জীবনে পরিবর্তন আনতে অন্যান্য যেকোনো কাজ থেকে অধিক ফলপ্রসূ হিসেবে বই উল্লেখযোগ্য। বই পড়া অনেকটা ওয়ার্কআউট করার মতো, যতো বেশি লেগে থাকবেন ততো তাড়াতাড়ি সফলতার সিড়ি সন্নিকটে পাবেন।
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে কতদিনে একটি বই পড়ে শেষ করা উচিত!
আপনারা হয়তো ‘তাই লেপেঞ্জারের‘ নাম শুনে থাকবেন, যিনি কিনা প্রতিদিন একটি করে বই পড়ে শেষ করতেন।তিনি এতো দ্রুত পড়তে পারতেন কারণ তিনি বই পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। আমি কিংবা আপনি শুরুতে এতো দ্রুত বই পড়ে উঠতে পারবো না কারণ হঠাৎ করে আমাদের মস্তিষ্ক এতো তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে না।
তাই মাসে কমপক্ষে একটি বই পড়া উচিত তবে আপনি চাইলে এর বেশিও পড়তে পারেন।
যে ৬ টি কারণে মাসে একটি বই পড়া উচিত –
১. মানসিক ফিটনেস ধরে রাখা
ওয়ার্কআউট করা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী এটা আমরা সকলেই জানি। ঠিক তেমনি বই পড়লে আপনার মানসিক বিকাশ ঘটবে যা আপনাকে মানসিক এবং শারিরীকভাবে চাঙা করে রাখবে।
মাইক্রোসফটের কর্ণধার বিল গেটস ও প্রখ্যাত শেয়ার ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট মনে করেন মানুষের মধ্যে যে সুপার পাওয়ারটি অত্যাবশ্যকভাবে দরকার তা হলো দ্রুত পড়তে পারার সক্ষমতা।
আপনার ফিজিক্যাল ফিটনেস নির্ভর করে আপনার দৈনন্দিন ওয়ার্ক আউট এবং ডায়েটের উপর। মানসিক ফিটনেসের ব্যাপারটাও অনেকটা এরকম। আপনাকে নতুন নতুন বই কিনতে হবে এবং প্রতিদিন বইগুলো পড়তে হবে।
২. মেন্টরশীপ
ভাবুন তো একবার আপনি যে ফিল্ডে কাজ করতে চান সেখানকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা যদি আপনাকে প্রতিদিন মেন্টর করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়, তাহলে কেমন হতো?অধিকাংশ মানুষ বলে থাকে যে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পাওয়া খুবই দুষ্কর, কিন্তু কথাটি মোটেও সত্য নয়।
আপনি কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পাবেন কিন্তু একমাত্র বই আপনাকে আজীবন মেন্টরিং করে যাবে। ইতিহাস থেকে আপনি পূর্বের ঘটনা জানতে পারবেন এবং তাদের ভুল–ভ্রান্তিগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন যা আপনাকে সতর্ক করে দিবে ভুল করা থেকে।
বইকে মেন্টরের দৃষ্টিতে দেখুন। তাহলে দাঁড়াচ্ছে যে আপনি প্রতি মাসে একজন করে মেন্টর পাচ্ছেন যদি মাসে একটি করে বই পড়েন।
৩. আইডিয়া ক্ল্যাশিং
আপনি একজন ব্যক্তির নিকট থেকে সকল কিছু শিখতে পারবেন না, তবে প্রতিজনের কাছে একটি করে জিনিস শিখতে পারবেন। তবে বই একমাত্র হাতিয়ার যার কাছে থেকে আপনি সকল কিছু শিখতে পারবেন।
নতুন আইডিয়া সৃষ্টিতে বই যথেষ্ট সহায়তা করে। কিভাবে? চলুন জেনে নেই।আপনার মাথায় একটি নতুন আইডিয়া ঘুরপাক খাবে কারণ বই পড়ে অনেকগুলো বিদ্যমান আইডিয়া সম্পর্কে আপনার জানা আছে।
বিদ্যমান আইডিয়াগুলোর মিশ্রণ এবং আপনার চিন্তন শক্তি দ্বারা নতুন এক বা একাধিক আইডিয়া আপনি পেয়ে যাবেন। ক্রিয়েটিভিটি বৃদ্ধি পায় তখনই, যখন অনেকগুলো ধারণা হাতে থাকে।
৪. চিন্তন শক্তির বিকাশ
বর্তমান সময়ের কঠিন কাজগুলোর একটি হচ্ছে কোন চিন্তাভাবনা না করে থাকতে পারাটা।
কোন একটা বিষয় নিয়ে ভাবলে চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটে। বই পড়লে আপনাকে সেই বিষয়টির উপর চিন্তাভাবনা করতে হবে যা আপনার চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে থাকবে। আপনি যত বেশি বই পড়বেন, আপনার চিন্তা ভাবনাগুলোও তত ইন্টারেস্টিং হবে।
বিনোদনের উৎস হিসেবে বই খুবই কার্যকর একটা মাধ্যম। আপনি হয়তো বলবেন যে বই পড়তে কেমন যেন একঘেয়েমি লাগে। উত্তরটা হবে, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে বইকে বিনোদনের খোরাক হিসেবে দেখুন কারণ এখান থেকে আপনি নতুন নতুন জিনিস শিখতে ও জানতে পারবেন। হয়তো এটা জানেন যে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন বিষয় জানতে বেশি আগ্রহী থাকে। তাই টেলিভিশন বা নেটফ্লিক্স এসব কম দেখে বই পড়ায় বেশি সময় দিন।
৬. লেখার মান উন্নয়ন
যদি আপনি লেখার মানের উন্নতি করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বেশি বেশি বই পড়তে হবে। বই পড়লে আপনার শব্দভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ হবে।
সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে লেখতে পারাটা একটা আর্ট। দেখে থাকবেন আপনার বয়সী কেউ একজন সুন্দর, সাবলীলভাবে লিখে বাকিদের আকৃষ্ট করে অথচ আপনি তেমন ভালো লিখতে পারেন না। ভালো লিখতে পারার উপায় হচ্ছে প্রচুর বই পড়া যা আপনাকে অভিজ্ঞ করে তুলবে।
এতো কিছু জানার পর তো সবশেষে এটাই বলা যায়, বই পড়াকে ঐচ্ছিক না করে আমাদের উচিত অবশ্যই বই পড়া।