‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা ‘ বাচ্চাকালে বইতে অথবা মায়ের মুখে এই কবিতার লাইনগুলো শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু যতই কবিতা শুনে থাকুন বা পড়েই থাকুন না কেন চাঁদ মামা এতই দুষ্টু যে তার ভাগ্নেদের সাথে দেখা করতে পৃথিবীতে তার কখনও আগমনই ঘটে না।
শুধু তাই নয় চাঁদ মামা কিন্তু আমাদের রোজ ধোকা দেয়। সেই ধোকা এতটাই তীব্র যে আজ পর্যন্ত আমরা তার রহস্য সমাধান করতে পারিনি। আচ্ছা কথা না বাড়িয়ে চাঁদ মামার কুকীর্তি আজকে তুলে ধরবো। এর সুন্দর একটা নামও আছে, ‘মুন ইলিউশন‘।
আচ্ছা চাঁদ যখন দিগন্ত বরাবর থাকে অর্থাৎ চাঁদ যখন ওঠে তখন কি ভালো করে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন? চাঁদ কিন্তু অনেক বড় দেখায়, কিন্তু যখন চাঁদ মাথার ওপর চলে যায় তখন খুব ছোট দেখায়। চাঁদ যদি ওই নিদির্ষ্ট সময়ে আমাদের থেকে সমান দুরত্বেই থাকে তাহলে এরকম ছোট বা বড় কীভাবে দেখাতে পারে? একেই মুন ইলিউশন বলে।
সত্যি বলতে এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের এখনও অজানা। প্রাচীনকাল থেকে অনেক বাঘা বাঘা দার্শনিক যেমন প্লেটো,সক্রেটিস সহ আরো নানান বিজ্ঞানী এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিফলই বলা যায়।
তারপরও ৩ টি সম্ভাব্য উত্তর দাড় করানো হয়েছে, বলতে বাকি রাখে না কোনো বিজ্ঞানীই একমত হতে পারেননি এসব উত্তরের ক্ষেত্রে।
তাও চলুন একটু দেখা করেই আসি এই প্রশ্নের উত্তর গুলোর সাথে
১. প্রাচীনকালে ভাবা হত যে আমাদের বায়ুমন্ডল বোধ হয় লেন্স এর মত। তাই চাঁদ ওঠার সময় চাঁদকে এরকম বড় ভাবে আমাদের সামনে প্রদর্শন করে, কিন্তু এই যক্তিটা ধোপেই টেকে না। কারণ বায়ুমন্ডল উত্তল, তাহলে আমাদের বায়ুমন্ডল চাঁদকে বড় না দেখিয়ে ছোট দেখাতো। কিন্তু হচ্ছে তো উল্টোটা৷ তাই এই যুক্তি আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। আর চাঁদকে পরিমাপ করলে সবসময় একই সাইজ পাওয়া যাবে। চাঁদতো আর বড় ছোট হয় না৷ তার অর্থ দাড়ালো চাঁদের এই ঘটনার পিছনে দায়ী হল অপটিকাল ইলিউশনস। কিন্তু কোনটি? চলুন সেগুলো নিয়েও কথা বলা যাক
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! ঘুমের কার্যকারণ ও ইনসমনিয়া তে মাদকাসক্তির প্রভাব |
২. এবিংহাউস ইলিউশনসঃ এই ইলিউশনে আমারা একই সাইজেই দুটি বস্তুকে ভিন্ন সাইজের দেখতে পাই যার পিছনে দায়ী তাদের পারিপার্শ্বিক বস্তু। একটি কলম এর পাশে যদি ৪টি বড় বড় বই থাকে তাহলে কলমটিকে অনেক ছোট মনে হবে, কিন্তু একই সময় আরেক যায়গায় একটি কলমের সাথে যদি ৪টি ছোট ছোট রাবার থাকে তবে কলমটিকে আগের কলমের তুলনায় বড় লাগবে। যদিও কলম ২টির সাইজ আসলেই এক৷ একেই মূলত এবিংহাউস ইলিউশনস বলে।
সুতরাং চাঁদকেও একইভাবে দিগন্তরেখায় থাকা অবস্থায় বড় লাগতে পারে কারণ এখানে অনেক গাছপালা,বিল্ডি আছে। তাই এই কারণে চাঁদকে আপেক্ষিক ভাবে বড় লাগতেই পারে। কিন্তু যখন চাঁদ মাথার ওপর চলে যায় তখন তো আর এই গাছপালা বিল্ডিং থাকে না। তাই আসলে এটাও ভুল৷ কারণ বিমানচালক, জাহাজের নাবিক সহ আরো অনেকেই যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা বলেছেন যে তারাও চাঁদকে দিগন্তে বড় দেখতে পান৷ কিন্তু সেখানে তো গাছপালা বিল্ডিং নেই। তাহলে?এই সমস্যার জন্য তাই এই ইলিউশান কার্যকরী নয়।
৩. পনজো ইলিউশনঃ ছবি একেছেন কখনো? সবাই আঁকে কম বেশি। ধরে নিলাম এঁকেছেন। যখন কোনো গ্রামের ছবি আকেন তখন কি করেন? কাছের জিনিস গুলো বড় দেখান আর দূরের জিনিস গুলো ছোট৷ একই সাইজের দুটি বাড়ির ক্ষেত্রেও দুরত্ব কম বেশি হলেও একই কাজ করি৷ কিন্তু সাইজ তো একই। আগে পিছে বলে ছোট বড় লাগে৷ আবার রেললাইনের কথাও ভাবতেএ পারেন। রেল লাইনের দিকে তাকালে দেখবেন যে সামনের দিকে খুটি গুলো পিছনের দিকের খুটির তুলনায় তুলনামূলক ভাবে ছোট। কিন্তু যদি মাপতে পারেন তবে দেখবেন যে আসলে দুই খুটিই সমান।
একেই পনজো ইলিউশনস বলে। তাহলে এটিই কী আমাদের প্রশ্নের উত্তর? দুঃখজনক ভাবে না। কারণ নভোথিয়েটারের মধ্যে যেখানে পুরো দিগন্ত সহ আকশের সবকিছুকে বৃত্তাকার ভাবে দেখানো হয় সেখানেও চাঁদকে বড়ই দেখা গেছে। চাইলে বাংলাদেশের নভোথিয়েটার থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণিতে পাবেন নভোথিয়েটারের দেখা। কিন্তু যেহেতু সেখানে ছোট দেখানোর কথা ছিল কিন্তু তা দেখায় নাই তাই বলা যায় এটাও আমাদের প্রশ্নের উত্তর না।
আচ্ছা এই রহস্য ভেদ না হলেও আমরা কী চাঁদকে কোনোভাবে ছোট দেখতে পারিনা?
অবশ্যই পারেন। মোবাইল ফোন নিয়ে ছবি তুলতে নেমে পড়ুন। দিগন্তে থাকাকালীন এবং মাথার ওপর থাকাকালীন দুইটি ছবি তুলুন। কী চাঁদ কী ছোট হয়েছে? মজার বিষয় চাঁদকে দুই ছবিতেই সমান আকারের মনে হবে। কিন্তু একই সময় খালি চোখে চাঁদকে দুইটি ভিন্ন আকারে দেখতে পারবো।
শুধু তাই নয় আমরা ইচ্চা করলে দুই আঙুলের ফাক দিয়েও চেষ্টা করে দেখতে পারি। এই ক্ষেত্রেও সমান ফলাফল পাবো। তবে সবচেয়ে মজার পরীক্ষাটি হচ্ছে উল্টো হয়ে দেখা৷ চাঁদের উল্টোদিকে ঘুরে মাথা সামনে নুইয়ে দুই পায়ে মাঝখান দিয়ে চাঁদকে দেখার চেষ্টা করুন। দেখবেন চাঁদ আর বড় নেই। মাথার ওপরে থাকা অবস্থায় যেমন লাগে তেমনি দিগন্তের কাছে লাগছে। যা সত্যিই অবাক করার মতই একটি বিষয়।
তাহলে আসলে ঘটছেটা কী?
সত্যি বলতে বিজ্ঞানীরাও আজ পর্যন্ত এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই রহস্য আমাদেরকে ভাবিয়েই চলেছে। হয়তো ভবিষ্যতে আমরা এই রহস্য উদঘাটন করতে পারব। রহস্য উদঘাটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে বিদায়। ভালো থাকবেন। সামনে হাজির হবো নতুন কোনো ব্লগ নিয়ে।