এই প্রশ্নটার সাধারন একটা উত্তর হচ্ছে বাতাস হচ্ছে এক প্রকার শক্তি।আমরা প্রাইমারি স্কুল থেকে বিষয়টা জানি।আচ্ছা এই কথাটা বললেই কী বোঝা যায় আমি বলতে চাচ্ছি বিষয়টা কী আসলেই অনুভব করা যায়?নাহ্ দেখা যাক, বাতাস আসলে কী?
প্রথমেই এমন একটা ঘটনা বলব যা থেকে বিষয়টা অনেক ভাল অনুভব করা যাবে।আজ কাল যে গরম ফ্যান ছাড়া আমাদের এক মুহুর্তও চলে না।আচ্ছা চিন্তা করেছেন কী পাখা ঘুরলে কেন বাতাস লাগে?বিদুৎ এর কারণে না হয় পাখা ঘোরে কিন্তু বাতাস কোথায় থেকে আসে?
অবশ্যই ফ্যানের ভেতর থেকে আসে না! আপনি যদি কোন ঘর বায়ুশূন্য করে তার ভেতর ফ্যান লাগিয়ে ঘোরাতেন তাহলে কখনোই বাতাস লাগত না!
কেন? আমার বিশ্বাস সকলেই ধরতে পেরেছেন। ঘরের মধ্যে বাতাসই নেই ফ্যান ঘুরলেই কী না ঘুরলেই কী! এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আমাদেন বাসা বাড়িতে যে স্থানে আমরা ফ্যান লাগাই ফ্যান ঘোরার কারণে বাতাস এসে আমাদের গায়ে লাগে।
অনেকেই খেয়াল করেছেন ফ্যানের পাখাগুলোর প্রতিটি একটু বাকা থাকে।অর্থাৎ ফ্যান যে জায়গায় লাগানো থাকে সেখানে অবশ্যই বাতাস থাকে,আর ফ্যান যখন ঘোরে তখন সেই জায়গার বাতাসকে পাখাগুলো নিচের দিকে ঠেলে দেয়। আর বাতাস আমাদের গায়ে লাগে।
এক কাজ করতে পারেন। একটা বৈদ্যুতিক মটর সংগ্রহ করে তার সাথে একটা ব্যাটারি, সুইচ সহকারে লাগান।তার পর মোটা কাগজ সংগ্রহ করুণ সাথে একটা বোতলের মুখ। এবার বোতলের মুখটা ছিদ্র করে মটরের সাথে লাগান। তারপর বোতলের মুখের সাথে তিনটি কাগজ টুকরা আঠা দিয়ে লাগান(বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত ফ্যানের পাখার আদলে কাগজ সুবিধা মতো কেটে নিন)। ফ্যান ঘুড়িয়ে দেখুন বাতাস লাগবে না!
তারপর সেই পাখা খুলে একটু বাকা করে লাগালে দেখবেন যে বাতাস লাগছে।আপনি যদি এখন ফ্যানের নিচে বসে থাকেন তাহলে বিষয়টি লক্ষ করুণ। দারুণভাবে বুঝতে পারবেন!
সহজ কথায় বলতে গেলে বাতাস হলো এর মধ্যে অবস্থিত অনু সমূহের গতি। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়।পাখা ঘুরানোর ফলে আমাদের গায়ে লাগল আমরা অনুভব করলাম কিন্তু দেখলাম কিন্তু আমরা বাতাস দেখলাম না কেন? বাতাস আমরা দেখি না কেন?
আগে আমাদের বুঝতে হবে আমরা কোন বস্তু দেখি কীভাবে? কোন কিছুর ওপর আলো পড়লে তিনটি জিনিস ঘটে। প্রতিফলিত বা প্রতিসরণ কিংবা শোষণ । আলো একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ চরিত্রের। এর কণা চরিত্র আছে বলেই আলোক–তড়িৎক্রিয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটে। আবার তরঙ্গ চরিত্র আছে বলেই এদের ব্যতিচার–অপবর্তন ঘটে, বেতার তরঙ্গের মতো আলোগুলি কংক্রিট কিংবা ইস্পাতের দেয়াল পর্যন্ত ভেদ করে যায়।
আলোর কণার নাম ফোটন। কিন্তু সেই ফোটন আবার অদ্ভুত চরিত্রের। এদের ভরবেগ আছে আবার ছোটেও সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার গতিতে! আলোর কণা–ধর্মের কারণেই বস্তু থেকে ফিরে আসতে পারে আলো। একে আলোর প্রতিফলন বলে। প্রতিফলিত এই আলোকরশ্মি যখন আমাদের চোখের রেটিনায় এসে পড়ে তখনই আমরা সেই বস্তুটাকে দেখতে পাই।
চোখের রেটিনার পেছনে মস্তিষ্কের ভেতর একটা আলোক সংবেদি পর্দা আছে। রেটিনার লেন্সে আপতিত আলোক রশ্মি একত্রিত হয়ে সেই পর্দার ওপর যে বস্তু থেকে আলোক রশ্মি আসছে সেই বস্তুটির প্রতিবিম্ব তৈরি করে। তখনই আমরা ওই বস্তুটা দেখতে পাই। কোনো কারণে চোখের রেটিনা কিংবা মস্তিষ্কের আলোক সংবেদি ওই পর্দা ঠিকমতো কাজ না করলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।
বাতাসের ক্ষেত্রে আসি। মানুষের চোখে কোন কিছু দেখার জন্য ৭০০ ন্যানো মিটার থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম আলোর প্রয়োজন হয়(1 ন্যানোমিটার=10⁻⁹ মিটার)। কিন্তু বাতাসের উপর আলো পরলে মাত্র ১ ন্যানো মিটার ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম আলো প্রতিফলিত করে।
তবে কিছু গ্যাস দৃশ্যমান আলোর কিছু তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে শোষণ করে এগুলি রঙিন করে তোলে: উদাহরণস্বরূপ, ক্লোরিন লাল আলোকে শোষণ করে এবং তাই সবুজ দেখা যায়। তবে, বাতাসের প্রধান গ্যাসগুলি (৭৮.০৯% নাইট্রোজেন,২০.৯৫% অক্সিজেন, ০.৯৩% আর্গন, ০.০৩% কার্বন ডাইঅক্সাইড ) দৃশ্যমান আলো শোষণ করে না।
তা না হয় বুঝলাম কিন্তু বাতাস তৈরি হয়েছিল কীভাবে? বাতাস যেভাবে উৎপন্ন হয়েছিল: আমাদের বায়ুমণ্ডল অভিকর্ষের কারণে উৎপন্ন হয়েছিল। পৃথিবীটি যখন প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল, তখন গলিত গ্রহের সবেমাত্র একটি বায়ুমণ্ডল ছিল। কিন্তু বিশ্ব শীতল হওয়ার সাথে সাথে এর বায়ুমণ্ডলটি তৈরি হয়েছিল মূলত আগ্নেয়গিরির বাহিত গ্যাসগুলি থেকে।
এই প্রাচীন পরিবেশটি আজকের চেয়ে অনেক আলাদা ছিল। এটিতে হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন এবং আধুনিক পরিবেশের তুলনায় ১০ থেকে ২০০ গুণ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ছিল। পৃথিবী কিছুটা শুক্রের মতো বায়ুমণ্ডল দিয়ে শুরু হয়েছিল(নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন দিয়ে) । প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর পরে, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বিকশিত হয়েছিল, যার অর্থ এককোষী জীবগুলি সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানির অণুগুলিকে গ্লুকোজ(চিনি) এবং অক্সিজেন গ্যাসে পরিণত করতে। এটি অক্সিজেনের মাত্রা ব্যাপক ভাবে বাড়িয়েছিল।এভাবেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল তৈরি হয়েছিল।
মহাবিশ্বের অন্য কোনও গ্রহের পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই। মঙ্গল ও শুক্রের বায়ুমণ্ডল রয়েছে তবে তারা জীবনকে সমর্থন করতে পারে না (কমপক্ষে পৃথিবীর মতো জীবন নয়), কারণ তাদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। প্রকৃতপক্ষে শুক্রের বায়ুমণ্ডল মূলত সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘের সাথে কার্বন ডাই অক্সাইড এর মিশ্রন। যা এতটাই ঘন এবং গরম যে কোনও মানুষ সেখানে শ্বাস নিতে পারে না।এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সীসা গলানোর জন্য যথেষ্ট গরম।
আমাদের বায়ুমণ্ডল সূর্যের কঠোর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে এবং গ্রহের চারপাশে জড়িয়ে থাকা তাপমাত্রার চূড়ান্ততা হ্রাস করে। আজ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে আমাদের বায়ুমন্ডল ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরণের গ্রিনহাউস গ্যাস রয়েছে, প্রধান কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড।গ্রিনহাউস গ্যাসের চাদর পৃথিবী থেকে বিচ্ছুরিত শক্তিকে শুষে নেয় এবং তাপমাত্রা সঠিক স্তরে রাখতে সাহায্য করে। কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। বন নিধন করলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।
এগুলো হল– কয়লা, পেট্রলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, জমির চাহিদা মেটাতে যথেচ্ছ গাছ কেটে ফেলা, মাটিতে মিশে না এমন পদার্থ যেমন প্লাস্টিকের উৎপাদন, কৃষিতে যত্রতত্র সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ।
আমাদের ভূলের কারনেই এগুলোর হচ্ছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল জীবন ছাড়া জীবন এর অস্তিত্ব থাকবে না। বায়ুমণ্ডল জৈবিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।তাই নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্ম এবং সুন্দর এই পৃথিবীর জন্য আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।