গাঁজা, কুড়ি, ঔষধ- একে আপনি যা খুশি বলুন না কেন এটা মার্কিন রাজনীতিতে বিভাজন মূলক প্রশ্ন তৈরি করেছে। যার পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক কথাই এসেছে। এই একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রয়েছে বহু তর্ক-বিতর্ক।
বিশ্বের অনেক দেশে গাঁজা কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আবার অনেক দেশ এটিকে বৈধতা প্রদান করেছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো অতীতে কিন্তু গাঁজার ব্যবহার খুবই প্রচলিত ছিলো।
গাঁজাকে ৮ হাজার বছর পূর্বে ফসল হিসেবে চাষ করা হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪০ এর সময়ে মানুষদের মধ্যে ক্যানাবিস বা গাঁজার বাষ্পে গোসল করার প্রথা ছিল। এমনকি আমেরিকায় ক্যানাবিস বা গাঁজা ওটিসি (OTC) ড্রাগ হিসেবে প্রচলিত ছিল। এর মানে আমরা এখন নাপা অথবা সেকলো দোকান থেকে যেমন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনে খাচ্ছি তেমনি তখন ক্যানাবিস ওটিসি ড্রাগ হিসেবে সহজে পাওয়া যেতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে ক্যানাবিস কে ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এখন আসা যাক ক্যানাবিস এর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার প্রসঙ্গে-
ক্যানাবিস নামের গাছ থেকে মারিজুয়ানা বা গাঁজা উৎপাদিত হয়। আগেই বলেছি এটিকে কিন্তু এখন সব জায়গায় নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি রাজ্য এবং কলম্বিয়ায় মেডিক্যালে ব্যবহারের জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটিকে বৈধতা প্রদান করেছেন এফডিএ( FDA)। কেবলমাত্র দুইটি মানবসৃষ্ট ক্যানাবিনয়েড ওষুধ, (ড্রোনাবিনোল, নাবিলোন) এর অনুমোদন দিয়েছে তারা। দুষ্প্রাপ্য ধরনের মৃগী রোগ লেনাক্স-গ্যাস্টাট সিন্ড্রোম এবং ড্রাভেট সিন্ড্রোমের দুটি মারাত্মক খিচুনীর চিকিৎসার জন্য ২০১৮ সালে ক্যানাবিডিওল এপিডিওল্যাস অনুমোদন করেন।
কথা হচ্ছে কেন এটিকে নিয়ে আরো গবেষণা করা হয়নি?
পেনসিলভেনিয়া প্যারেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের পদার্থের অপব্যবহার বিশেষজ্ঞ মার্সেল বন মিলার বলেন, “এর একটি কারণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (ডিইএ) মারিজুয়ানাকে; হিরোইন, এলএসডি এবং এক্সট্যাসি এর মত সিডিউল-১ ড্রাগ হিসেবে বিবেচনা করে। (সিডিউল ড্রাগ বা ক্লাস-১ ড্রাগ হলো এমন কিছু ড্রাগ যার অপব্যবহারের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এর কোন চিকিৎসায় ব্যবহার নেই এবং এর বিরুদ্ধে গুরুতর সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এমন কিছু ড্রাগ হলো, হেরোইন, এলএসডি কোকেন ইত্যাদি। তবে মজার ব্যাপার এটাই যে, সিডিউল-১ ড্রাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও মারিজুয়ানাকে কিছু জায়গায় মেডিক্যাল ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়)। এই কারণে গবেষকদের এটির উপর গবেষণা করতে বিশেষ লাইসেন্স প্রয়োজন”।
মেডিক্যাল মারিজুয়ানায় মূলত চিকিৎসার জন্য মারিজুয়ানা বা গাঁজার উদ্ভিদ বা এর রাসায়নিক ব্যবহার করে। এটি মূলত বিনোদনমূলক ড্রাগের মত একটি পণ্য কিন্তু এটিকে এখন চিকিৎসা খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাজার গাছটিতে ক্যানাবিনয়েডস নামে ১০০ টির ও বেশি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। প্রত্যেক উপাদানের রয়েছে আলাদা প্রভাব যা ডেল্টা-৯ টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনোল (THC) এবং ক্যানবিডিওল (CBD) ওষুধের মূল রাসায়নিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে টিএইচসি মানুষকে মানসিকভাবে উত্তেজিত করে ফেলে যখন তারা গাঁজা খায় বা ধুমপানের মাধ্যমে গ্রহণ করে।
মেডিকেল মারিজুয়ানা বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
১.অ্যালজাইমার
২.ক্ষুধামন্দা
৩.ক্যান্সার
৪.ক্রন’স ডিজিজ
৫.এনোরেক্সিয়া
৬.মৃগী রোগ
৭.ব্যাথা
৮.বমি ভাব
তবে এই সবগুলো রোগেই গাঁজা ব্যবহার সফল কিনা তা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
তবে গবেষকদের মতে এটি-
*দুশ্চিন্তা কমায়
*প্রদাহ জনিত সমস্যা ও ব্যথা কমায়
*ক্যান্সার কোষগুলো মেরে ফেলে
*ক্যান্সার ও এইডস রোগীদের ক্ষুধামন্দা দূর করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কিন্তু এর কিছু সাইড ইফেক্টস ও রয়েছেঃ
*চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করা
*ডিপ্রেশন
*মাথা ঘুরানো
*হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
*হ্যালুসিনেশন
*নিম্ন রক্তচাপ
তবে কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি তাদের মানসিক বিকাশে এবং আইকিউ তে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
এগুলো পড়তে ভুলবেন না! কোন কারাগার আটকে রাখতে পারেনি যাকে – ইয়োশিয়ে শিরাটোরী |
মেডিক্যাল গাঁজা বা ক্যানাবিস রোগীরা যেভাবে গ্রহণ করে-
*ধুমপানের মাধ্যমে
*ভ্যাপোরাইজার ডিভাইসের মাধ্যমে ইনহেল বা শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করে
*খাবারের মাধ্যমে। যেমনঃ ব্রাউনি, ললিপপ
*ত্বকে লোশন তেল বা ক্রিম ব্যবহার করে
*জিব্বার নিচে কয়েক ফোঁটা তরল গ্রহণ করে
তবে গাঁজা কে নিষিদ্ধ করার পেছনে কারণ রয়েছে
যেহেতু গাজাতে তামাকের উপস্থিতি দেখা গেছে এবং এমন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা ধুমপানের মাধ্যমে গ্রহণ করলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপর গাজার প্রভাব স্পষ্ট নয়। তবে এর কিছু প্রমাণ রয়েছে যে, এটি ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে কিন্তু গাঁজা মানুষকে আসক্ত করে ফেলে। এর ফলে এটিকে নেশাদ্রব্য হিসেবে গ্রহণ করার কারণেই এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।