কোয়ারেন্টাইনের এই দিনগুলিতে বাসায় থাকতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে। থমকে গেছে কর্মব্যস্ততা। সেই সাথে থেমে গেছে অনেকের সকালের হাঁটা, জীমসহ প্রায় সকল ধরণের শারীরিক পরিশ্রম। এর সাথে যোগ হয়েছে মানসিক চিন্তা, আতংক আর চাপ। সব মিলিয়ে এই অলস সময়ে শরীর-মন ভালো যাচ্ছে না কারোরই।
কিন্তু কোভিট-১৯ কে প্রতিহত করতে চাই সুস্থ দেহ এবং সুস্থ মন। দেহ ও মনের সুস্থতা নিশ্চিতে যোগব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। তাই ঘরে বসে শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখতে আপনি করতে পারেন কিছু যোগাসন। কিন্তু যোগাসন অভ্যাস করতে চাইলেই তো আর করা যায় না? বয়স ও সার্মথ্যভেদে যোগাভ্যাসেও রয়েছে পার্থক্য। তাই আপনাদের জন্য নিচে সকল বয়স ও শারীরিক সার্মথ্যের সুস্থ মানুষের জন্য দেওয়া হলো ৮ টি যোগাসনের তালিকা।
১. সুখাসন:–
সুখ শব্দের সাধারণ অর্থগুলো হলো- হর্ষ, আনন্দ, প্রীতি, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি, তৃপ্তি ইত্যাদি। স্বাচ্ছন্দ্য থাকা যায় এমন ভাবগত অর্থ থেকে এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে সুখাসন (সুখ + আসন)।
পদ্ধতি
১. কোন সমতল স্থানে, মেরুদণ্ড সোজা করে, দুই পা ছড়িয়ে বসুন।
২. এবার ডান পা ভাঁজ করে বাম উরুর দিকে নিয়ে আসুন।
৩. বাম পা ভাঁজ করে ভাঁজ করা ডান পায়ের নিচ দিয়ে বাম উরুর কাছে আনুন। সাধারণত এই ধরনের বসাকে বাবু হয়ে বসা বলা হয়।
৪. এবার ডান হাত ডান হাঁটুর উপর এবং বাম হাত বাম হাঁটুর উপরে রাখুন। এক্ষেত্রে হাতের তালু থাকবে হাঁটুর দিকে ফেরানো এবং আঙুলগুলো হাঁটুর উপর ছড়ানো থাকবে।
৫. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১ মিনিট অবস্থান করুন। তারপর পা বদল করে আসনটি করুন।
৬. সবশেষে আসন ত্যাগ করে শবাসনে ১ মিনিট বিশ্রাম নিন। এরপর পুরো আসনটি আরও দুই বার করুন।
উপকারিতা
১. পায়ের পেশী সবল হয়।
২. হাঁটুর নমনীয়তা বাড়ে। ফলে হাঁটু মুড়ে যাঁরা বসতে কষ্ট পান, তাঁদের অসুবিধা দূর হবে। এছাড়া হাঁটুর ব্যথাও দূর হয়।
৩ যৌনাঙ্গ সবল হয়।
২.গোমুখাসন:-
গো বলতে এখানে গরু বুঝানো হয়েছে। গোমুখ বলতে, গোরুর মুখই বুঝানো হয়েছে। যদিও এই আসনের সাথে গোমুখের মিল ততটা পাওয়া যায় না।
পদ্ধতি
১. দুই পা সামনের দিকে প্রসারিত করে বসুন।
এবার ডান পা ভেঙে বাম পায়ের উপর তুলে আনুন। এবার বাম ও ডান উভয় পায়ের গোড়ালি নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন।
২. এবার ডান হাত মাথার উপর তুলে, ভাঁজ করে পিঠের পিছনে নিয়ে আসুন। বাম হাতকে ঘুরিয়ে পিঠের দিকে নিয়ে আসুন। এবার উভয় হাতের আঙুলগুলোকে কাছাকাছি নিয়ে আসুন। তারপর উপর হাতের আঙুল দিয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরুন।
৩. মেরুদণ্ড ও মাথা সোজা করে এই অবস্থায় ৩০ সেকেণ্ড স্থির থাকুন। এরপর হাতকে মুক্ত করে শরীরের পাশে নিয়ে আসুন এবং পা দুটো সামনের দিকে প্রসারিত করে ৩০ সেকেণ্ড বিশ্রাম নিন।
৪. এবার বাম পা ভেঙে ডান পায়ের উপর আনুন এবং আগের মতো আসনটি করুন। বলাই বাহুল্য এবারের আসনটি হবে, আগের প্রক্রিয়ার বিপরীত পদ্ধতিতে।
৫. উভয় দিকে আসন করার পর, ৩০ সেকেণ্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. পা, কাঁধ, হাত ইত্যাদির বেদনা দূর হয়।
২. মেয়েদের যৌন রোগ দূর হয়। ছেলেদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
৩. অনিদ্রা দূর হয়।
৩.অর্ধচন্দ্রাসন:-
অর্ধেক চাঁদের আকৃতি থেকে এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে। যোগীরা একে শক্তি প্রেরণাদায়ক আসন হিসাবে বিবেচনা করেছেন।
পদ্ধতি
১. প্রথমে দুই পা জোড়া করে দাঁড়ান। এরপর দুই হাত কানের পাশ দিয়ে মাথার উপরে সোজাভাবে উঠিয়ে, নমস্কারের মতো করে দুই হাতের তালু একত্রিত করুন। এবার এক হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে, অন্য হাতের বুড়ো আঙুল জড়িয়ে ধরুন। এরপর মাথা এমনভাবে উঁচু করে রাখুন, যাতে চিবুকের অবস্থান বুক থেকে অন্তত তিন ইঞ্চি দূরে থাকে।
২. এবার সোজা সামনের দিকে দৃষ্টি দিন। পুরো নিঃশ্বাস আটকে রেখে, শরীরের উপরের অংশ পিছনের দিকে বাঁকাতে থাকুন। এরপর যতটা পারবেন, ততটা পরিমাণ পিছনের দিকে বাঁকিয়ে শরীরকে অর্ধচাঁদের আকারে আনার চেষ্টা করুন। এই সময় মাথাটাকে যতটা সম্ভব পিঠের ও নিতম্ব বরাবর আনার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, এইভাবে শরীর বাকানোর সময় যেন হাঁটু ও কনুই সোজা থাকে।
৩. এবার ১০ সেকেন্ড নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকুন। সেকেন্ডের মাপে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুণে, ধীরে ধীরে সোজা হন।
৪. ১০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। একইভাবে আসনটি পরপর তিনবার করার পর চূড়ান্ত বিশ্রাম নিন।
বিকল্প অর্ধচন্দ্রাসন (পাশ্ব-অর্ধচন্দ্রাসন)
পদ্ধতি
১. প্রথমে দুই পা জোড়া করে দাঁড়ান। এরপর দুই হাত কানের পাশ দিয়ে মাথার উপরে সোজাভাবে উঠিয়ে, নমস্কারের মতো করে দুই হাতের তালু একত্রিত করুন। এবার এক হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে, অন্য হাতের বুড়ো আঙুল জড়িয়ে ধরুন। এরপর মাথা এমনভাবে উঁচু করে রাখুন, যাতে চিবুকের অবস্থান বুক থেকে অন্তত তিন ইঞ্চি দূরে থাকে।
২. এবার সোজা সামনের দিকে দৃষ্টি দিন। পুরো নিঃশ্বাস আটকে রেখে, শরীরের উপরের অংশ ডান দিকে বাঁকাতে থাকুন। দেহটা অর্ধ-চন্দ্রের আকারে আনার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, এইভাবে শরীর বাকানোর সময় যেন হাঁটু ও কনুই সোজা থাকে।
৩. এবার ১০ সেকেন্ড নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকুন। সেকেন্ডের মাপে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুণে, ধীরে ধীরে সোজা হন।
৪. এবার শরীরকে বাম দিকে বাঁকিয়ে অর্ধচন্দ্রের ভঙ্গিমাতে আসুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : শরীর অর্ধচন্দ্রের রূপ নিচ্ছে কিনা, তা বুঝার জন্য আয়নার সামনে এই আসনটি করতে পারেন।
৫. ১০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। একইভাবে আসনটি পরপর তিনবার করার পর চূড়ান্ত বিশ্রাম নিন।
অনেকে শরীরকে পিছনের দিকে না বাঁকিয়ে ডান বা বাম পার্শ্ব বরাবর বাঁকিয়ে থাকেন। এর ফলে শরীরের পার্শ্ব বরাবর অর্ধচন্দ্রের আকার ধারণ করে থাকে। এই আসনটিকে অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্ব-অর্ধচন্দ্রাসন বলা হয়ে থাকে।
উপকারিতা
১. শরীরের আলস্য দূরকরণে এই আসন করা হয়।
২. মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
৩. লিভার, কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৪. অজীর্ণ ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়।
৫. কোমরের ব্যাথা, পিঠের পেশীর ব্যাথা দূর হয়
৬. পেটের চর্বি দূর হয়।
৭. মেয়েদের স্তনের শৈথিল্য রোধ হয়।
৪. পদ-হস্তাসন:-
পা ও হাতের সমন্বয়ে এই আসন করা হয় বলে, এর নামকরণ করা হয়েছে পদহস্তাসন (পদহস্ত + আসন)।
পদ্ধতি
১. প্রথমে দুই পা সোজা করে দাঁড়ান। উভয় পায়ের গোড়ালি ও বুড়ো আঙুল একত্রিত করুন। এবার দুই হাত কানের পাশ ঘেঁষে সোজা মাথার উপর তুলুন। হাতের তালুদ্বয়কে একত্রিত করে, এক হাতের বুড়ো আঙুল অপর হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা জড়িয়ে ধরুন।
২. এবার কোমর থেকে শরীরের উর্ধাংশ সামনের দিকে বাঁকিয়ে, মাথাকে পায়ের পাতার উপরে নিয়ে আসুন। এই সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, চিবুক যেন বুকের সাথে না লাগে এবং পা দুটো অবশ্যই সোজা রাখতে হবে।
৩. এবার হাত দুটো দুই পায়ের হাঁটুর পাশ দিয়ে প্রসারিত করুন। এরপর কনুই থেকে ভাজ করে হাত দুটিকে পায়ের সাথে যুক্ত করুন। হাতের অগ্রভাগ টেনে এনে আঙুল দ্বারা পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করুন। এই সময় হাতের অগ্রভাগ পায়ের সাথে যুক্ত হয়ে থাকবে।
৪. এবার মাথাকে টান টান করে পায়ের নিচের দিকে প্রসারিত করুন। এই অবস্থায় ১০ সেকেণ্ড শরীর স্থির রেখে অবস্থান করুন। এই সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ১০ সেকেণ্ড পরে, হাত দুটো মুক্ত করে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
৫. তারপর ১০ সেকেণ্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। এরপর একই ভাবে আরও দুই বার আসনটি করুন।
সতর্কতা
যাঁদের উচ্চ-রক্তচাপ আছে এবং কোমরের বাতে ভুগছেন, তাঁরা এই আসনটি করবেন না।
উপকারিতা
১. মেরুদণ্ড ও সায়াটিক স্নায়ুর নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
২. কোমর, নিতম্ব, পেট, উরুর অংশের মেদ কমে এবং এই সকল অংশের পেশী সবল হয়।
৩. স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বহুমূত্র, নিম্ন রক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অজীর্ণ নিরাময় হয়।
৫.ত্রিকোণাসন:-
জ্যামিতিতে তিনটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র যখন ত্রিভূজ তৈরি করে, তখন তিনটি কোণের সৃষ্টি হয়। দেহ ভঙ্গিমার দ্বারা ত্রিকোণ সৃষ্টি হয় বলে এর নাম রাখা হয়েছে, ত্রিকোণাসন ( ত্রিকোণ + আসন)। কেউ কেউ একে উত্থিত ত্রিকোণাসন নামেও অভিহিত করে থাকেন।
পদ্ধতি
১. দুই পা ফাঁক করে সোজা হয়ে এমন ভাবে দাঁড়ান, যেন দুই পায়ের মাঝখানে ২-৩ ফুট পরিমিত জায়গা থাকে।
২. এবার শরীরের ভার দুই পায়ের পাতার উপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। এবার দুই হাতকে শরীরে দুই পাশে সোজাভাবে প্রসারিত করুন। এই সময় হাতের আঙুলগুলো প্রসারিত থাকবে।
৩. এবার ডান পায়ের পাতা ৯০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিন। বাঁ পাকে সোজা রেখে সামান্য ঘোরান।
৪. এবার নিশ্বাস নিতে নিতে কোমর থেকে শরীরকে ডান পাশ বরাবর ভেঙে সোজা অনুভূমিক ভঙ্গিমায় আনুন। এবার ডান হাতকে পায়ের পাশ দিয়ে ভূমিতে রাখুন। এই হাতের তালু ভূমির উপর ছড়িয়ে দিন এবং অপর হাতটি সোজা আকাশের দিকে তুলে দিন। উল্লেখ্য উপরে হাতের প্রতিটি আঙুল আকাশের দিকে প্রসারিত থাকবে।
৫. এবার আপনার মুখকে আকাশের দিকে তুলে ধরুন। উপরের দিকে উঠানো হাতের বুড়ো আঙুলে দৃষ্টিকে সংযত করুন। এবার স্বাভাবিক শ্বাস নিতে নিতে ৩০ সেকেণ্ড স্থির থাকুন।
৬. ৩০ সেকেণ্ড শেষে, মুখ নিম্নমুখী করুন, নিচের হাতের ভর থেকে শরীর মুক্ত করে, শরীরের উপরের অংশ তুলে আনুন। এবার ধীরে ধীরে দুই পা একত্রিত করে দাঁড়ান এবং ৩০ সেকেণ্ড বিশ্রাম নিন।
৭. এবার পুনরায় বাম দিকে আসনটি একবার করুন।
৮. এবার ৩০ সেকেণ্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন।
৯. এইভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি আরও দুই বার করে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. উরু, হাঁটু, ও গোড়ালী সবল ও সুস্থ থাকে।
২. নিতম্ব, হ্যামস্টি্রং, বক্ষের পেশী সবল হয়।
৩. উদরের পেশী ও অন্ত্রীয় অংশের ব্যায়াম হয়।
৪. গলা ও পিঠের ব্যাথা দূরীভূত হয়।
৫. মেরুদণ্ড নমনীয় ও সবল হবে।
৬.পদনমুক্তাসন:-
রার উপযোগী দেহভঙ্গিমা হিসাবে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে পবনমুক্তাসন (পবন-মুক্ত +আসন)। এর বর্ধিত প্রকরণ হলো― উপবিষ্ট পবন-মুক্তাসন।
একপদ পবন-মুক্তাসন
পদ্ধতি
১. কোন সমতল স্থানে দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। প্রাথমিকভাবে পায়ের পাতা বাইরের দিকে ফেরানো থাকবে এবং হাত দুটো শরীরের পাশে শায়িত থাকবে।
২. এবার ডান হাঁটুটা ভাঁজ করে বুকের উপর আনুন।
৩. এবার ডান হাতের কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে হাঁটুকে পেঁচিয়ে ধরুন। এবার বাম হাত তুলে ডান হাতের কনুই-এর সামান্য নিচে আঁকড়ে ধরুন। এই অবস্থাকে অনেকে একপদ পবনমুক্তাসন হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।
৪. একইভাবে অপর পা ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন একই সময় ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কনুই-এর সামান্য নিচে আঁকড়ে ধরুন। ফলে ডান পায়ের হাঁটু উভয় হাতের বন্ধনে আটকা পড়ে যাবে।
৫. এবার উভয় হাতের চাপে হাঁটুকে বুকের সাথে চেপে ধরুন। এর ফলে উরুর পুরো চাপ পেটের উপর পড়বে। এই অবস্থায় চিবুককে বুকের দিকে টানতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন, যেনো মাটিতে শায়িত পায়ের গোড়ালি ভূমি ছেড়ে উপরে উঠে না আসে এবং শায়িত পায়ে যেনো কোনো ভাঁজ না পড়ে। এই অবস্থাকে পূর্ণ পবন-মুক্তাসন বলা হয়।
পূর্ণ পবন-মুক্তাসন
৬. উপরে বর্ণিত ভঙ্গিতে ৩০ সেকেন্ড নিশ্চল হয়ে শুয়ে থাকুন। এই সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালু রাখুন। ৩০ সেকেন্ড পর আসন ছেড়ে দিয়ে, সটান শুয়ে বিশ্রাম নিন। এরপর ডান পা মাটিতে রেখে বাম পা বুকের উপর তুলে আসন করুন। এই আসনটি যথাযথভাবে শেষ করে ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন।
৭. এবার দুই পা একসাথে বুকের উপর তুলে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এইভাবে ৩০ সেকেণ্ড স্থির থাকুন। এরপর আসনটি শেষ করে ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন।
সতর্কতা
১. ৫০ বৎসরের বেশি বয়স যাঁদের, তাঁরা জোড়া পায়ে এই আসন করবেন না।
২. গ্যাস্ট্রিক আলসার, উচ্চ-রক্তচাপের রোগী,হৃদপিণ্ডের রোগীরা ডান পা তুলে আসনটি করতে পারেন।
৩. ডিওডোনাল আলসারের রোগীরা বাম পা তুলে আসনটি করতে পারেন।
উপকারিতা
১. পেটের বদ্ধ বায়ু মুক্ত হয় এবং পেটে বায়ু জমা রোধ করে।
২. হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। হাঁপানি, বহুমূত্র ও লিভারের অসুখে বিশেষ ফল প্রদান করে থাকে।
৩. পেটের চর্বি কমে।
৪. উরু ও পেটের পেশী সবল হয়।
৭. শলভাসন:-
শলভ =শল্ (গমন করা) + অভচ্ কর্তৃবাচ্য। শলভ শব্দের অর্থ ফড়িং। এই আসনে পায়ের অবস্থান ফড়িংয়ের পুচ্ছের মতো দৃশ্যমান হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে শলভাসন (শলভ +আসন)।
পদ্ধতি
১. প্রথমে চিবুক মাটিতে ঠেকিয়ে উপুর হয়ে শয়ন করুন। এই সময় হাত দুটি শরীরের উভয় পাশে শায়িত থাকবে। হাতের তালু থাকবে মাটির দিকে ফেরানো।
২. এবার দুই পা জোড়া করে ধীরে ধীরে উপরে উঠাতে থাকুন। পা ভূমির সাথে ৪৫ ডিগ্রী কোণে তুলে ধরে ৩০ সেকেণ্ড স্থির হয়ে থাকুন। এই সময় স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকবে।
৩. ৩০ সেকেণ্ড সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, আস্তে আস্তে মাটিতে পা নামিয়ে আনুন।
৪. এরপর শবাসনে ৩০ সেকেণ্ড বিশ্রাম নিন। এরপর আসনটি আরও দুই বার করুন।
উপকারিতা
১. কোমরের ও মেরুদণ্ডের ব্যাথা দূর হয়।
২. গেটেবাত, স্পন্ডিলোসিস রোগের উপশম হয়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য, অজীর্ণ, পেটের বায়ু প্রশমিত হয়।
৪. পেট ও উরুর মেদ কমে যায়।
৮. শবাসন:-
শবের (মৃতদেহ) ভঙ্গিমায় এই আসন করা হয় শবলে, এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
পদ্ধতি
১. দুই হাত শরীরের দুই পাশে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এই সময় হাতের তালু থাকবে উপরের দিকে এবং একটু বাইরের দিকে হেলানো থাকবে।
২. পা দুটোর মাঝে কিছুটা ফাঁক রাখুন। এই সময় পায়ের পাতা বাইরের দিকে একটু হেলে থাকবে।
৩. সমস্ত শরীরকে শয়ন তলের উপর ছেড়ে দিন।
৪. খুব ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে থাকুন। এবার মনকে সমস্ত চিন্তামূক্ত করুন এবং শরীরকে শিথিল করে দিন। তাতে প্রথমে শরীরটাকে ভার মনে হবে। পরে শরীরের উপস্থিতিকে ভুলে যাবার চেষ্টা করতে হবে। ফলে একসময় পুরো শরীরকে হাল্কা মনে হবে। মূলত এই আসনটি সহজ। কারণ এর দৈহিক ভঙ্গিমা অত্যন্ত সহজ। আবার এটি সবচেয়ে কঠিনও বটে। কারণ, মনকে সংযত করে, শরীরকে অগ্রাহ্য করে,চিন্তাশূন্য অবস্থায় অবস্থান করাটা অতটা সহজ ব্যাপার নয়।
মূলত এই আসনটি করা হয়, অন্য আসনের শেষে বিশ্রাম করার জন্য। এক্ষেত্রে একটি আসন যতক্ষণ করবেন, ঠিক ততক্ষণই শবাসন থাকবেন। অন্য আসন ছাড়াও শারীরীক ও মানসিক বিশ্রামের জন্য শুধু শবাসন করতে পারেন।
উপকারিতা
১. উচ্চ-রক্তচাপের রোগীরা এই আসনটি থেকে বিশেষ উপকৃত হবেন।
২. দীর্ঘক্ষণ শারীরীক বা মানসিক পরিশ্রমের পর শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লে, এই আসন দ্বারা শারীরীক ও মানসিক শক্তি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
৩. স্নায়বিক দুর্বলতা, অনিদ্রা, অবসাদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এই আসন অত্যন্ত ফলপ্রসু ফলাফল প্রদান করে থাকে।
যোগাসন দিনের যেকোনো সুবিধাজনক সময়েই করা যায়। খালি পেটে কখনোই যোগাভ্যাস করা উচিত নয়। হালকা কিছু খেয়ে তার ৩০ মিনিট পর যোগাসন করা উচিত। কিন্তু ভোরবেলা যোগাভ্যাস করলে খালি পেটে করা যেতে পারে।
সবাই বাসায় থাকুন, সুস্থ থাকুন।