আজকের বিশ্বে স্থুলতা (obesity) অতি সাধারণ একটি রোগের নাম । বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে এই রোগের প্রভাব। বাংলাদেশও এর বহির্ভুত নয় । ডব্লি.এইচ ও. এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১৯০ কোটি প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৬৫ কোটি স্থুলতাজনিত রোগে আক্রান্ত ছিল আর ১৯৭৫ খ্রি.থেকে ২০২০ খ্রি.পর্যন্ত দীর্ঘ এই ৪৫ বছরে স্থুলতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। কিন্তু কী এই স্থুলতাটা?
obesity বলতে অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত মেদ জমাকে বোঝায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্থুলতা মানুষের একটি শারীরিক অবস্থা । মানুষের শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করা হয় বি.এম.আই এর মাধ্যমে ।
বি.এম.আই বা বডি মাস ইনডেক্স = ওজন (কেজি ) / উচ্চতা² (মিটার)
বি.এম.আই যদি ২৪.৯ এর উপরে হয় তাহলে তাকে মোটা আর ২৯.৯ এর উপরে হলে তাকে স্থুলতা (obesity)। যাকে অস্বাভাবিক মোটাও বলে।
খাদ্যের উপস্থিত শক্তির মান হিসাব করা হয় ক্যালরিতে।
ক্যালোরি হলো শক্তির একক। কোনও কিছু খাওয়া বা পান করার ফলে শরীর কতটুকু শক্তি অর্জন করে তা বর্ণনা করার একটি উপায়।
বয়স, উচ্চতা ও লিঙ্গ ভেদে প্রত্যেকের ক্যালরি গ্ৰহণের হিসাব আলাদা। ছেলে,মেয়ে,আবাল–বৃদ্ধ দৈনন্দিন কার কত ক্যালরি প্রয়োজন তাও নির্ধারণ করা হয় বি.এম.আই. দ্বারা।
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালরি গ্ৰহন করলে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি রূপান্তরিত হয় চর্বি–তে। পরবর্তীতে চর্বি মেদে পরিণত হয়ে ওজন বৃদ্ধি করে যা স্থুলতা সৃষ্টির কারণ।
জানেন কি? স্থুলতা টাইপ–২ ডায়বেটিক, হৃদরোগ, অনীদ্রা, বাত, ক্যান্সার ও বন্ধ্যাত্বের মত জটিল রোগের প্রধান কারণ।
কথায় বলে,
– “মানুষ না খেয়ে মরে না, খেয়ে মরে“। স্থুলতা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কি বলেন ?
স্থূলতা কিন্তু রাতারাতি হয় না , সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বিকশিত হয় । স্থূলতা একাধিক কারণে হতে পারে । তার মধ্যে নিম্নমানের ডায়েট ও অনিয়ম জীবনযাত্রা অন্যতম। তবে স্থুলতা প্রতিরোধযোগ্য । ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ মরণব্যাধি নিরাময় করা সম্ভব । এর জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে ।যতটুক প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই খাবার খাওয়া উচিত, কেননা অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনে হজমে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া সফট ড্রিংকস, আইসক্রিম, ফাস্টফুড, ডিমের কুসুম, কলিজা, মগজ,গরু খাসি, আলু, মাছের মাথা, মাছের ডিম, দুধের সর, ঘি, ক্রিম, মাখন, পনির, বনস্পতি, মার্জারিন, নারিকেল, মাংসের চর্বি, হাঁস মুরগির চামড়া, চিংড়ি, লাল মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার, পাতে লবণ,পান, জর্দা, ধূমপান ও মিষ্টি জাতীয় সকল খাবার যেমন: চিনি, গুড়, চকলেট পরিহার করুন।
এর পর প্রাত্যহিক অভ্যাসের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করুন। শারীরিক কসরত হজমে সহায়তা করে। তাছাড়া সকালে ওঠার চেষ্টা করুন আর পর্যাপ্ত (বেশি নয়) পরিমাণে বিশ্রাম নিন ।
সর্বশেষে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না। যত পারুন তত পানি পান করুন। তবে কমপক্ষে প্রতিদিন তিন লিটার পানি পান করা উচিত।
আচ্ছা স্থুলতার ফলে কী কী রোগ হয় আর কিভাবে তা নিরাময় করা যায় তার সাধারণ পদ্ধতি জানলাম কিন্তু কেন হয় স্থুলতা? এর কারণ কী? আগেই বলা হয়েছে স্থুলতা রাতারাতি হয় না। এর পিছে রয়েছে অনেক কারণ।
তন্মধ্যে:-
১. অতিরিক্ত ক্যালরি গ্ৰহণে: অধিকহারে খাবার গ্ৰহন স্থুলতার প্রধান কারণ। তাছাড়া ফাস্টফুড, চিনি জাতীয় খাবার বা অতিরিক্ত মদ পানেও স্থুলতা হয়।
২. অপর্যাপ্ত শারীরিক কসরত : হজমে সমস্যার কারণেও স্থুলতা হয়। আর শারীরিক কসরত হজমে সাহায্য করে।
৩. হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েড জনিত সমস্যা থাকলে স্থুলতা হয়। তাছাড়া লেপটিন, ইনসুলিন, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেনও দায়ী। এই ধরনের সমস্যা থাকলে অতিসত্ত্বর কোনো হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
তাছাড়া,
মাসিক চক্র, পেরিমেনোপজ (মেনোপজের পূর্ব অবস্থা, সাধারণত প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর স্থায়ী হয়) , মেনোপজ (এই পর্যায়ে নারীর মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়), বিপাক ক্রিয়ার হ্রাস, ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, নির্ঘুম, মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বেগ ও ধূমপান বন্ধ করার কারণে– ওজন বৃদ্ধি পায়।
অথবা খিঁচুনি, ডায়েবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, হতাশার মতো রোগের জন্য ঔষধ গ্ৰহন করলেও স্থুলতা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ওজন কমার সাথে স্থুলতার ক্ষতিকারক প্রভাব কমে গেলেও, সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব না।
গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ রোগী ৫ বছরের মাথায় আবারও স্থুলতাজনিত রোগের সম্মুখীন হয়। তাই সাবধান থাকা উচিত।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন :
প্রশ্ন ১: স্থুলতা জন্য কোন ধরনের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা উচিত?
উত্তর: ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অনেক ধরনের খাদ্য তালিকা পাওয়া যায়। ওজনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সেগুলো অনুসরণ করতে পারেন, কিন্তু ওজন যদি অতিরিক্ত হয় এবং তা যদি কমাতে চান, সেক্ষেত্রে ডায়েবেটিক রোগীদের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে পারেন।
প্রশ্ন ২ : জিমে গিয়ে ব্যায়াম করলে কী ওজন কমানো যায়?
উত্তর : অনেকের ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও অনেকের ক্ষেত্রে হয় সম্ভব হয় না। জিমে গিয়ে ব্যায়াম করায় দেহ অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তাছাড়া অতিরিক্ত গ্লাইকোজেন উৎপাদন হয়, অতিরিক্ত উৎপাদন হলেও কাজে লাগে কম পরিমাণে আবার যারা জিম এ যায় তাদের খাদ্য তালিকায় উচ্চ–ক্যালোরি ডায়েট থাকে, জিম এ যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য পেশী বাড়ানো। পেশি বাড়ার সাথে, মেদ কমলেও ওজন কিন্তু একই রয়ে যায়।
প্রশ্ন ৩. ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজে দেয় ?
ডাক্তারের পরামর্শ ওষুধ খাওয়া উচিত তবে জেনোবিজ ১২০ (xenobase 120) চেষ্টা করতে পারেন।
ও ল্যাব এইডের হরমোন বিশেষজ্ঞ