সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো ফোনের ভাইব্রেশন এর আওয়াজ এ ,এত সকালে তো ফোন দেবার কেউ নাই।আধ ঘুম নিয়ে ভাবতে বসলাম আজকে কি রবিবার,ফিজিওলজি টি সেল বিষয়ক টিউটোরিয়াল এ অনুপস্থিত দেখে সিআর ফোন দিচ্ছে।নাহ,আজকে তো শুক্রবার,তবে কে হতে পারে সেই মহান ব্যক্তি।
কলটা কেটে গেছে ,লিস্ট চেক করে দেখলাম আশফার ভাই।কলটা আবার ব্যাক করলাম,একটা রিং হওয়া মাত্রই ধরে ফেললেন,
-হ্যালো ভাই বলেন !
– আরে ঋভু ভাই,একটা হেল্প লাগতো।
– আপনি কোথায় ?
– আরে ভাই আমি হসপিটালে,এক ভাই ব্রাদারের সাথে আসছিলাম।রক্ত দেওয়া নিয়ে,ভাই এর চাচা এর একটা অপারেশনএ দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে।কিন্তু তাকে রক্ত দিতে মানা করছে হসপিটাল কতৃপক্ষ। একটা কাগজ ধরায়ে দিলো আর বলল অন্য ডোনার জোগাড় করতে। ছবিটা আপনাকে ম্যাসেঞ্জারে সেন্ড করে দিয়েছি … আমাকে ব্যাপারটা একটু বোঝান।
-ওয়েট,ডাটা অন করে দেখছি।
যা দেখলাম মোটামুটি চোখ চড়কগাছ ,সেটা বললেও কম হবে। যা দেখলাম সেটা আপনারাই দেখুন !
ব্লাড ট্রান্সফিউসন তো ভালই পড়া আছে,ইমুনিটি হালকা পাতলা।কিন্তু এই ব্যাপারে আসলে জানি না।ফ্রেশ হয়ে দশটা নাগাদ বেরিয়ে গেলাম মেডিকেল কলেজের উদ্দ্যেশ্যে,যদি কোন ট্রেইল পাই!
অটো থেকে নেমে ভাবছি কলেজে ঢুকবো না চায়ের দোকানে তখন শুনি “এ্যাই ঋভু !” দেখি এরিক ভাই ।ভাইকে আদাব আর মামা কে একটা ড্রাগন চা ( আমার কফি পছন্দ কিন্তু সময় কাটানোর জন্য চা খাই আরকি) এর ফরমায়েশ দিয়ে কাছাকাছি একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম,যদিও মাথায় তখনো ইনকোয়ারির কথা ঘুরছে।
-কি রে কি ভাবিস ?
– ভাই এই ছবিটা দেখেন। নিকটাত্মীয়দের ব্লাড ট্রান্সফিউসন এ ডিসকারেজ করছে,কোন একটা ঝামেলার কারণে।
– 𝐓𝐫𝐚𝐧𝐬𝐩𝐚𝐥𝐚𝐧𝐭 𝐀𝐬𝐬𝐨𝐜𝐢𝐚𝐭𝐞𝐝 𝐆𝐫𝐚𝐟𝐭 𝐕𝐬 𝐇𝐨𝐬𝐭 𝐃𝐢𝐬𝐞𝐚𝐬𝐞 ?
– ভাই জানলেন কি করে,ব্যাপারটা একটু বোঝায়ে বলেন,আমি আসলে পড়ার সাথে মিলাতে পারছি না।
ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন মুশফিক ভাই ।
এরিক ভাই একটু নড়েচড়ে বসলেন, তারপর শুরু করলেন বোঝানো , “আমি মোটামুটি যা জানি তাই শেয়ার করছি।এগুলা বেশ কয়েকটা ট্রাস্টেড সোর্স থেকে গেদার করা।ইমুনিটি সম্পর্কে কি কি জানিস তুই ?” একটু ঢোক গিললাম, “এই তো ভাই,গ্র্যানুলোসাইট ,এ্যাগ্র্যানুলোসাইট …” “আর লিম্ফোসাইটদের কথা কে বলবে?”
একটু লজ্জা পেলাম। এরিক ভাই আবার শুরু করলেন, “ তো এই লিম্ফোসাইটগুলো দুই ভাগে বিভক্ত ।তারা হল ‘টি-লিম্ফোসাইট’ (T-lymphocyte) আর ‘বি লিম্ফোসাইট’ (B-lymphocyte)। এখন তুই যে নেচারাল কিলার সেল এর কথা বলিস না,তারা কিন্তু একধরণের টি সেল,তবে সেই প্রসঙ্গে আমি যাবো না।তো এখন এই টি লিম্ফোসাইট বা টি সেল ,এরা আমাদের দেহের নিজস্ব অঙ্গ এবং বাইরের কোষ শনাক্ত করতে সক্ষম।যখনই শরীরে বাইরের কোন বস্তু,তুই তো জানিসই এগুলোকে আমরা এ্যান্টিজেন বলি, ঢুকে যায়…তখন টি সেল সেগুলোকে চিনে ধ্বংস করে”।
আমি এখনো ধোয়ার সাগরে, “তাহলে ভাই এই রোগে টি সেলের ভূমিকাটা কি?”
“মজাটা এখানেই। প্রথমেই বলেছি টি সেল শরীরে বাইরের কিছু পেলেই আক্রমণ করে।এখন কিডনি ডোনেশন এর ব্যাপারে যদি দেখিস,টিস্যু ম্যাচিং না করে যদি এটা প্রতিস্থাপন করা হয়,এটা অকার্যকর হয়ে যাবে।কারণ শরীরের টি সেলগুলোই এই নতুন কিডনিকে আক্রমন করবে,হোস্টের টিস্যু টাইপ ম্যাচ করেনি বলে।আবার টিস্যু ম্যাচিং করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করলে ,তখন তারা মোটামুটি শান্ত থাকে।যদিও তখনো রোগিকে বেশ কিছু ঔষধ খাওয়া লাগে। কিন্তু ব্লাড ট্রান্সফিউসনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা।সবার ব্লাডেই টি সেল থাকে জানিসই তো,যখনই রিসিপিয়েন্ট এর শরীরের ডোনারের ব্লাড দেওয়া হয়…ডোনারের এর টি সেল স্বভাবতই আক্রমণ করে রিসিপিয়েন্ট ইন্টারনাল অর্গানগুলোকে।
কিন্তু সংখ্যায় কম বলে অচিরেই তারা পরাস্ত হয় রিসিপিয়েন্ট এর টি সেল বাহিনীর কাছে,আর এজন্যই আমরা অন্য ডোনারের ব্লাড নিয়েও বেচে থাকতে পারি।কিন্তু ধর তুই কোন ফার্স্ট ডিগ্রি ডোনারের রক্ত নিলি ,(তোর বোঝার স্বার্থে জানিয়ে রাখি নিজের বাবা,মা,চাচা,ভাই,বোন এদের ফার্স্ট ডিগ্রি ডোনার বলে)তখন কিন্তু রিসিপিয়েন্ট (যেমন তুই) এর দেহের টি সেল কিন্তু বোকাছেলে হয়ে চুপ করে বসে থাকবে! কেন জানিস? কারণ তোর আর ডোনারে HLA ( human leucocyte antigen ) টাইপ মিলে গেছে,নতুন ট্রান্সফিউস করা ব্লাডের বিরুদ্ধে কোন হোস্ট রেসপন্স আসছে না।সোজা কথায় একটা one way compatibility বা ইমিউনোসাপ্রেসন তৈরি হল।এবার রিসিপিয়েন্ট এর বডিকে ডোনারে ব্লাডের টি সেল রিজেক্ট করবে (খুবই স্বাভাবিক,টি সেল যাকেই অচেনা ভাবে তাকেই আক্রমণ করে) এবং যার ফল হবে খুব ভয়াবহ।
আস্তে আস্তে শরীর কাজ করা বন্ধ করে দেবে”।
ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারলাম এখন।কিন্তু আরো জানতে ইচ্ছা করছে,তাই প্রশ্নটা করেই ফেললাম, “ কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে ভাই ?”
এগুলো পড়তে ভুলবেন না !!! মগজাস্ত্রের খোরাক : কিছু অ্যাপস ও গেম |
খালি কাপটা ফেরত দিয়ে ভাই বললেন, “ জ্বর,চামড়ায় র্যাশ,ডায়রিয়া…হেপাটাইটিস হতে পারে,মানে মিসম্যাচ ব্লাড ট্রান্সফিউসন এর লক্ষণ দেখা যাবে। আস্তে আস্তে বোন ম্যারো এ্যাপ্লাসিয়া দেখা যাবে,যার কারনে রোগীর মৃত্যু হবে।কিন্তু একটা কথা কি জানিস,এই রোগ এতই রেয়ার যে, মাত্র ০.১ থেকে ১% ট্রান্সফিউসন কেসে এটা দেখা যায়। এই রেয়ারিটির জন্যই ডায়গনোসিস এ দেরী হয় এবং রোগী মারা যায়। তাই রেয়ার হলেও এই রোগের মর্টালিটি রেট বা মৃত্যুহার ৮৭-১০০% !”
মোটামুটি সবই ক্লিয়ার,এই পূর্ণ আলোচনায় মুশফিক ভাই বিভিন্ন টপিক এনে সাহায্য করেছেন…বেরিয়ে এলাম টং থেকে।ভাইরা হলে যাবেন,আমি যাবো ‘কফিতা’ তে। “আরেকটা মজার তথ্য জানিয়ে রাখি শোন,”ভাই এর দিকে তাকালাম, “এই রোগের প্রথম কেস ছিল জাপান থেকে,কারণ নিজেদের ভেতর বিবাহের কারনে এদের জেনেটিক মিল দারুণ,ফলে এই প্রবলেম এর উতপত্তি।
পথে যেতে যেতে আশফার ভাইকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম,যদিও ডোনার ততক্ষণে পাওয়া গেছে। কফিতায় গিয়ে ডালগোনা অর্ডার দিলাম,দিনটা আজকে অনেক সুন্দর ।