ডিপ্রেশন কী?
– ডিপ্রেশন (বড় ধরণের অবসন্নতা ব্যাধি) একটি সাধারণ এবং গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যসংবলিত অসুবিধা,যা একজন ব্যক্তির অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
তবে সুখবর যে, এটি চিকিৎসাযোগ্য। হতাশা আমাদের মনে দুঃখের অনুভূতি অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি কোনো ব্যক্তির প্রথমবার উপভোগ করা কোনো কাজে আগ্রহ হ্রাস করে। এটি বিভিন্ন ধরণের সংবেদনশীল এবং শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও অফিসে কিংবা বাড়িতে কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। আমরা এখানে ডিপ্রেশনকে হতাশা হিসেবে উল্লেখ করবো।
হতাশার লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
* খারাপ লাগা বা হতাশ মেজাজ থাকা।
* কোনো ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ কিংবা আনন্দের ঘাটতি সৃষ্টি হওয়া।
* ক্ষুধায় পরিবর্তন এবং ওজন হ্রাস,যা ডায়েটিংয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়।
* ঘুমাতে সমস্যা হয়।
* শারীরিক শক্তি হ্রাস বা অবসন্নতা
* উদ্দেশ্যহীন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি, যেমন:হাতের কাঁপুনি কিংবা বক্তৃতায় গতি কমে যাওয়া। (অন্যদের দ্বারা পর্যবেক্ষণযোগ্য ক্রিয়া)
* অকর্মক্ষম বা নিজেকে দোষী বোধ করা।
* জটিল চিন্তাভাবনা, মনোনিবেশ করা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অক্ষমতা।
* মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা।
কেউ ডিপ্রেশনে আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য লক্ষণগুলি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
এছাড়াও, শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতাজনিত কারণ যেমন, থাইরয়েড সমস্যা,মস্তিষ্কের টিউমার বা ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও হতাশার লক্ষণগুলি প্রকাশিত হতে পারে।
হতাশা যে কোনও বয়সে বিশেষ করে ১৫ বছর বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অন্তত ৬.৭% এর মধ্যে প্রকাশ ঘটতে পারে। সেই সাথে অন্তত ছয়জনের মধ্যে একজন তাদের জীবনের কোনো এক সময় হতাশার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। হতাশা যে কোনও সময় আঘাত হানতে পারে,তবে গত শতাব্দীর বিশ এর দশকের মধ্যভাগে এটি প্রথম আলোচনায় আসে।
পুরুষদের চেয়ে মহিলারা হতাশা কিংবা ডিপ্রেশনে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ,এক তৃতীয়াংশ মহিলা তাদের জীবদ্দশায় একটি বড় হতাশাজনক ঘটনা উপলব্ধি করেন।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !! প্রকৃতির দেবদূত প্রজাপতিঃ যা কিছু অজানা এবং অচেনা (১ম পর্ব) |
দুঃখ বা শোক,প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো বা সম্পর্কের অবসান হওয়া একজন ব্যক্তির পক্ষে সহ্য করা কঠিন অভিজ্ঞতা। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানান দেয়া মস্তিষ্কপ্রসূত দুঃখ বা শোকের অনুভূতিগুলির পক্ষে স্বাভাবিক। যারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা প্রায়শই নিজেকে “হতাশ” বলে বর্ণনা করেন।
তবে দু: খিত হওয়া হতাশার মতো নয়। শোকের প্রক্রিয়া প্রতিটি ব্যক্তির জন্য প্রাকৃতিক এবং অনন্য। আর হতাশার ক্ষেত্রে একই বৈশিষ্ট্যগুলি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
যেমন:
- শোকের মধ্যে, বেদনাদায়ক অনুভূতিগুলি উঠে আসে, প্রায়শই মৃত ব্যক্তির ইতিবাচক স্মৃতি মনে জাগ্রত হয়। অপরদিকে,ডিপ্রেশনের জন্য ফুরফুরে মেজাজ এবং কাজের প্রতি আগ্রহ (আনন্দ) বেশিরভাগক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের জন্য হ্রাস পায়।
- শোকের মধ্যে সাধারণত আত্মসম্মান বজায় থাকে।কিন্তু ডিপ্রেশনের মধ্যে অযোগ্যতা এবং নিজের প্রতি ঘৃণার অনুভূতিগুলি প্রকট হয়।
- কিছু লোকের জন্য, প্রিয়জনের মৃত্যু ডিপ্রেশনের পর্যায়ে চলে আসতে পারে। চাকরি হারানো বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া বা বড় বিপর্যয় কিছু লোকের হতাশার কারণ হতে পারে।
- যখন শোক এবং হতাশা সহাবস্থান থাকে, তখন শোকটি আরও তীব্র হয় এবং হতাশা ছাড়াই শোকের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। শোক এবং হতাশার মধ্যে কিছুটা মিল থাকা সত্ত্বেও, তারা আলাদা। তাদের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করা গেলে লোকদের তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ডিপ্রেশন বা হতাশার জন্য ঝুঁকির কারণগুলো:
হতাশা যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে – এমন কি এমন ব্যক্তিকে,যে তুলনামূলক উত্তম পরিস্থিতিতে জীবনধারণ করে। আপনি হয়তো দেখছেন, একজন ব্যক্তি সবসময় হাসিখুশি ভাব বজায় রেখে চলছে। কিন্তু সেও হতাশার মতো মারাত্মক মানসিক ব্যধিতে আক্রান্ত থাকতে পারে।
বিভিন্ন কারণ হতাশা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে:
- বায়োকেমিস্ট্রি: মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলিতে অবদান রাখতে পারে।
- জিনতত্ত্ব: পারিবারিকভাবে হতাশা চলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অভিন্ন দুইটি যমজের মধ্যে কোনো একজন যদি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে অন্যজনের জীবনে কোনও না কোনো সময় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে।
- স্বকীয়তা: স্ব-স্ব-অবস্থানে অটল স্বল্প লোকেরা, যারা সহজেই অতিরিক্ত মানসিক চাপ পড়লে ক্লান্ত হন, বা যারা সাধারণত হতাশাব্যাঞ্জক হন, তাদের ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়।
- পরিবেশগত কারণ: সহিংসতা, অবহেলা, অপব্যবহার বা দারিদ্র্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিচক্র কিছু লোককে ডিপ্রেশনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আগামী পর্বে আলোচনা করবো ডিপ্রেশন এর চিকিৎসা ও এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে।