নানান জনের কাছ থেকে “আইকিউ (IQ)” শব্দটি শুনেছেন। আইকিউ সম্পর্কে আমাদের অনেকের সাধারণ ধারণা হচ্ছে এটি দ্বারা মানুষের মেধা যাচাই করা হয়। তো এই ধারণা টুকুই আরেকটু বিস্তারিত ভাবে লেখা যাক। এর ইংরেজি পূর্ণ্রুপ এর বাংলা করলে দাঁড়ায় “বুদ্ধ্যাংক”।
বুদ্ধ্যাংক বা আইকিউ (ইংরেজি: Intelligence quotient বা IQ), বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন করতে পরিকল্পিত বিভিন্ন প্রমিত পরীক্ষার একসঙ্গে প্রাপ্ত ফলাফল। ইংরেজি শব্দটি মূলত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম স্টার্ন কর্তৃক উদ্ভাবিত জার্মান শব্দ Intelligenz-Quotient থেকে নেয়া হয়েছে।
আইকিউ বা বুদ্ধ্যাংক মূলত মানসিক বয়স ও প্রকৃত বয়সের একটি অনুপাত মাত্র। মানসিক বয়সকে প্রকৃত বয়স দিয়ে ভাগ করে ১০০ দ্বারা গুণ করলে বুদ্ধ্যাংক পাওয়া যায়। এই লিখিত অংকের একটি সূত্র প্রদান করা যায় যেটি এরকম-
আইকিউ= (A÷B) ×100
এখানে A= মানসিক বয়স এবং B= প্রকৃত বয়স ধরে সূত্রানুযায়ী বুদ্ধ্যাংক বের করা যায়। জেনে রাখা ভাল, এখানে এই ১০০ কিন্ত একটি ধ্রুবক। এখানে ভগ্নাংশ যাতে স্কিপ করা যায় এর জন্য এই ১০০ দ্বারা গুন করে একটি পূর্ণ সংখ্যা বানানো হয়েছে। এখন মানসিক বয়স সম্পর্কে জানব।
মানসিক বয়স বলতে কয়েকটি বয়স অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে এবং ওই বয়স টি কেই মানসিক বয়স হিসেবে ধরা হবে। যেমন একজন ৫ বছর বয়সী বাচ্চার জন্য প্রশ্ন- “কয়েকটি প্রকৃতির যানবাহন দেখানো হবে যেখানে ১ টা ট্রাক, ১ টা বাস, ১ টা ট্যাক্সি এবং ১ টি সাইকেল দেখানো হলো এবং জিজ্ঞাসা করা হলো যে এখানে কোন যানবাহন টি অপর ৩ টির চেয়ে আলাদা?”
তো এটি কিন্ত একটি ৫-৬ বছর বাচ্চার প্রশ্ন। এবং একজন ৫-৬ বছর বয়সী বাচ্চা এটির সঠিক উত্তর দিতে পারলে তার মানসিক বয়স ৫-৬ বছর ধরে নেয়া হবে এবং যদি ৩-৪ বছরের কেউ এটির উত্তর দিতে পারে তাহলে তার মানসিক বয়স ৫-৬ ধরে নেয়া হবে প্রশ্নানুযায়ী। আর প্রকৃত বয়স তো প্রকৃত বয়স-ই।
আমরা এই সূত্র কে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরটা বের করতে পারবো। এক্ষেত্রে জেনে নিতে হবে কত আইকিউ কতটা রেয়ার। বিশ্বে প্রায় ৩ ভাগের ২ ভাগ ৮৫ থেকে ১১৫ এর মাঝামাঝি স্কোর করে, এছাড়াও মাত্র ২.৫% মানুষ ১৫০ এর উপরে স্কোর করে এবং ২.৫% ৭০ এর নিচে স্কোর করে বলে জানা যায়।
তো আমরা মোটামুটি আইকিউ সম্পর্কে ধারণা পেলাম। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে আইকিউ টেস্ট করাবেন। মূলত, আইকিউ টেস্ট সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহজেই করানো যায়।
এছাড়াও, আইকিউ টেস্ট এর ব্যপক চাহিদার কারণে এখন এটি অনলাইনেও খুব সহজে টেস্ট করানো যায়। আপনারা চাইলে খুব সহজেই কোনো প্রতিষ্ঠান হতে অথবা অনলাইন কোনো ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আপনার নিজস্ব আইকিউ টেস্ট করাতে পারেন।
তবে মনে রাখবে, এ পরীক্ষার ফলাফলই শেষ কথা নয়!মানুষ কোনো যন্ত্র নয়। তাই শুধু সংখ্যা দিয়ে একটা মানুষকে বিচার করার অবকাশ নেই। যদিও এসব পরীক্ষা মানুষের বুদ্ধিমত্তার কিছুটা পূর্বাভাস দিতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, এসব পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই মিতব্যয়ী এবং সতর্ক হতে হবে।আমরা আইকিউ টেস্ট কে কোনোভাবেই রিয়েল লাইফে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবো না।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না ! বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান গ্র্যান্ডির সিরিজ: একটি রহস্যময় সিরিজের গল্প |
আর যদি সেটা হয় অনলাইন টেস্ট তাহলে তো কথাই নেই।বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এটি কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা আরো বলেন, আইকিউ পরীক্ষাগুলো মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিমাপ করে এবং সেটি মোটামুটিভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং কর্মজীবনে সাফল্যের পূর্বাভাস দিতে পারে। তবে সে পূর্বাভাস অসম্পূর্ণ এবং ততটা ভরসার যোগ্য না-ও হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর মানবিক চিন্তাশৈলী এবং মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ দক্ষতা আইকিউ দ্বারা বিচার করাই যথেষ্ট নয়। তাই বুদ্ধিমত্তা নির্ণয়ে আইকিউ টেস্টই সবকিছু নয় বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞানীরা। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, এই আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিশ্বে রচিত হয়েছে এক কালো অধ্যায়। সে সময় বিশ্বের অনেক গুন্যমান্য ব্যক্তিরাই ইউজেনিক্সে বিশ্বাস করতো যার ফলস্বরূপ এই আইকিউ টেস্ট এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিলো।
আরো অবাক বিষয় হচ্ছে, ভার্জিনিয়ায় ১৯২৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত নিম্ন আইকিউ’র অজুহাতে প্রায় ৭,০০০ লোককে বিভিন্নভাবে প্রজননে অক্ষম করা হয়। নাৎসি শাসিত জার্মানিতে কম আইকিউ সম্পন্ন শিশুদের হত্যার অনুমতি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মানবাধিকার আন্দোলনের প্রভাবে আইকিউ বিচার করে মানুষকে শ্রেণিভুক্ত করা কমে আসে এবং ২০০১ সালে এটিকে বর্নবাদী আখ্যায়িত করে ভার্জিনিয়া এই অভিশাপের দরজা বন্ধ করে দেয়।