একটি ধাঁধা এবং একটি সমস্যা নিয়ে আজকের লেখাটি !!!!
১.সুখ-নগর ও দুঃখ নগর
আজ একটি ধাঁধা নিয়ে আলোচনা করা যাক।এটি অসাধারণ একটি ধাঁধা।আপনারা যারা এই সমাধানটি দেখতে চান না তাহলে সমস্যাটি দেখেই সমাধান করার চেষ্টা করুন।আর আগে থেকেই জানা থাকলে তো ভালোই।তবে,এই ধাঁধায় একটি সমস্যা হলো এর উত্তর বলে দিলেও সহজে বোঝা যায় না কেন এমন হলো।তো আজকে উত্তরটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
সমস্যা:
হাবলুকে তার চাচাতো ভাই বলতে লাগলেন,একটি রাস্তা সামনে গিয়ে দুটি ছোট রাস্তায় বিভক্ত হয়ে গেল।এবং এই দুটি রাস্তার মাথায় দুটি গেইট আছে।এবং গেইটে দুজন দারোয়ান আছেন যাদের একজন সবসময় সত্যি কথা বলে এবং অপরজন সবসময় মিথ্যা কথা বলে।আবার তুই এও জানিস না যে কে মিথ্যা কথা বলে আর কে সত্য কথা বলে।গেইট গুলোর একটি হলো সুখ নগরের ও অপরটি হলো দুঃখ নগরের।তো একটি হাবলুকে তার চাচাতো ভাই বললো,তুই কি সুখ নগরে যেতে পারবি?
হাবলু বললো এ আর কঠিন কি কাজ?দুজনকে গিয়ে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেই তো হয়।তখন হাবলুর চাচাতো ভাই বললেন যে,না এভাবে হবে না তোকে একবারই যেকোনো একটি রাস্তায় গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে এবং গিয়ে ঐ গেইটের দারোয়ানকে একটি মাত্র প্রশ্ন করতে পারবি।যেহেতু তুই জানিস না কোনটি সুখ নগর আর কোনটি দুঃখ নগরের রাস্তা।তখন হাবলু বললো এ আবার কেমন কথা?
ধুর ছাই, আমি আর যামুই না!
হাবলু না পারলেও দেখি আমরা কিভাবে যেতে পারি।
এখন সমাধান দেখে নেয়া যাক:
সমাধান:
যখন হাবলুকে সমস্যাটি বলা হলো তখন হাবলু হয়তো মূল রাস্তার মাথায় কিংবা ঘরের মাঝে।এখন আমরা ভাববো কিভাবে একটি মাত্র কথার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঐইইটাই সুখ নগরের রাস্তা?প্রথমেই উত্তরটি দেখে নিই।প্রশ্নটি হলো”এই যে দারোয়ান ভাই আমি যদি ঐ দারোয়ানকে বলি যে সুখ নগরের রাস্তা কোনটি তখন উনি কি বলবেন?”
এই প্রশ্ন করার পর দারোয়ান যে উত্তর দিবে তার উল্টোটা হবে সঠিক উত্তর।এই যে উত্তরটি ,এটা থেকে আসলে ভালো বোঝা যায় না যে,কোন দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করবো।কিংবা কেনইবা এই প্রশ্ন করবো?আর উত্তর কেন উল্টো হবে?এই বিষয় গুলো বুঝলেই আমরা উত্তরটি বুঝতে পারবো।
আপনিও সুখ নগরে যেতে চান ফলে আপনিও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন বা একেবারে খাতা কলম নিয়ে বসেছেন।আপনি পণ করেছেন যে,আমি সুখ নগরে যাবোই।তো প্রথমে উত্তরটির দিকে তাকানো যাক,এখানে কিন্তু কোন দারোয়ানের কাছে যাবেন সেটা মূল বিষয় না, আপনার প্রশ্নটাই মূল।
ধরুন,প্রথমে গেলেন আপনি যে মিথ্যা কথা বলে তার কাছে(আপনি কিন্তু জানেন না যে কে মিথ্যাবাদী আপনি হিসেবের সুবিধার জন্য ধরে নিচ্ছেন যে ,সুখ নগরের দারোয়ান মিথ্যাবাদী)।আপনি তাকে গিয়ে যখন বলবেন যে ভাই,আমি যদি ঐ দারোয়ানকে বলি যে সুখ নগরের রাস্তা কোন দিকে তখন ঐ দারোয়ান কি বলবেন?এখন সে তো মিথ্যাবাদী তাই সে ঐ দারোয়ানের সত্য উত্তরটাকে সে মিথ্যা করে বলবে যে, ঐ রাস্তাটা।কেননা ঐ দুঃখ নগরের দারোয়ান সত্য কথা বললে বলবে যে, এইটাই।কিন্তু এই দারোয়ান এই সত্যটাকেই মিথ্যা বলবে।
এখন আপনি গেলেন দুঃখ নগরের দারোয়ানের কাছে(আপনি কিন্তু এখনো যাননি।হিসেব কষছেন মাত্র)।গিয়ে সেইম প্রশ্নটাই করলেন।তখন এই দারোয়ান ঐ মিথ্যাবাদী দারোয়ানের মিথ্যা কথাটাই বলে দেবে কেননা,ঐ দারোয়ানটা তো মিথ্যাই বলবে।এবং এই দারোয়ান তার মিথ্যা কথাটাই বলবে।কেননা সে সত্যবাদী,ফলে এই দুঃখ নগরের দারোয়ান বলবে যে,এটাই সুখ নগরের রাস্তা।
দেখলেন,আপনি দুটি জায়গায় এই প্রশ্ন করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালেন।সেটি হলো মিথ্যা উত্তর তাই আপনি আগে আগেই হিসেব করে বুঝে গেলেন যে, হুমম আমাকে এই একটিমাত্র প্রশ্ন যেকোনো একজনকে করলেই আমি তার বিপরীত রাস্তায় গেলে সুখ নগর পেয়ে যাবো।
আবার যদি সুখ নগরের দারোয়ান সত্যবাদী হয় এবং দুঃখ নগরের দারোয়ান মিথ্যাবাদী হয়।তখন কি ভিন্ন হয়ে যাবে?
না সেটিও হবে না।আপনি আগের প্রশ্নগুলো করতে থাকুন।দেখবেন যে ফলাফল একমুখী আসবে।পরে আপনাকে অপর পথটাই বেছে নিতে হবে।
২.ফাইনম্যানের আবদ্ধ আঁকাবাঁকা তারঃ
রিচার্ড ফিলিপস্ ফাইনম্যান ছিলেন একজন বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ।তিনি খুবই মজার মানুষ ছিলেন।তিনি এমআইটি আর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।একদিন প্রিন্সটনে থাকা কালে তিনি ওখানকার একজন গবেষককে একটি প্রশ্ন করলেন যে,আচ্ছা আপনি যদি একটি আবদ্ধ আঁকাবাঁকা তারকে একটি সরু কাঠি দিয়ে একহাত দিয়ে ঘুরান এবং অন্যহাত দিয়ে আরো একটি সরু কাঠি নিয়ে এই ঘূর্ণায়মান তারের সাথে স্পর্শ করে সেটি ঘুরাতে থাকেন তাহলে ঐ স্পর্শ বিন্দুতে ঢালের মান কত?
এর উত্তর আপনারা ইচ্ছে করলে বের করতে পারেন।না পারলে সমাধান দেখুন,
সমাধান:প্রথমত এটি যেহেতু একটি আঁকাবাঁকা তার তাই এর ঘুর্ণন ব্যাসার্ধ সব জায়গায় সমান হবে না।অর্থাৎ একেক দূরত্বে কম আবার বেশি হবে।যেহেতু অপর কাঠিটিকে এটি স্পর্শ করে চলছে তারমানে ঐ বিন্দুটাই ঘুর্ণনকেন্দ্র থেকে সবচে দূরে অবস্থিত।কেননা এর চেয়ে কম হলে তো তারটি ঘুরতে পারতো না।এখন এটি স্পর্শ করে ঘুরতে থাকায় ঐ বিন্দুতে স্পর্শকটি X অক্ষের সমান্তরাল।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! এডোবির যত সফটওয়্যার ও তাদের ব্যবহার-পর্বঃ১ |
সমান্তরাল হওয়ার কারণ,ঘূর্ণায়মান তারটির যে বিন্দুটি ঐ কাঠিটিকে স্পর্শ করছে সেটি যদি কাঠির ঐ বিন্দুটির সমান্তরাল না হয়ে সামান্য একটি কোণ উৎপন্ন করতো তাহলে আর ঘুরতে পারতো না।এখানে তারটি ঘূর্ণায়মান হওয়ায় ঐ স্পর্শ বিন্দুটি থেকে তারের কেন্দ্রের দিকে অক্ষটি হলো Y অক্ষ।এবং স্পর্শক বরাবর অক্ষটি হলো X অক্ষ।ফলে তাদের মধ্যবর্তী কোণের মান শূন্য ডিগ্রি।যে জন্য tan0°=0।বলা বাহুল্য এখানে অন্য হাতে ধরে রাখা কাঠিটি কিন্তু একেবারেই স্থির।
আমরা ঢাল নির্ণয় করি সবসময় tangent দিয়ে।কেননা,ঢালের মূল ব্যাপার হলো আমার ইনপুটের সাপেক্ষে আউটপুট কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে?আর আমরা tangent এর মানে জানি যে Y অক্ষের পরিবর্তন/X অক্ষের পরিবর্তন।
এখানে X অক্ষ মানে ইনপুট আর Y অক্ষ মানে আউটপুট।এজন্যই ঢালের আধুনিক সঙ্গায় বলা হয়েছে যে X অক্ষের ধনাত্নক দিকের সাথে tangent যে কোন উৎপন্ন করে তার মানকেই ঢাল বলে।শুধুমাত্র এই সঙ্গার দিকে তাকালে ঢালের আসল মানেটা বোঝা যায় না।ঢালের বাংলা একটি সুন্দর মানে আছে সেটা হলো নতি।আমরা যেমন বলি উন্নতি,অবনতি।
এদের সন্ধিবিচ্ছেদ করলে নতি বেরিয়ে আছে।যেমন:উন্নতি=উদ+নতি।অর্থাৎ এই ঢালটা আসলে কোনো একটি ফাংশনের কতুটুকু পরিবর্তন হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করে।পরিবর্তন উর্ধ্বগামী হতে পারে আবার নিম্নগামী হতে পারে।তখন ঢালের মান ধনাত্নক ও ঋণাত্মক হয়।
সবশেষে একটি কথা বলতে চাই,প্রখ্যাত গণিতবিদ রেনে ডেকার্তে বলেছিলেন যে,
আমি যে বেঁচে আছি তা কি করে বুঝবো?তখন তিনি বলেছিলেন, “i think.so,I’m”.