ওয়েবে সার্চ দিলে আপনি এমন অনেক পোস্ট দেখতে পারবেন যারা প্রবল দুঃখের বশে থাকলেও কাঁদতে পারছেন না। ভীষণ মন খারাপে কান্না একদম দলা পাকিয়ে গলার মধ্যে আটকে আছে কিন্তু আপনি কাঁদতে পারছেন না! অনেকসময় খুব করুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও ,এমনকি আশেপাশে সবাই কাঁদলেও আপনার কষ্ট হয় কিন্তু চোখ বেয়ে পানি পড়েনা! এমন কি আপনারও হয়? যদি হয় ,তবে আপনি একা নন ।
দুর্ভাগ্যবশত এটা সত্যি যে,আবেগমুক্ত হয়ে রাগ কিংবা হতাশা থেকে বের হয়ে আসার স্বাস্থ্যকর উপায় হচ্ছে কান্না।তবে অনেকেই মনে করেন ,তারা কেবল কাঁদতে পারেন না।
আপনি খুব করে চাইলেও যদি আপনার কাঁদতে অসুবিধা হয় কিংবা আপনার কান্না আসছেনা, তবে ধরে নিতে হবে অতীতে আপনি কখনো কাঁদতে শেখেননি। কিন্তু আদতে তো এটা সম্ভব নয়! কারণ জন্মের সময়ই প্রত্যেক শিশু কাঁদতে শিখে যায়। তারা যখন তখন কাঁদে, কারণে অকারণে কাঁদে । খুব বেশি খুশি হলেও কাঁদে আবার অল্প একটু কষ্ট পেলেও কাঁদে।
একটা পর্যায়ে গিয়ে বাবা-মা,শিক্ষক এমনকি পুরো সমাজ তাদেরকে শিখিয়ে দেয় কাঁদা অনুচিত।যারা কাঁদে তারা দূর্বল। এরপর বয়স বাড়ার সাথে এই কান্নার ব্যাপারটা ম্লান হয়ে আসে । তারা নিজেদের আবেগ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করা শিখে ফেলে। আত্মদমন করা শিখে যায় ।
আপনার এই দমনই হতে পারে কাঁদতে না পারার একটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত বৈশিষ্ট্য ! যেখানে আপনি কান্না আটকে রাখার পিছনেই এতো সময় দিয়েছেন যে, একসময় আপনার এই আটকে রাখার প্রয়াসই অভ্যন্তরীণ কান্নার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে !
আবার এমনও হতে পারে আপনি কান্না করায় আপনাকে হেয় বা লজ্জিত হতে হয়েছে কিংবা কান্না থামার জন্য মারধর করা হয়েছে। আর এজন্যই আপনার ভেতরে যখন অতিরিক্ত আবেগের সঞ্চার হয় ,আপনি সেটা তৎক্ষনাত দমন করে ফেলেন।
কেন এমন হয়? কাঁদতে না পারার পেছনে কারণ কী ?
চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে,
Keratoconjunctivitis sicca :
এই অবস্থাটি, যাকে আরও সাধারণভাবে ড্রাই আই সিনড্রোম বা চোখের শুষ্কতা বলা হয়। এটি মূলত চোখের পানি উৎপাদনে হ্রাস ঘটায় ।
আর এই চোখের শুষ্কতা আরও ঘন ঘন প্রদর্শিত হতে পারে,
- গর্ভাবস্থা বা মেনোপজ-সম্পর্কিত হরমোন পরিবর্তনের সময়।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে অর্থাৎ বৃদ্ধাবস্থায়।
- ডায়াবেটিস থাক।
- থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে।
- রিউম্যাটয়েড বাতে সমস্যা থাক।
- কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে।
- চোখের পাপড়িতে প্রদাহ বা ব্যাধি থাকলে।
Sjogren’s Syndrome:
এটি একটি অটোইমিউন অবস্থা,যা প্রায়ই ভাইরাল অথবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের সাথে বিকাশ ঘটে এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এই সিনড্রোমের কারণে দেহের শ্বেত রক্তকোষগুলো আদ্রতা সৃষ্টি করে এমন গ্রন্থিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।যেমন,টিয়ার নালি এবং মিউকাস ঝিল্লী।
কিংবা হতে পারে পরিবেশগত কোনো কারণে !
যেমন আপনি যদি শুষ্ক আবহাওয়া কিংবা খুব বাতাস হয় এমন জায়গায় বাস করেন তবে অন্যান্যদের তুলনায় চোখে পানি কম আসে । এটি ঘটে কারণ ,বাতাসের শুষ্কতায় চোখের জল দ্রুত বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।
আপনি খেয়াল করছেন যে আপনি দিনকে দিন সামাজিক কাজকর্ম থেকে দূরে সরে আসছেন ! এমনকি শারীরিক সংবেদনের ব্যাপারগুলো আপনি আর অনুভব করতে পারছেন না ! খুশির কিংবা কষ্টের কোনো সংবাদ ই যখন আপনাকে নাড়া দিচ্ছেনা ।
ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারছেন যে আপনার অনুভূতিগুলোও প্রকাশ করতে সমস্যা হচ্ছে ।আপনি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন । তখন ধরে নিতে হবে আপনি অ্যানহেডোনিয়ায় আক্রান্ত। এটি মূলত ডিপ্রেশনের লক্ষণ !
অনেকেই কঠিন পরিস্থিতিতেও জোর করে তার ইমোশন বা অনুভূতিগুলোকে আটকে রাখার চেষ্টা করেন । তারা মনে করেন অনুভূতিকে আটকে রাখাটা আত্ননিয়ন্ত্রণ আর কান্না করা কিংবা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করাটা দূর্বলতা । কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে ,এই যে আত্ননিয়ন্ত্রণের নামে অনুভূতিকে কবর দেয়া কিংবা দূর্বলতার অজুহাতে কান্না গিলে খাওয়াই হতে পারে ধীরে ধীরে Melancholic Depression এর দিকে এগিয়ে যাওয়া !
এগুলো পড়তে ভুলবেন না! Square Foot Gardening: বাগান পদ্ধতিতে নতুন সংযোজন |
কীভাবে এটা মোকাবিলা করা যায় ?
- সময় নিন। নিজেকে সময় দিন।যে অপ্রত্যাশিত ,অপ্রীতিকর ব্যাপারগুলো কিংবা ঘটনাগুলো আপনাকে অনুভূতিহীন করতে বাধ্য করছে সেগুলো নিয়ে বসে থাকবেন না। সেগুলো থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন।
- অনুভূতি প্রকাশ করার অনুশীলন গড়ে তুলন। কথা বলুন ,যাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। যেসব কাজ নিয়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে সেসব কাজ করুন। ইতিবাচক কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
- নিজের অনুভূতিগুলোর সাথে আরোও সহজ হয়ে উঠুন। সব ধরণের অনুভূতিকেই সহজ ভাবে নিন। অনুভূতি থাকা সাধারণ ব্যাপার ,হোক সেটা যতই তীব্র। আপনি যখন অনুভূতি প্রকাশে ভীত হন,বিভ্রান্ত থাকেন তখন দেখা যায় একটা সময় আপনা থেকেই সেসব অপ্রকাশিতই থেকে যায় এবং অভ্যন্তরীণভাবে এই অন্যভূতি প্রকাশ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তাই আপনি রাগ হচ্ছেন,কষ্ট পাচ্ছেন,খারাপ লাগছে –সবই প্রকাশ করুন। কাউকে বলুন কিংবা ডায়েরীতে লিখুন।
- পছন্দের একটা জায়গা খুঁজে বের করুন যেখানে আপনি আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যেখানে আপনি নির্দ্বিধায় হাসতে পারবেন ,নির্ভয়ে কাঁদতে পারবেন ! হতে পারে সেটা বাড়ির ছাদ কিংবা নিজের থাকবার ঘর টা! হতে পারে সেটা বাড়ি থেকে একটু দূরে পুকুর ঘাট অথবা নির্জন কোনো মাঠ বা বাগান !
- আপনি যখন আপনার আবেগ-অনুভুতিগুলোর সাথে নিজ থেকে আরোও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে পড়বেন তখন আপনি অন্য কারোও সাথে আপনার অনুভূতি ভাগ করে নেয়ার চেষ্টাটুকু করতে পারেন ।তাদের সাথে মন উজাড় করে কথা বলুন ,যাদেরকে আপনি বিশ্বাস করেন। যেমন,আপনার প্রিয় বন্ধু কিংবা আপনার যেকোনো প্রিয় মানুষ ! এতে করে আপনি অনুভূতি প্রকাশে সহজ হয়ে উঠবেন । যখন আপনি সহজেই আবেগের কথাগুলো বলে ফেলতে পারবেন তখন অন্যান্য অনুভূতিগুলোও প্রকাশ করা আপনার জন্য সহজ হবে । এমনকি কাঁদতে পারাটাও !
- গভীরভাবে সংবেদনশীল মুভিগুলো দেখা কিংবা গান শুনতে পারেন । এতে করে আবেগ, সহানুভূতি বাড়তে পারে ।
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা অন্যদের তুলনায় খুব সহজেই কেঁদে ফেলতে পারেন এবং এটাই স্বাভাবিক। আবার কিছু মানুষ সহজে কাঁদেন না ।নিজের ইমোশন বা অনুভূতিগুলো চেপে রাখতেই অভ্যস্ত এবং এতো অস্বাভাবিকতার কিছু নেই ! একেকজন মানুষ একেকরকম এবং মানুষভেদে তাদের আবেগ ,অনুভূতিগুলোও নির্ভর করে তাদের উপর।
তাই আপনি যদি কাঁদতে না পারেন তবে হাসতে শিখুন। হয়তো হাসতে হাসতেই খুশিতে চোখে পানি চলে আসবে কোনো একদিন! তবুও অনুভূতিগুলো চেপে রাখবেন না।