সম্প্রতি করোনার ভ্যাকসিনের সাথে যে কন্সপিরেসি থিওরি জুড়ে দেওয়া হয়েছে তা হল করোনা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে মাইক্রোচিপ মানবদেহে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে আমদের দেশে এবং বিদেশে অনেকে দাবি করছেন। যদিও দাবিটার পক্ষে কোন সুস্পষ্ট যুক্তি প্রমাণ নেই বরং এটি নিছক একটি গুজব। চলুন দেখে নিই মাইক্রোচিপ আসলে কি, কিভাবে কাজ করে ও এর সুবিধা-অসুবিধা।
মনে করুন, একা কোথাও কাজে বের হলেন। বাসে ওঠে রওনা দিলেন। বাস থেকে নামার সময় মানি ব্যাগ গায়েব।মাথায় হাত! হায়! আমি এখন কী করব। আমার আইডি কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নগদ অর্থ সব শেষ। এই যে মুহূর্তে একজন মানুষ কত অসহায় আর হতবম্ভ হয়ে পড়বে তা কল্পনা করা কঠিন।
অথবা আপনি আব্বু আম্মুর সাথে বা নিজে ডাক্তারের কছে যাচ্ছেন। গাদা গাদা রিপোর্ট কার্ড নিয়ে যাওয়াটা অনেক ঝামেলা। আর হারিয়ে গেলে তো মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই।
এখন ধরুন, ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় মানি ব্যাগ সাথে নিতে হয়না। আইডি কার্ড,এটিএম কার্ড,ক্রেডিট কার্ড সহ হাবিজাবি ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দরকার হয়না।
হ্যা এমনটা বর্তমানে সম্ভব। হাতের ভেতরে একটি মাইক্রোচিপ ব্যাবহার করে। যেটি বিজ্ঞানের ভাষায় বায়োহ্যাকিং টেকনোলজি বলা হয়। সংক্ষেপে বায়ো হ্যাকিং হচ্ছে মানব শরীরের অভ্যন্তরে কোন ডিভাইস বসানো। মাইক্রোচিফ হচ্ছে দেখতে একটি চালের দানার সমান। ছোট্র ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটি আরএফআইডি (RFID-Radio Frequency Identyfication) পদ্ধতি কাজ করে যেটি অনেকটা আমরা যে এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড,ব্যাবহার করি সে একই প্রযুক্তি। শুধুমাত্র এটি হাতের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছে। অনেকটা ভ্যাকসিনের মত। এটি দীর্ঘদিন হাতের মধ্যে থাকলে ও ক্ষতির সম্ভনা কম। Biohax international নামের এক কোম্পানি সুইডেনে কাজ শুরু করছে। এর ফলে সুইডেনে ইতিমধ্যে ৪০০০ মানুষ এটি তাদের হাতে ব্যাবহার করছে। যা গড়ে ১৮০ ডলার খরচ পড়ছে।
এটি কীভাবে কাজ করে? এটি অনেকটা আমরা কিউ আর (QR) কোড ব্যাবহার করে বিকাশ পেমেন্ট করি, ফাইল শেয়ার করি,ঠিক একইভাবে আমরা এটি ব্যাবহার করতে পারব। শুধু যেই হাতে মাইক্রোচিপ আছে তা অন্যান্য মাইক্রোচিপ ডিভাইস আইডেন্টিপাই করতে পারে এমন ডিভাইসের সামনে ধরে রাখলে কাজ হয়ে যাই। খুবই সহজ।এই প্রযুক্তির সুবিধাসমূহ ইতিমধ্যে গল্প আকারে বললাম।
মাইক্রোচিপের চ্যালেঞ্জ সমূহঃ
ইনফেকশনঃ
অদক্ষ কোন ফিজিশিয়ান দিয়ে এটি ইমপ্লিমেন্ট করা হয় এবং সঠিকভাবে তা শরীরে ভেতর প্রবেশ করানো না হয় তাহলে অনেক সময় ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
এমআরআই মেশিনঃ
যেহেতু এমআরআই স্ক্যানার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহার করে, তাই যে সকল রোগীর শরীরের ভিতরে medical implant (ইলেক্ট্রনিক অথবা চৌম্বকীয় ধাতব) বস্তু বসানো আছে তাদের এমআরআই স্ক্যান করা চলবে না। এতে মেডিকেল ডিভাইসটি তার স্থান থেকে সরে যেতে পারে/ অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হতে পারে/ ছবির মানে হস্তক্ষেপ করতে পারে বা ডিভাইসটির কাজ প্রভাবিত হতে পারে। যদিও মাইক্রোচিপের ক্ষেত্রে এমআরআই মেশিনে স্ক্যান করার সময় কোন সমস্যা হবে কিনা এ ব্যাপারে এখনও কোন স্পষ্ট উত্তর জানা নেই; তবু অনেকে ধারণা করছেন এর ফলে ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ভিত্তিক ইমপ্লান্টগুলিতে সামান্য উপাদান রয়েছে যা ক্ষয় হতে পারে। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইমপ্লান্টগুলিতে প্রায়শই ভলিউম অনুসারে ধাতব উপাদানগুলির প্রচুর পরিমাণ থাকে ও অক্সিজেন এবং জলের মতো সাধারণ উপাদান দ্বারা ক্ষয় হয়।
মাইক্রোচিপের ক্ষয় তখনই ঘটে যখন এই উপাদানগুলি এনক্যাপসুলেশন প্রকিয়ায় মানবদেহের ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, যা ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে পারে যদি তা চৌম্বকের সংস্পর্শে আসতে দেয়া হয়। সর্বনাশা এনক্যাপসুলেশন ব্যর্থতা সাধারণত স্পষ্ট হয়, যার ফলে কোমলতা, ত্বকের বিবর্ণতা এবং কিছুটা প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছোট ব্যর্থতাগুলি সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে অনেক বেশি সময় নিতে পারে, ফলস্বরূপ অনেকগুলি বাহ্যিক চিহ্ন ছাড়াই ক্ষেত্রের শক্তি ধীরে ধীরে অবনতি হয়।
অসুবিধা সমূহ :
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিঃ
ক্যান্সার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সংক্রান্ত একটি স্ব-প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যান্টি-আরএফআইডি অ্যাডভোকেট ক্যাথরিন অ্যালব্রেক্ট, যিনি আরএফআইডি ডিভাইসগুলিকে “গুপ্তচর চিপস” বলে উল্লেখ করেছেন, তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ ইঁদুর ও কুকুরের এর উপর গবেষণার ভিত্তিতে জানান, যে স্থানে মাইক্রোচিপ ইনজেকট করা হয়েছে, সেখানে ক্যান্সারের টিউমার ডেভেলপ করছে। যদি এ দাবির বিপরীতে অনেক বিজ্ঞানী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, কুকুরের ঐ ঘটনার সাথে মানবদেহের কোন সম্পর্ক নেই।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও হ্যাকিং এর ঝুঁকিঃ
মাইক্রোচিপগুলি তাদের ধারকদের সম্মতি ছাড়াই অপ্রত্যাশিত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কর্মীদের দরজা খোলার জন্য এবং মধ্যাহ্নভোজের জন্য অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত একটি মাইক্রোচিপ পরে কর্মচারী বাথরুম এবং মধ্যাহ্নভোজের বিরতির দৈর্ঘ্য গোপনে ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হত, ফলে তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হত।
ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপঃ
এটি কোন ব্যাক্তিকে শরীরে প্রবেশ করাতে বাধ্য করা হলে এবং পরে তার উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হলে,ঐ ব্যাক্তির ব্যাক্তি স্বাধীনতা নষ্ট হয়। ইন্দোনেশিয়া সম্প্রতি, যৌন অপরাধী(sex offender) উপর RFID প্রযুক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই চিপের অনেক সুবিধা যেমন কার্ডে একসেস পাওয়া, বিল রিসিভ ও পেমেন্টে ব্যাবহার করা, ক্রিপটোকারেন্সি এবং ট্রাবেল কার্ড হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। তেমনি কিছু ঝুঁকি ও অসুবিধা আছে। যেমনঃ এই চিপ হাতের মধ্যে থেকে সরে গিয়ে শরীরের অন্য কোথা ও চলে যেতে পারে। এটি হতে ইনফেকশন হওয়া, স্বাধীনতা ও ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্গন হতে পারে।হ্যাকিংয়ের সমস্যা তো আছেই।
References:
1)https://biohax.tech/
2)https://www.dailymail.co.uk/sciencetech/article-6306569/amp/Thousands-Swedes-getting-microchip-IDs-inserted-hands.html
3)https://en.m.wikipedia.org/wiki/Microchip_implant_(human)