খুব সম্ভবত ক্লাস ৬ থেকে শুরু হয় আমাদের অবজেক্টিভ আর সাবজেক্টিভের যাত্রা, বাংলায় যেটা আমরা বলি নৈব্যক্তিক আর সৃজনশীল।
সৃজনশীল অর্থ আমরা কম বেশি সকলেই জানি। আর নৈব্যক্তিক বলতে যা বুঝতাম যে এটা একটা কুইজ যেখানে ৪ টা অপশন থাকবে আর আমরা সঠিক উত্তরটা দাগাবো; আর এটাই আমাদেরকে এতদিন যাবৎ বোঝানো হয়েছে আর আমরা এটাই বুঝে আসছি।
কিন্তু, এই নৈব্যক্তিক মানে কি তাই? না, এর একটি সুন্দর অর্থ রয়েছে। তা হলো এটি ব্যক্তিনিরপেক্ষ অর্থাৎ ব্যক্তিসম্পর্কিত না। যেমনঃ ২+৬=কত? এর উত্তর ৮। এটা আমরা সবাই জানি এবং মানি; এক্ষেত্রে কোনো দ্বিমত বা নিজস্ব মত নেই। কিন্তু এখন যদি বলা হয়, যোগের কতগুলো উদাহরণ দাও সেক্ষেত্রে কিন্তু ব্যক্তি তার নিজ ইচ্ছা মত উদাহরণ লিখতে পারে, ব্যক্তি বিশেষে এর উত্তর ভিন্ন ভিন্ন হবে আর এটাই হলো সাবজেক্টিভ।
এখন কথা হঠাৎ করে নৈব্যক্তিক নিয়ে এত কথা কেনো?
উত্তরঃ ক্রিটিকাল থিঙ্কিং।
ছোটবেলা থেকে যা শিখানো হয়, বোঝানো হয়, আমরা অনেকেই সেই ধারণার মধ্যেই থাকি; তবে হ্যাঁ, কেউ কেউ আছে এর ব্যতিক্রম। এই যেমন নৈব্যক্তিক এর মানে যা বোঝানো হয়েছে, তাই বুঝে বসে আছি, নিজে থেকে তা আর জানার চেষ্টা করি নি অর্থাৎ সেলফ-লারনিং এর যথাযথ ব্যবহার আমাদের মধ্যে নাই। সত্যিই অবাক করার মতো বিষয় যে, নৈব্যক্তিক এর ধারণা আরো বিস্তৃত।
এখন অনেকে ভাবতে পারেন এতে অবাক হওয়ার কি আছে ?
উত্তরঃ এটা ব্যাক্তি নির্ভর আর এই বিষয়ে অনেকেই জানে না।
এরকম ছোটখাটো অনেক জিনিস ই আছে যা আমাদের ধারণার বাইরে। তার মূল কারণ, ক্রিটিকাল থিঙ্কিং বিষয়টা আমাদের মধ্যে তেমন একটা নেই বললেই চলে। অথচ আমাদের অনেকেরই প্রিয় সাবজেক্ট ম্যাথম্যাটিক্স; যেটাতে এই ক্রিটিকাল থিঙ্কিংটাও অনেক জরুরি।
আর এই ক্রিটিকাল থিঙ্কিং এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো স্ব-শিক্ষা অর্থাৎ সেলফ লার্নিং।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! Transfusion associated graft-versus-host disease : কি এবং কেন? |
এরপর যদি বলতে হয় ক্রিটিকাল থিংকিং এর জন্য আর কি করা যায়?
উত্তরঃ কেন?
জি, এর উত্তর টাও একটা প্রশ্ন । কেন এটা হলো? কেন এভাবে হলো না? কেন ঐভাবে করা হলো না? এই প্রশ্নের উত্তর গুলো খুজতে হবে । আর খুজতে গেলেই নিজেরাই অনেক কিছু আবিষ্কার করার এক সুন্দর সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন কথা হলো সেলফ-লার্নিং করে লাভ কি ? এটাই সমস্যা যে আমরা সবসময় লাভ ক্ষতির হিসাব করি । সবসময় সব কিছুর কারণ খুজতে হয় না । অনেকটা অন্য কাউকে ভালোবাসার মতো । ভালোবাসি কেন? ভালো লাগে তাই এর কোন কারণ নাই. সব শেখা জিনিসই বা কেনো কাজে লাগতে হবে? শেখার জন্য শিখব । আর এই শিখার জন্যই স্ব-শিক্ষা কারণ অন্য কেউ আমাদের সবকিছু শেখাতে পারবে না।
![](https://blog.sciencebee.com.bd/ufuchecm/2020/12/critical-thinking-definition-with-examples-2063745-updated2020-10ac813131654257b3e637fe20050ef7.png)
![](https://blog.sciencebee.com.bd/ufuchecm/2020/12/critical-thinking-definition-with-examples-2063745-updated2020-10ac813131654257b3e637fe20050ef7.png)
আমরা বেশিরভাগই কতগুলো বায়াসের মধ্যে দিয়ে যাই । যেমন কগনিটিভ বায়াস , আনকনশাস বায়াস। এই যেমন ধরুন ম্যাথম্যাটিক্স এর বিভিন্ন সূত্র আছে, কিন্তু কোনটা কিভাবে হলো আমরা অনেকেই এটা জানি নাই । যখন এই সূত্র গুলো কিভাবে এলো জানতে চেয়েছি দেখা গেছে এর বেশিভাগ উত্তরই এমন যে, এটা সূত্র, এটা এমনই তোমাদের মুখস্ত করতে হবে অথবা এমনটা শুনেছি যে ওইটা না জানলেও চলবে অথবা এটা জানি না।
এর কারণ কি হতে পারে, নাহয় শিক্ষক নিজেই এটা জানেন বা সে নিজেও কোনোদিন জানতে চায় নি বা পরীক্ষায় আসবে না ভেবে আমাদেরকে শিখায় নি । এই নিয়মটাই বছরের পর বছর চলে আসছে আর আমরাও যদি এর উত্তর না দিতে পারি তাহলে এই নিয়মই চলে আসবে । এই যে আমাদের কে যেভাবে শেখানো আমরা সেইটুকুর মধ্যেই আছি; আমাদের কে যা বোঝানো হয়েছে সেইটুকুর মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছি। অন্যের ধারণাকে নিজের উপর প্রতিফলন করছি।
এ সীমাবদ্ধতা থেকে বের হওয়ার জন্য সেলফ বায়াসড হতে হবে; সেলফ লার্নিং ধারণার বিকাশ ঘটাতে হবে।
এখন আরো একটি উদাহরণ দেই, দ্য টেক একাডেমির সামস জাবের যখন তার প্রজেক্ট শুরু করে তখন প্রথম পদক্ষেপই তিনি ব্যর্থ হন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একটি ক্রেজি আইডিয়া এপ্লাই করেন যে আইডিয়াটা তার নিজস্ব। আমরা ব্যবসায়িক কাজে বা প্রচারণার জন্য লিফলেট বিতরণ করি কিন্তু এতে কি হয় লিফলেট নেয়ার পর কেউ একটু তাকাবে দেখবে জিনিসটা কি পরে গিয়ে ফেলে দিবে অথবা কেউ না দেখেই ফেলে দিবে বা ঠোঙ্গা বানানোর কাজে ব্যবহার করবে। তো দ্য টেক একাডেমির সামস জাবের ভাইয়ার আইডিয়াটা এমন ছিলো যে তিনি তার প্রজেক্ট এর জন্য লিফলেট বিতরণ না করে একটি ছোট খালি কাগজ যেটাতে কোন লেখা নেই এমন কাগজ মানুষকে দিতে শুরু করলেন।
![](https://blog.sciencebee.com.bd/ufuchecm/2020/12/Shams_Jaber.jpg)
![](https://blog.sciencebee.com.bd/ufuchecm/2020/12/Shams_Jaber.jpg)
তো যখন মানুষরা কাগজটার দিকে তাকালেন দেখলেন, এতে কিছুই নেই অর্থাৎ তারা অনেকটা কৌতুহলি হয়ে উঠলো এবং জানতে চাইলো যে কেনো এই সাদা কাগজটা দেয়া হলো; ব্যাস মানুষ নিজে থেকে তার কাছে যাচ্ছে তার প্রজেক্ট সম্বন্ধে জানতে চাচ্ছে। আর তার কথায় মানুষ সেই সাদা কাগজে তাদের নাম আর ফোন নাম্বার লিখে রেখে যাচ্ছে এমনকি তাদের বাচ্চাদের শেখানোর জন্য পাঠাচ্ছে। ও হ্যাঁ তার প্রজেক্ট টা ছিলো এমন যে, তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চান অর্থাৎ শিক্ষা বিষয় টিকে আনন্দদায়ক করতে চান। আরো জানতে চাইলে গুগল ইউটিউব তো আছেই। এখন তার এই আইডিয়াটা ক্রিটিকাল থিংকিং এ পরে কিনা আমি নিশ্চিত না তবে তিনি সাধারণ ধারণা বাইরে গিয়ে নতুন কিছু ভেবেছেন।
“ক্রিটিকাল থিংকিং হলো আমাদের চারপাশ থেকে পাওয়া তথ্য গুলো প্রসেস করা এবং সেখান থেকে অবজেক্টিভ সিদ্ধান্ত নেওয়া। মূলত এমন দিদ্ধান্ত যা কোনো ব্যাক্তি উপর নির্ভরশীল নয়।” – চমক হাসান