প্রায়শই আপনার পরিচিত বিভিন্ন ব্যক্তিকে বলতে শুনবেন যে,”আরে এ্যালোপ্যাথি তো আমার কোনো কাজেই দিল না,হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়েই আমি একদম সুস্থ।” তাদের কথায় একদম কান দিবেন না। তর্কও করতে যাবেন না। পারবেনও না৷ তাহলে আসলেই কি এটা কার্যকরী?এক কথায় না। তাহলে আমার আত্মীয়রা সুস্থ হল কীভাবে?
এর উত্তর জানতে হলে আপনাকে প্লাসিবো ইফেক্ট সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে প্লাসিবো ইফেক্টটা আবার কী? এই সম্পর্কে আগেই একটা আর্টিকেল লিখেছি। সেটি দেখতে পারেন। আর যদি অল্প কথায় জানতে চান তাহ্লে এটি এমন একটি ইফেক্ট যেখানে বিশ্বাস সবচেয়ে বড় ঔষধ।
Related Article:প্লাসিবো ইফেক্ট: বিশ্বাস যেখানে সবচেয়ে বড় ঔষধ
তাহলে আসলে কী ঘটছে এখানে?
যখন আপনি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খান তখন আপনার মনে বিশ্বাস থাকে যে আপনি ভালো হয়ে যাবেন। যার ফলে প্রায়শই দেখা যায় যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খাওয়া ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু কী হবে যদি আপনার মনে বিশ্বাস না থাকে? তার পরেও এটি কাজ করতে পারে।এই নিয়ে একটি পরীক্ষাও করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের একটি গবেষণার ফলাফল সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছিল।
সেই পরীক্ষার মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়েছিল যে কীভাবে লোকেরা মাইগ্রেনের ব্যথার ঔষধে প্রতিক্রিয়া জানায়। একটি গ্রুপ ওষধের প্রকৃত নাম যুক্ত একটি মাইগ্রেন ড্রাগ নিয়েছিল, অন্যটি “প্লেসিবো” লেবেলযুক্ত একটি একটি ঔষধ নিয়েছিল এবং তৃতীয় একটি দল কিছুই নেয়নি।
গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে মাইগ্রেনের আক্রমণে ব্যথা কমাতে আসল ঔষধের মতো প্লেসিবোটি 50% কার্যকর ছিল। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে আমাদের মস্তিষ্ক শুধুমাত্র ঔষধ খাওয়ার ফলেই ধারণা করেছিল যে এটি কাজ করবে৷ যার দরুণ “প্লাসিবো” লেখা ঔষধটিও কাজ করে। এমনকি যদি তারা জানতে পারে যে এটি ওষুধ নয় তার পরেও ক্রিয়াটি নিজেই মস্তিষ্ককে অনুভব করাতে পারে যে আমাদের দেহ সুস্থ হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথির মূল ভিত্তি কী?
জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৯৬ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন । এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূলনীতি হচ্ছে- কোনো একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে যে ওষুধ প্রয়োগ করলে তার মধ্যে যে লক্ষণ দেখা দেয়, ওই একই ঔষধ সেই লক্ষণ প্রকাশ করে এমন অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে প্রয়োগ করলে তা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অসুখের লক্ষণ নিরাময়ের কাজ করে থাকে।
হ্যানিম্যানের প্রস্তাবিত এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে যে, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের ফলে কোনপ্রকার শারীরিক পরিবর্তন হয় না !
হোমিওপ্যাথি ঔষধ কীভাবে তৈরি হয়?বিজ্ঞানীরা কী রায় দিলেন?
এটি মূলত লঘুকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরী করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দ্রব্যকে ক্রমাগত লঘূকরণ করা হয় অ্যালকোহল অথবা পতিত জলে দ্রবীভূত করে।এই লঘূকরণ এতবার করা হয়ে থাকে যে শেষপর্যন্ত এই মিশ্রণে প্রাথমিক দ্রব্যের অণু পরিমানও অবশিষ্ট থাকে না। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এই চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো কাজের না।
তথ্যসূত্রঃ সাইন্স ম্যাগাজিন, ডেইলি মেইল, লাইভ সায়েন্স, সাইন্স বেইজড মেডিসিন, দ্যা গার্ডিয়ান, এন আই এইচ, রিসার্চ পেপার