনক্রিপশনের ব্যাবহার রোমান সম্রাট সিজার সময় থেকে থাকলেও জার্মানরা এনক্রিপশন পদ্ধতিকে ভীষণরকম জটিল পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এনিগমা নামের যন্ত্রটিতে 158,962,555,217,826,360,000 রকম কম্বিনেশন ছিল অর্থাৎ যন্ত্রটি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এতভাবে একটি শব্দকে লিখতে পারত। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কেউ যদি তাদের বার্তার কোড ব্রেক করতে সক্ষম হয় ও তাহলেও খুব একটা লাভ নেই কারন জার্মানরা রাত বারোটা বাজলেই এনিগমার key code কম্বিনেশন পরিবর্তন করে দিতো। সারদিন ধরে যখন কোড ব্রেকার আর প্রোগ্রামাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেত একটি বার্তার মর্মার্থ বোঝার জন্যে,রাত বারোটা বাজলেই সেসব কাজ বৃথা হয়ে যেত। পরের দিন আবার একই কাজ প্রথম থেকে করতে হত কারন ততক্ষণে জার্মানরা তাদের এনিগমার কোড পরিবর্তন করে ফেলেছে।
এগুলো পড়েছেন তো? বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান |
বৃটিশ সরকার সারা দেশের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষদেরকে এই কাজে নিয়োগ দেন, যেখানে ছিল গণিতবিদ থেকে শুরু করে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু। সেই দলে ছিলেন বৃটিশ গণিতজ্ঞ এ্যালেন টিউরিং। তবে তার কাছে এই সনাতন পধতি তে কোড ব্রেক করার পদ্ধতি পছন্দ হয়নি। তিনি জানতেন একটি যন্ত্র কে হারানোর জন্যে আরেকটি যন্ত্রের প্রয়োজন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন একটি যন্ত্র তিনি তৈরি করবেন যে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে, অর্থাৎ এমন কোন মেশিন যা মানুষের মত স্বচিন্তক হয়ে উঠতে পারবে। বর্তমানে আমরা যাকে বলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এলান টিউরিং কাজ করে যান তার এই মেশিন তৈরিতে। এবং অনেক বাধা বিপত্তি পার করে তিনি সেই জাদুর মেশিন তৈরি করতে সক্ষম হন। যাকে আমরা বলি আধুনিক কম্পিউটার। অর্থাৎ আমরা এতক্ষন যার কথা আলোচনা করছিলাম তিনিই আধুনিক কম্পিউটারের জনক।
তার সেই যুগান্তকারী মেশিনটি হারিয়ে দেয় এনিগমা কে,এনিগমার কোন কোড কম্বিনেশনই আর কাজ করে না টিউরিং এর যুগান্তকারী মেশিনের সামনে।টিউরিং এর প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেয়াদ কমে গেছিলো দুই বছর। বেঁচে গিয়েছিলেন অজস্র মানুষ। বৃটিশদের এই কোড ব্রেকিং যজ্ঞটি ছিল একটি সিক্রেট মিশন তাই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তারা সব দলিল পত্র লুকিয়ে ফেলে এবং তা প্রায় ৫০ বছর ধরে সারা বিশ্বের অজানাই থেকে যায়।যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ্যালান টিউরিং সমকামিতার অভিযোগে দন্ডিত হোন এবং একটি নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে অবশ্য বৃটিশ সরকার গন দাবির মুখে তাকে ক্ষমা করে এবং ঠিক করে তাদের পরবর্তী অর্থবছরে পঞ্চাশ পাউন্ডের নোটে এলান টিউরিং এর ছবি থাকবে।
ছবিটিতে এ্যালান টিউরিং এর চরিত্রে অভিনয় করেন ‘শার্লক’ ও ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ নামে অধিক পরিচত বৃটিশ অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। অহংকারী ও দাম্ভিক চরিত্রগুলো তিনি ভালই ফুটিয়ে তুলতে পারেন,চরিত্রের ভেতর তিনি এমনভাবে প্রবেশ করেন যেন সেই চরিত্রে তিনি ছাড়া আর কাউকে মানাতোই না। দ্যা ইমিটেশন গেমেও (The Imitation Game) তিনি তার সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন।
এছাড়াও কিরা নাইটলিসহ অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রীরাও দর্শকের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। পরিচালক মর্টেন টাইলডামের স্ক্রিনপ্লে তাকে এনে দিয়েছে অস্কার। এই ছবিটিতে যুদ্ধের পাশাপাশি টিউরিং এর ব্যাক্তিগত জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে তবে, সে সব কিছু জানতে হলে আজই দেখে ফেলুন দ্যা ইমিটেশন গেম ,হ্যাপি ওয়াচিং।