আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে বা অন্য যেকোন দেশে যখনই কোন আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে আমরা সাথে সাথেই সেই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত বা সরাসরি সম্পর্কিত নয় তথ্যগুলো ফেসবুক, টুইটারে পাওয়া শুরু করি আর শেয়ার করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি। শেয়ার করা তথ্যের সংবেদনশীলতা বিচার করে এমন মানুষ হয়ত খুব কমই আছে।
হ্যা ইতিবাচক কোন ঘটনা হলে সেটি দেখে যেকোন মানুষই প্রশান্তি পাবে । কিন্তু নেতিবাচক কোন কিছু শেয়ার করা শুধু যে দেখছে সে না নিজেকেও যে মানসিকভাবে বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে তা কি আমরা ভেবে দেখি ?
বিশ্ববিখ্যাত স্প্রিঞ্জার জার্নালে ২০০৭ সালে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিলঃ The Negative psychological effects of watching the news in the television: Relaxation or another intervention maybe needed to buffer them. গবেষণাটি ২ ভাগে বিভক্ত মোট ১৭৯ জন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর উপর পরিচালনা করা হয়। সেখানে তাদেরকে প্রথম ১৫ মিনিট বিভিন্ন ধরনের সংবাদ দেখতে দেয়া হয়। এরপর তাদেরকে প্রশান্তিদায়ক কোনকিছু করতে দেয়া হয় আরও ১৫ মিনিট ।
আর এসবের মধ্যেই সংবাদ দেখার পূর্বে এবং পরে ও প্রশান্তিদায়ক কাজের পূর্বে পরে State anxiety, Total Mood Disturbance(TMD), Positive Effect, Negative Effect সূচকগুলো পরিমাপ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় সংবাদ দেখার পর State anxiety, TMD, Negative Effect এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং Positive Effect এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। পরবর্তীতে প্রশান্তিদায়ক কাজ করলেও এই সূচকগুলোর উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। তাই এখান থেকে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে যে, টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ অনবরত নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরী করে যা কিনা প্রশান্তিদায়ক কাজ বা মনোযোগ বিকেন্দ্রীকরণ করে এমন কিছু দ্বারা দূর করা যায় না । যদিও যায় তবে এমন কিছু লাগবে যা সেটির প্রভাবকে সরাসরি প্রতিস্থাপন করবে এবং অনবরত প্রশান্তি দিবে।
এই ব্লগগুলোও পড়তে পারেন- |
২০১১ সালে দ্য ব্রিটিশ জার্নাল অফ সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি স্টাডি রিপোর্টে বলা হয় নেতিবাচক সংবাদের রেশ মানুষের মস্তিষ্কে সংবাদটি পাওয়ার ১৪ মিনিট পর পর্যন্ত থাকে। সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা এ ধরনের সংবাদ দেখা বিষয়টিকে আরো খারাপ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মানসিক রোগের চিকিৎসক ডঃ ক্যারোল লিবারম্যান মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সংবাদমাধ্যমের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন । ৯/১১ তে হওয়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার বিষয়টি তুলে এনে সেটির উপর করা একটি স্টাডি রিপোর্ট থেকে উনি বলেন সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে যারা ঘরে বসে ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ বারবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখে তাদের মধ্যে পোস্ট ট্রমাটিক ডিসর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি ছিল।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল বিভিন্ন তথ্যের প্রভাব সম্পর্কেও উনি বলেন, মানুষ দুশ্চিন্তা যত বেশি করে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তত দুর্বল হয়ে যায়। আর এর ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা করোনা ভাইরাসের সংবাদ শোনা মানুষকে সত্যিকার অর্থে তাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকির দিকে ঠেলে দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার মনস্তত্ত্ববিদ ও লেখক কারলা ম্যারি ম্যানলি বলেন-
An experience witnessed visually is always more impactful than something only heard or read about
এখন তাহলে একবার ভেবে দেখুন তথ্যের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে আপনি নিজেই নিজের উপর নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরী করছেন নাতো ?