একটি বড় নক্ষত্র (অবশ্যই আমাদের সূর্য থেকে কয়েক লক্ষ গুন বড়) তার নিজস্ব মহাকর্ষের অধীনে পতিত হয়, তখন এটি একটি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর গঠন করে। এটা এতই ঘনত্বপূর্ন যে,এটি তার event horizon (ঘটনা দিগন্ত, ব্ল্যাকহোলকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রাখা একটি সীমানা) এর পাশ দিয়ে যাওয়া সমস্ত কিছুকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে।এমনকি আলোও এটাকে অতিক্রম করে বের হয়ে আসতে পারে না।
Event horizon স্থান কে সময়ের সাথে প্রতিস্থাপন করে এবং কেবলমাত্র সামনে এগিয়ে যায়। সময়ের সাথে সবকিছু ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তরে Singularity (ব্ল্যাক হোলের মধ্যকার অসীম ঘনত্বের বিন্দুটিকে ইংরেজিতে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়) এর দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব অসীম হয় এবং সময়ের ইতি ঘটে। এটাও জেনে রাখা ভালো সিঙ্গুলারিটির সীমানার চারপাশে জগতের চিরাচরিত কোন তত্ত্বই কাজ করে না।
Sir Roger Penrose, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিশ্লেষণের জন্য যুগান্তকর একটি গাণিতিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি টপোলজি গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখান, একটি Collapsing বড় নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বেশি হবে যে, সেটি একটি সিঙ্গুলারিটি তৈরি করবে।সিঙ্গুলারিটির মানেই অনন্য। এমন অনন্য অবস্থা মহাবিশ্বের আর অন্য কোথাও বিরাজ করে না। সিঙ্গুলারিটিতে curvature of space-time (স্থান-কালের বক্রতা) এত তীব্র হয় যে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতি সেখানে আর কাজ করে না এবং সেটি আমাদের মহাবিশ্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
পেনরোজ প্রমাণ করেন, এরকম সিঙ্গুলারিটি একটি ঘটনা দিগন্ত দিয়ে ঘেরা থাকবে, যার ভেতর থেকে আলোও বের হবে না। এটাকে মহাজাগতিক সেনসরশিপ নাম দিয়েছিলেন পেনরোজ। আপেক্ষিকতার জনক আলবার্ট আইনস্টাইনও বিশ্বাস করতেন না যে ব্ল্যাক হোল আসলেই থাকতে পারে। তবে আইনস্টাইনের মৃত্যুর দশ বছর পরে Penrose ঠিকই প্রমাণ করেছিলেন যে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শন করতে পারে।
১৯৬৫ সালে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার পেপারে পাবলিশের পরবর্তী কাজের মধ্যে, পেনরোজ স্টিফেন হকিংয়ের সাথে যোগ দিয়েছিলেন এবং Gravitational Singularity ( ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া অসীম ঘনত্বের বিন্দু) কখন তৈরি হয় তার আইডিয়া দিয়েছিলেন।
ব্ল্যাক হোল কল্পনা করার একটি সাধারণ উপায় হল ফানেলের মধ্যে প্রসারিত একটি দ্বি-মাত্রিক(2D) শীট। আপনি যদি এর নিচের দিকে একবার চলে যান তাহলে আপনি আর উপরে উঠতে পারবেন না। এবার ফানেলটিকে ছবির মতো ত্রি-মাত্রিক(3D) ভাবে চিন্তা করুন, কোন বস্তুকে আপনি যেদিক থেকেই ফেলেন না কেনো সেটা একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুতে অভ্যন্তরে পড়ে। এই বিন্দুটিকেই পদার্থবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন Singularity।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! নতুনদের জন্য সি প্রোগ্রামিং: ভ্যারিয়েবল এবং কি-ওয়ার্ড Transfusion associated graft-versus-host disease : কি এবং কেন |
ব্ল্যাক হোলগুলোকে আপনি শুধু তাদের ভর(mass), বৈদ্যুতিক চার্জ (electric charge) এবং কৌণিক গতি(angular momentum)দ্বারা চিহ্নিত করতে পারবেন।এরা প্রত্যেকেই প্রাথমিক কণার (elementary particles) মতো আচরন করে।
আলবার্ট আইনস্টাইনের তার আপেক্ষিকতার তত্ত্বে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, একটি ব্ল্যাক হোলের curvature of space-time (সহজ ভাষায় বললে , স্থান-কালের বক্রতা) তার singularity তে অসীম হয়ে যায়; তবে এটা physically সম্ভব নয়। উপরের তথ্যগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, আইনস্টাইনের তত্ত্বটি অসম্পূর্ণ। পদার্থবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, তাদের ব্ল্যাকহোলের Singularity বোঝার জন্য মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
পদার্থবিদদের এই চিন্তার বাস্তবিক রূপদানের জন্যই দীর্ঘ বছর পর ২০২০ সালে এসে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেলেন Sir Penrose। তবে মূল আফসোসের বিষয় আমাদের Sir Jamal Nazrul Islam ও ছিলেন Penrose এবং Hawking এর সমপর্যায়ের এবং তাদের সমসাময়িক মহাকাশ গবেষক। হয়ত দেশে ফিরে না এলে আজকে আমরা তার হাতেও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেখতে পেতাম। তবে আশা করি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পদার্থবিদরা দেশের জন্য অনেক সাফল্য বয়ে আনবে।
….